অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশায় পঞ্চগড়ের জনজীবন বিপর্যস্ত
গত তিনদিন ধরে শৈত্যপ্রবাহ আর ঘনকুয়াশায় উত্তরপ্রান্তের শীতপ্রবণ জেলা পঞ্চগড়ের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সাধারণ নিম্নআয়ের মানুষ বিশেষ করে দিনমজুর, রিকশা-ভ্যান চালকরা দুর্বিষহ জীবনযাপন করছে। একটানা শৈত্যপ্রবাহ ও ঘনকুয়াশায় লোকজন ঘর থেকে বের হতে পারছে না। কাজকর্ম না থাকায় পরিবার পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছে।
জেলার অসহায় শীতার্তরা শীতবস্ত্রের অভাবে কষ্ট পাচ্ছে। শৈত্যপ্রবাহ শুরু হওয়ায় কাঁপছে পশুপাখি, জীবজন্তু ও মানুষ। তাপমাত্রা কমে আসছে দ্রুত। পুরো আকাশ মেঘাচ্ছন্ন হয়ে আছে। সঙ্গে বইছে হিমেল হাওয়া। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সূর্যের মুখ দেখা যাচ্ছে না। দুপুরের পর সূর্য দেখা গেলেও তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। কোনো কোনো দিন সূর্যের মুখ দেখা যায় না। আবার কোনো কোনো দিন সূর্যের মুখ দেখা গেলেও তাপমাত্রা থাকে অনেক কম। শীতের তীব্রতায় দিনের বেলাতেও শহরে জনসমাগম যেমন কমে গেছে তেমনি সন্ধ্যার পর পরই হাট-বাজার একবারে ফাঁকা হয়ে যাচ্ছে।
মাত্রাতিরিক্ত শীতের কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন না অনেকেই। গৃহপালিত পশুদেরও বের করা হচ্ছে না। ঘরের ভেতরেই তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। মানুষের মতো অনেক পশুকেও গরম কাপড় ও চট (পাটের তৈরি) দিয়ে ঢেকে বের করা হচ্ছে। সড়ক-মহাসড়ক ও হাটবাজারগুলোতে লোকজন চলাচল কমে গেছে। শীতের তীব্রতা বেশি থাকায় শহরের দোকানপাটও খুলছে না। দিনের বেলা যানবাহনগুলো হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে। গ্রাম-শহর সবর্ত্রই শীত মোকাবিলায় মানুষ ব্যস্ত সময় পার করছে। অধিকাংশ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে, ছেঁড়া কাঁথা কম্বল নিয়ে শীত মোকাবিলার চেষ্টা করছে। সামর্থ্যবানরা শীত মোকাবিলায় গরম কাপড় আর লেপ-তোষক কেনাকাটা করছে। কিন্তু অধিকাংশ মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে, ছেঁড়া কাঁথা-কম্বল নিয়ে শীত মোকাবিলার চেষ্টা করছে। দিনমজুর, শ্রমিক, রিকশাচালক শীতবস্ত্রের অভাবে কাজে যেতে পারছে না। শিশু ও বৃদ্ধদের অবস্থা শোচনীয় পর্যায়ে। গরীব অসহায় মানুষজন শীতবস্ত্রের জন্য প্রতিদিন জনপ্রতিনিধি, অফিসপাড়া ও এনজিওগুলোতে ঘুরছে। সরকারি দপ্তরগুলোতে প্রতিদিন অসহায় এ মানুষদের সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তা ও জনপ্রতিনিধিদের।
শৈত্যপ্রবাহ চলতে থাকলে আলু ও গমসহ রবিশস্য মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। এরই মধ্যে বোরো ধানের বীজতলা হলুদবর্ণ হতে শুরু করেছে। অনেকেই বীজতলা পলিথিনে ঢেকে রেখেছে।
পঞ্চগড় পৌরসভার মেয়র মো. তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমার পৌর এলাকায় ১৭টি বস্তি। বস্তির অসহায় দরিদ্র লোকেরা শীতবস্ত্রের জন্য পৌরসভায় ভিড় করছে। যে সামান্য বরাদ্দ পেয়েছি তা অনেক আগেই বিতরণ করা হয়েছে। পৌর এলাকাতেই প্রায় ৩০ হাজার শীতার্ত মানুষ বসবাস করে।’
এদিকে শীতের তীব্রতায় জেলার বিভিন্ন এলাকায় শিশু ও বৃদ্ধদের মধ্যে নানান রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন ডা. মো. সাইফুল ইসলাম জানান, পঞ্চগড় শীতপ্রবণ এলাকা। শীতকালে এমনিতেই শিশু ও বৃদ্ধরা শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হন। বিশেষ করে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও হাঁপানি রোগ বেশি দেখা যায়। বর্তমানে হাসপাতালের ১০০ বেডেই রোগী ভর্তি রয়েছে। পর্যাপ্ত ওষুধ রয়েছে। সবকিছু আমাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিন ধরে পঞ্চগড়ে ৭ থেকে ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা উঠানামা করছে।
তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক ফজলে রহমান জানান, শনিবার পঞ্চগড়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে।
আগামীকাল রোববার থেকে প্রথম অফিস শুরু হবে জানিয়ে পঞ্চগড়ের নবাগত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জহিরুল ইসলাম বলেন, পঞ্চগড়ে শীতের পরিমাণ অনেক বেশি। শৈত্যপ্রবাহও চলছে। শীত মোকাবিলায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শীতপ্রবণ জেলার শীর্তাত মানুষের শীতকষ্ট লাঘবে সরকারের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছে পঞ্চগড়বাসী।