মন্টি চাকমার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার হুমকি
অপহরণের ৩২ দিন পর মুক্তি পাওয়া ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের নেত্রী মন্টি চাকমার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মন্টি চাকমা ও তাঁর বড় ভাই সুভাষ চাকমা এই অভিযোগ করেছেন।
ইউপিডিএফের সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমার বড় ভাই সুভাষ চাকমা বলেন, ‘শনিবার সকালে তারা ফোন করে আমাদের সবাইকে দুপুরের মধ্যে বাড়ি ছাড়তে বলে। বাড়ি না ছাড়লে তারা আমাদের মেরে ফেলবে বলে হুমকি দেয়। আমরা এখন এলাকার বাইরে চলে এসেছি। প্রাণ ভয়ের মধ্যেও মা বাবা বাড়িতে আছে।’
মন্টি চাকমার বাড়ি রাঙামাটির নানিয়ারচর উপজেলার ২নং সাবেক্ষং ইউনিয়নের মরাচেঙ্গি এলাকার বেতছড়িমুখ গ্রামে।
ধারণা করা হচ্ছে যেসব শর্ত সাপেক্ষে মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছিল সেগুলো মানছেন না বলেই তাদেরকে এই হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
মুক্তি দেওয়ার সময় অপহরণকারীরা অপহরণ বিষয়ে কোন কথা না বলা, রাজনীতি না করাসহ ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক সম্পর্কে কোন বক্তব্য না দেওয়ার শর্ত দিয়েছিলেন বলে জানিয়েছিলেন মন্টি চাকমার বড় ভাই সুভাষ চাকমা।
কিন্তু মুক্তি পাওয়ার পরদিন থেকেই গণমাধ্যমে মুখ খোলেন মন্টি চাকমা। তিনি এই অপহরণ ঘটনার জন্য সরাসরি ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করেন।
এদিকে, মন্টি চাকমা মুক্তি পাওয়ার পর থেকে কোন কথা না বললেও গতকাল শুক্রবার রাজধানীতে জাতীয় মুক্তি কাউন্সিলের কার্যালয়ে এক সংবর্ধনায় তিনি মুখ খোলেন।
এ অনুষ্ঠানে মন্টি চাকমা ও দয়াসোনা চাকমা ১৯টি প্রগতিশীল সংগঠনের নেতাদের সঙ্গে দেখা করে তাঁদের জিম্মি দশার চিত্র তুলে ধরেন। এজন্যই ক্ষুব্ধ হয়ে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে মনে করেন মন্টি চাকমা।
আর তাঁর এসব বক্তব্যে ক্ষুব্ধ হয়েই আজ দুপুর ১২টার মধ্যে তার পরিবারকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করা হয়।
এদিকে আজ দুপুরে ইউপিডিএফের রাঙামাটি জেলা ইউনিটের সংগঠক সচল চাকমা গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিবৃতিতে এই ঘটনার জন্য তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করেন।
বিবৃতিতে সচল চাকমা বলেন,‘নব্য মুখোশ বাহিনীর (ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিক) প্রধান তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা মোবাইল ফোনে শনিবার দুপুর ১২টার মধ্যে গ্রাম ছেড়ে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেন। চলে না গেলে তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলা হবে বলে হুমকি দেন তিনি।’
তবে, অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তপন জ্যোতি চাকমা ওরফে বর্মা উল্টো অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, ‘গত ২২এপ্রিল মন্টি চাকমার মা আমাকে ফোন করে কেঁদে কেঁদে জানিয়েছে, ইউপিডিএফের ১২জন সশস্ত্র ক্যাডার এসে তার মেয়ে মন্টি চাকমাকে তুলে নিয়ে গেছে। এখন তাকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর তাদের জিম্মায় বসে সে (মন্টি) কি বলছে, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়, বিশ্বাসযোগ্যও নয়।’
‘এসব আমাদের বিরুদ্ধে ইউপিডিএফ এর ষড়যন্ত্র ও নোংরা রাজনীতি। এটা নিয়ে আমাদের কিছু বলার নাই। সময়ে ও পরিস্থিতিতে এসবের জবাব দেওয়া হবে। যারা অপহরণ করেছিলো, তারা কি শর্তে মুক্তি দিয়েছিলো, সেটাতো আমি জানি না। তবে কারও শর্ত ভাঙ্গলে তারাও নিশ্চয়ই বসে থাকবে না। এ নিয়ে আমি কিছু বলতেও চাই না। যেহেতু এর সঙ্গে আমরা জড়িত নই’, যোগ করেন বর্মা।
এ বিষয়ে নানিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল লতিফ বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কোন খবর পাই নি। অভিযোগ পেলে পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে।’
গত ১৮মার্চ রাঙামাটির কুতুকছড়ির এলাকায় একটি বাড়িতে হামলা চালিয়ে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক মন্টি চাকমা ও রাঙামাটি শাখার সাধারণ সম্পাদক দয়াসোনা চাকমাকে অপহরণ করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। অপহরণের পর থেকে ইউপিডিএফ-গণতান্ত্রিককে দায়ী করে বিভিন্ন প্রতিবাদ কর্মসূচী পালন করেছে প্রসীত বিকাশ খীসার নেতৃত্বাধীন ইউপিডিএফ।
এর মধ্যে গত ১৯ এপ্রিল খাগড়াছড়ি জেলা সদরের মধুপুর এলাকার এপিবিএন স্কুল গেট এলাকায় ৩২ দিন পর অপহরণকারীদের কাছ থেকে মুক্তি পান এই দুই নেত্রী।