সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেলের লাইসেন্স করতে গিয়ে হয়রানি!
সাতক্ষীরায় মোটরসাইকেলের লাইসেন্সের জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিতে গিয়ে লোকজন হয়রানির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আগের দিন রাত ২টা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে পরের দিন বিকেলেও টাকা জমা দিতে পারছেন না তাঁরা। এভাবে জেলার বিভিন্ন গ্রাম থেকে পরপর দুই তিনদিন এসেও টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হচ্ছেন।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) সূত্র জানায়, ভারত সীমান্তবর্তী জেলা হওয়ায় সাতক্ষীরায় লক্ষাধিক মোটরসাইকেল চলাচল করে। এর মধ্যে জেলা বিআরটিএ থেকে প্রায় ৩০ হাজার মোটরসাইকেল নিবন্ধন করেছে। এর বাইরে অন্য জেলার বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেওয়া মোটরসাইকেলও চলাচল করে। কিন্তু অবৈধ মোটরসাইকেলের সংখ্যা প্রায় ৭০ হাজার। এ ছাড়া প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০টি মোটরসাইকেল জেলার বিভিন্ন বিক্রয়কেন্দ্র থেকে বিক্রি হয়। সব মিলিয়ে জেলায় লক্ষাধিক মোটরসাইকেল চলাচল করে। এসব মোটরসাইকেল লাইসেন্সের টাকা জমা দিতে হয় সরকার নির্ধারিত বেসরকারি ব্র্যাক ব্যাংকে।
কিন্তু সাতক্ষীরায় ব্র্যাক ব্যাংকের শুধু একটি শাখা রয়েছে শহরের পলাশপোলে। এ কারণে সেখানে লাইসেন্সের টাকা জমা দিতে হুমড়ি খেয়ে পড়েছে মোটরসাইকেলচালকরা।
গতকাল মঙ্গলবার পলাশপোলে ব্র্যাক ব্যাংকের শাখার সামনে দেখা যায় দীর্ঘ সারি। কথা হয় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে।
ব্যাংকের সামনে দাঁড়ানো ব্যক্তিরা জানায়, তারা এত দিন মোটরসাইকেলের পেছনে অন টেস্ট বা বিভিন্ন লেখা লিখে চালিয়ে আসছিল। কিন্তু সম্প্রতি সরকার লাইসেন্সবিহীন মোটরসাইকেল ধরপাকড়ে অভিযান জোরদার করলে তাদের টনক নড়ে। তাই সবাই একসঙ্গে লাইসেন্সের টাকা জমা দিতে ভিড় করছে।
টাকা জমা দিতে আসা ব্যক্তিরা অভিযোগ করে, তারা আগের রাত থেকে সারিতে দাঁড়িয়েছে। দুপুরেও টাকা জমা দিতে পারেনি। একটি দালাল চক্রকে অতিরিক্ত টাকা দিলে তারা ১০ জন করে ভেতরে ঢুকিয়ে লাইসেন্সের টাকা জমা দেওয়ার ব্যবস্থা করছে। এমনকি মুঠোফোনের মাধ্যমে ব্যাংকের নির্দিষ্ট কারো নম্বরে টাকা পৌঁছানো গেলে সে-ও লাইসেন্সের টাকা দেওয়ার সুযোগ পাচ্ছে। যারা দালালদের অতিরিক্ত টাকা দিতে অসম্মতি জানাচ্ছে তাদের অনেক পরে ব্যাংকে ঢুকতে দিচ্ছে।
আশাশুনি উপজেলার শহর আলী বলেন, ‘এসব হয়রানির কারণে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও লাইসেন্সের টাকা জমা দেওয়া যাচ্ছে না।’
শ্যামনগর উপজেলার জোহর আলী জানান, সময় মতো টাকা জমা দিয়ে গাড়ির লাইসেন্সের কাগজপত্র দেখাতে না পারলে সড়কে মোটরসাইকেল চালাতে গিয়ে তাঁরা পুলিশের বাধার মুখে পড়ছেন।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সাতক্ষীরা ব্র্যাক ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপক জহির আহমেদ দাবি করেন, ব্যাংকের ভেতরে কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। ভিড় থাকায় ১০ জন করে ভেতরে আসছে। তাদের টাকা গ্রহণ করে অন্য ১০ জনকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। দালাল চক্রের মাধ্যমে নগদে অথবা মুঠোফোনের মাধ্যমে টাকা নেওয়ার কোনো অভিযোগ তিনি এই প্রথম শুনলেন বলে জানান।
এদিকে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছে, নির্দিষ্ট একটি ব্যাংককে এই দায়িত্ব না দিয়ে তা অন্যান্য ব্যাংকে বাটোয়ারা করে দিলে সহজেই টাকা জমা দেওয়া যেত। তারা অনিয়মের প্রতিবাদ জানিয়েও সোচ্চার হতে পারছে না। নইলে টাকা জমা দিতে আরো হয়রানির শিকার হতে পারে।