রবিউল হত্যা : অপর আসামিদের আড়ালের চেষ্টা ওসির!
বরগুনায় শিশু রবিউল আউয়াল হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপর আসামিদের রক্ষা করতে সুকৌশলে এক তরফা জবানবন্দী দিয়েছে প্রধান আসামি মিরাজ। এই অপচেষ্টায় তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আখতারের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন রবিউলের বাবা-মা।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বরগুনা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা ও মা মোরশেদা বেগম।
সংবাদ সম্মেলনে দুলাল মৃধা অভিযোগ করে বলেন, পরিকল্পিত এ হত্যার সঙ্গে মিরাজের পরিবারের সবাই জড়িত ছিল। তিনি বলেন, রবিউলকে মেরে অচেতন করে মিরাজ তার বাড়িতে নিয়ে যায়। সেখানেও তাকে নির্যাতন করা হয়। সেখানে রবিউলের মৃত্যু নিশ্চিত করে তারপর তার মৃতদেহ খালে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা। ঘটনার পরের দিন এসব কথা উল্লেখ করে মিরাজ তালতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাবুল আখতারের কাছে স্বীকারোক্তিও দিয়েছিল। এসব বিষয় আমলে নিয়ে তদন্ত করতে ওসি বাবুল আখতারকে বারবার অনুরোধ করলেও তিনি কর্ণপাত করেননি। মামলার অভিযোগে এমনকি প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনেও (এফআইআর) সেসব কথার কিছুই উল্লেখ করেননি ওসি বাবুল আখতার। উপরন্তু শিশু রবিউল মানসিকভাবে অসুস্থ ছিল এমন কথাও মামলার অভিযোগে লেখেন তিনি।
এভাবেই রবিউল হত্যাকাণ্ডের অপর আসামিদের আড়াল করার অসৎ উদ্দেশ্যে ওসি বাবুল আখতার অসহযোগিতা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ করেন দুলাল মৃধা। দুলাল মৃধা জানান, তিনি লেখাপড়া জানেন না। তাঁর সরল বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে ওসি বাবুল আখতার এসব ষড়যন্ত্র করেছেন এবং করছেন।
দুলাল মৃধা জানান, পরিকল্পিত এ হত্যাকাণ্ডের অপর আসামিদের আড়ালে রাখতে কৌশলে আদালতে একতরফা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন প্রধান আসামি মিরাজ।
এ বিষয়ে তালতলী থানার ওসি বাবুল আখতারের সঙ্গে কথা বললে তিনি দুলাল মৃধার সব অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, তিনি সঠিকভাবেই তদন্ত করেছেন এবং এ বিষয়ে কোনো অসহযোগিতা করেননি।
গত ৩ আগস্ট রাতে পেতে রাখা জালের মাছ চুরির অভিযোগে বরগুনার তালতলী উপজেলার সোনাকাটা ইউনিয়নের ছোট আমখোলা গ্রামের ১০ বছরের শিশু রবিউলকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করে তার লাশ পাশের খালে ফেলে রাখেন মিরাজ। এ ঘটনায় ৫ আগস্ট শিশু রবিউলের বাবা দুলাল মৃধা বাদী হয়ে তালতলী থানায় মিরাজকে প্রধান আসামি করে হত্যা মামলা করেন। ওই দিনই মিরাজকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এরপর ৬ আগস্ট বৃহস্পতিবার বরগুনার আমতলী উপজেলার বিচারিক হাকিম বৈজয়ন্ত বিশ্বাসের আদালতে হাজির করা হলে ১৬৪ ধারায় রবিউল হত্যার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেন মিরাজ।
শিশু রবিউল আউয়াল স্থানীয় ফরাজী বাড়ি দাখিল মাদ্রাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ত। রবিউলের বড় বোন খাদিজা দশম শ্রেণির ছাত্রী। ছোট বোন জান্নাতি সবে হাঁটতে শিখেছে। তালতলীর ফকিরহাট বাজারে বাবা দুলাল মৃধার খুচরা যন্ত্রাংশের একটি ছোট্ট দোকানের আয় দিয়েই চলে রবিউলদের সংসার।