খাগড়াছড়িতে বাঙালি বসতিতে হামলা, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ
খাগড়াছড়ির মানিকছড়ি ও রামগড় উপজেলার সীমান্তবর্তী হাতিমুড়ার অদূরে ভিজা বাউন্তি এলাকায় তিনটি বাঙালি বসতবাড়িতে হামলার ঘটনা ঘটেছে। সোমবার রাতে এ হামলার ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছে পুলিশ। এ ঘটনার প্রতিবাদে আজ মঙ্গলবার সকালে তিন ঘণ্টা খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম সড়ক অবরোধ করে রাখে বিক্ষুব্ধরা।
বিকেলে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, জেলা প্রশাসক, সেনাবাহিনীর গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার, পুলিশ সুপারসহ প্রশাসনিক কর্মকর্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। এ সময় তাঁরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। এ দিকে পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করেছে। আটকের ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে পাহাড়ি সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট-ইউপিডিএফ।
গুইমারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোস্তাফিজুর রহমান এনটিভি অনলাইনকে জানান, সোমবার রাত ১১টার দিকে একদল দুর্বৃত্ত ভিজা বাউন্তি এলাকায় হামলা চালায়। তাঁরা তিনটি বাঙালি বসতবাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাট করে সব কিছু নিয়ে যায়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্ত মো. এমাদুল শরীফ, আবদুর রাজ্জাক ও মো. বাবুল মিয়া দাবি করেন, স্থানীয় শতাধিক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর সদস্য দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্র নিয়ে ঘরের খুঁটি ও বেড়া কেটে ঘর-দরজা ভেঙে এ হামলা ও লুটপাট চালায়।
এ সময় দুর্বৃত্তরা ঘরে থাকা দুটি গরু, একটি ছাগল, পাঁচটি মোরগ, দুই বস্তা টিএসপি সার ও কাপড়-চোপসহ লুটে নেয় এবং বই-পুস্তক ছিঁড়ে ফেলে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা। তারা আরও জানান,
খবর পেয়ে আশপাশের বাঙালি ও নিরাপত্তা বাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছালে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকালে কয়েক শ বিক্ষুব্ধ বাঙালি হাতিমুড়া এলাকায় সড়ক অবরোধ করে। তারা খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম আঞ্চলিক সড়ক সকাল ৭টা থেকে সড়ক অবরোধ করে রাখে। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সকাল ১০টার পর অবরোধ প্রত্যাহার করে নেয় বিক্ষুব্ধরা।
বিকেলে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন খাগড়াছড়ি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কংজরী চৌধুরী, জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান, পুলিশ সুপার মো. মজিদ আলী, গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তোফায়েল আহম্মেদসহ উর্ধ্বতন সামরিক-বেসামরিক কর্মকর্তারা। তারা দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের শান্ত থাকার অনুরোধ জানান। এ সময় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে কম্বলসহ ত্রাণ বিতরণ করেন।
এ সময় জেলা প্রশাসক মো. ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, নির্জন অরণ্যে একাকি বসবাস না করে গুচ্ছগ্রামে কিংবা নিরাপত্তা বেষ্টনির মধ্যে আপনারা বসবাস করুন। এ ঘটনায় জড়িতদের খুঁজে আইনের আওতায় আনা হবে।
গুইমারা রিজিয়ন কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তোফায়েল আহম্মদ বলেন, সরকারের কর্মকাণ্ডকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে একটি গোষ্ঠী সম্প্রতি মানিকছড়ি ও রামগড়সহ এ অঞ্চলে অশান্তি সৃষ্ঠির পাঁয়তারা করছে। তাই কোনো গুজবে কান না দিয়ে ধৈর্য্যের সঙ্গে সবকিছু মোকাবিলা করার জন্য পাহাড়ি-বাঙালি সবার প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।