পড়াশোনার নিরাপদ পরিবেশ চায় সেই তাঞ্জিলা
বরগুনায় বাল্যবিবাহ রুখে দেওয়া স্কুলছাত্রী তাঞ্জিলার করা মামলায় তার বাবা-মায়ের জামিন আবেদন মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে তার বোন ও ভগ্নিপতিসহ অন্যদের জামিন না মঞ্জুর করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার সকালে বরগুনার জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম নোমান মাইনুদ্দিনের আদালতে উপস্থিত হলে তাঞ্জিলার বাবা জাহাঙ্গীর খান ও মা হেলেনা বেগমের জামিন মঞ্জুর করেন আদালত। তবে মামলার অপর আসামি তাঞ্জিলার বোন জেসমিন ও ভগ্নিপতি মিলনের জামিন আবেদন না মঞ্জুর করে তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। এ মামলার অপর আসামি গ্রাম্য ওঝা ছালমা বেগম বর্তমানে পলাতক রয়েছেন।
অন্যদিকে সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক পরিবেশে নিজ বিদ্যালয়ে ফিরে যেতে বাবা-মাসহ সবার সহযোগিতা চেয়েছে বরগুনার প্রতিবাদী কিশোরী তাঞ্জিলা। আজ মঙ্গলবার দুপুরে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে স্থানীয় নারী নেতাদের কাছে এ আবেদন জানায় তাঞ্জিলা।
এ সময় তাঞ্জিলা আরো জানায়, আর কোনো উপায় না থাকায় বাল্যবিবাহের বিপক্ষে বাবা-মায়ের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে সে বাধ্য হয়েছিল। আর এ কারণে এখন সামাজিকভাবে নানা অপবাদ সইতে হচ্ছে তাকে। এমন সংকটময় পরিস্থিতি উতরে স্বাভাবিক পরিবেশে ফিরতে চায় সে।
তাঞ্জিলার স্কুল গৌরীচন্না নওয়াব সলিমুল্লাহ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নাজমুল ফারুকের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানান, তাঞ্জিলা তার স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে নিয়মিত স্কুলে আসত এবং পড়াশোনা করত। তাঞ্জিলা বিদ্যালয়ে ফিরে এলে তিনি ও তাঁর বিদ্যালয়ের সবাই ওর প্রতি আরো সংবেদনশীল পরিবেশ তৈরি করবেন বলে আশ্বাস দেন।
বর্তমানে তাঞ্জিলা বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। শারীরিকভাবে সে যতটা না অসুস্থ তার থেকে বেশি বিপর্যস্ত মানসিকভাবে। এই মুহূর্তে তার প্রতি স্বজনদের অনেক বেশি সংবেদনশীল হওয়া প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. কামরুল ইসলাম।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তাঞ্জিলাকে আশ্রয় দেওয়ার জের ধরে তার চাচাদের আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইবুনালে গতকাল সোমবার একটি অপহরণ মামলা দায়ের করেন তাঞ্জিলার মা হেলেনা বেগম। বাড়ি থেকে প্রাইভেট পড়তে যাওয়ার সময় তার চাচা শ্বশুর এনায়েত খান (৫০), ভাসুর আলমগীর খান (৪৫), দেবর মো. পান্না খান (৪০) ও মো. জব্বার খান (৫৫) তার মেয়ে তাঞ্জিলাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন তিনি।
বরগুনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রিয়াজ হোসেন জানান, তাঞ্জিলার নিরাপত্তার বিষয়টি ভাবনায় রেখে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পুলিশের নজরদারি রয়েছে।
জোর করে বাল্যবিবাহ দেওয়ার চেষ্টার অভিযোগ এনে নিজের বাবা-মা, বোন-ভগ্নিপতি ও গ্রামের এক ওঝার নামে বরগুনা থানায় গত রোববার রাতে মামলা করে বরগুনার ফুলঝুড়ি ইউনিয়নের ছোট গৌরীচন্না গ্রামের কুয়েত প্রবাসী জাহাঙ্গীর খানের ছোট মেয়ে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাঞ্জিলা। মামলার পরের দিন সকালে তাঞ্জিলার বোন জেসমিন ও মিলনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।