কপোতাক্ষ খননে আবারও দুর্নীতি হচ্ছে!
কপোতাক্ষ নদ খননে আবারও দুর্নীতি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন সাতক্ষীরা-১ আসনে (তালা-কলারোয়া) ওয়ার্কাস পার্টির সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ। তিনি কপোতাক্ষ নদ খননে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলার হুমকি দিয়েছেন।
আজ রোববার সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে ‘কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলন সমন্বয় কমিটি’র সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য এ হুমকি দেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কপোতাক্ষ অববাহিকার ৫৪৭টি গ্রামের মধ্যে ৪৭০টি গ্রাম প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার শিকার হয়। ২০০৩ সাল থেকে সরকার যতবার কপোতাক্ষ খননে বরাদ্দ দিয়েছে ততবারই দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। আর এ কারণেই কপোতাক্ষ তীরের জলাবদ্ধতা দিনে দিনে স্থায়ী হয়ে যাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহ বলেন, ‘এ ব্যাপারে সরকার দায় এড়াতে পারে না। খননের নামে অর্থের অপচয় সহ্য করা হবে না।’ কপোতাক্ষ নদ খননে দুর্নীতির বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলারও হুমকি দেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়েন কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক অনিল বিশ্বাস। তিনি বলেন, ২০১১ সাল থেকে ২০১৫ পর্যন্ত চার বছর মেয়াদি খনন প্রকল্পে সরকার ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। বরাদ্দের তিন বছর পর এ কাজ শুরু হলেও তালার পাখিমারায় জোয়ারাধার ব্যবস্থাপনা (টিআরএম) প্রকল্পের ৬০ ভাগ কাজ না করেই বিল তুলে নেওয়া হয়েছে। এর সঙ্গে জড়িত আছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধিরা ছাড়াও কিছু সংখ্যক সুবিধাভোগী ঘের মালিক। এসব মানুষ নিরীহ নাগরিকদের বাদী সাজিয়ে উচ্চ আদালতে রিট করে কপোতাক্ষ প্রকল্প বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে। এ ছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির দুর্নীতিও যুক্ত হয়েছে এর সঙ্গে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, কপোতাক্ষকে বাঁচানোর কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে আমলাতান্ত্রিক দীর্ঘসূত্রতা, দুর্নীতি ও অনিয়ম এবং বারবার নির্বাচনী ইস্যু। জোয়ারাধার প্রকল্পের দুই পাশে উপরের অংশের কপোতাক্ষ নদের (ঝিনাইদহের তাহিরপুর থেকে) ৯০ কিলোমিটার ও নিচের অংশের কপোতাক্ষ নদের ৯০ কিলোমিটার (সুন্দরবন পর্যন্ত) এক সঙ্গে খনন না করা হলে কপোতাক্ষ নদের অভিশাপ থেকে ৫০ লাখ মানুষ রক্ষা পাবে না।
কপোতাক্ষ অববাহিকার পাঁচ জেলার ১২টি উপজেলার ৫৩টি ইউনিয়নের ৫৪৭টি গ্রামের মধ্যে ৪৭০টি প্রতি বছরই জলাবদ্ধতার শিকার হয়ে আসছে উল্লেখ করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এবার আগাম বৃষ্টি নামায় জনভোগান্তি আরো বেশিদিন স্থায়ী হবে। এখন বিস্তীর্ণ এলাকা পানিতে তলিয়ে আছে। পানি অপসারণের সুযোগ না থাকায় এসব গ্রামের বাসিন্দাদের অপেক্ষা করতে হবে প্রাকৃতিকভাবে শুকানো পর্যন্ত ।
অবিলম্বে খনন শুরুর আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিপন্ন মানুষের খাদ্য ও আশ্রয়, মাথাভাঙ্গা ও পদ্মার সঙ্গে কপোতাক্ষ ভৈরব সংস্কার প্রকল্প শুরু, জোয়ারাধার প্রকল্পের ত্রুটি সংশোধন এবং দুর্নীতিবাজদের বিচারের আওতায় আনাসহ চারদফা দাবি তুলে ধরা হয়। সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি আদায়ের লক্ষ্যে কয়েকটি সমাবেশ ও যশোরে জেলা প্রশাসক কার্যালয় ঘেরাও ও আগামী ২ সেপ্টেম্বর ঢাকায় মানববন্ধনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় ।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন কপোতাক্ষ বাঁচাও আন্দোলনের প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম, অধ্যাপক মঈনুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডার আলাউদ্দিন জোয়ারদার, ইনসাফ আলী খাঁ প্রমুখ।