বঙ্গবন্ধু বলে উঠলেন, সফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আক্রমণ করেছে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪০তম শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন সাবেক সেনাপ্রধান কে এম সফিউল্লাহ। তিনি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গুবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সময় সেনাপ্রধানের দায়িত্বে ছিলেন। অনুষ্ঠানে দেওয়া সম্পূর্ণ বক্তব্য হুবহু তুলে ধরা হলো।
কে এম সফিউল্লাহ বলেন, “ইচ্ছা ছিল মুক্তিযুদ্ধ সম্বন্ধে কিছু কথা বলব। কিন্তু সময় নেই বলে আমি ১৫ আগস্ট সম্পর্কে কিছু কথা বলব। আপনাদের সবার মনে একটা জিনিস আছে– আপনি তো তখন সেনাপ্রধান ছিলেন। আপনি বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারলেন না কেন? এ প্রশ্নটা সবার কাছেই আছে। আপনারা জানেন, আমেরিকান প্রেসিডেন্ট গুলি খেয়ে মৃত্যুবরণ করেন। এত বড় একটা দেশ যার সেনাসংখ্যা এত সে দেশের রাষ্ট্রপতিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে রাস্তার পাশে। বলতে পারেন কিন্তু আমি শুধু একটিই বলব সেনাপ্রধান একজন ব্যক্তি। যে সৈন্য পরিচালনা করে, যুদ্ধকাজে এবং শান্তির সময়ে। কিন্তু সে এককভাবে কোনো সৈন্য পরিচালনা করে না। সে সৈন্য পরিচালনা করে তাঁর অধীনস্থ (আন্ডার কমান্ড) কর্মকর্তাদের দ্বারা। সেদিন সেই কর্মকর্তারা তাঁর সেনাপ্রধানের কথা শোনে নাই।
তবে কিছু জিনিস আছে যেগুলো আপনাদের সামনে তুলে ধরতে চাই। ১৫ আগস্টে কয়েকটা জিনিস ঘটে গিয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, আর্মার (সাঁজোয়া) এবং আর্টিলারি (গোলন্দাজ) এ দুটি ইউনিট কিন্তু প্রথমবারের মতো বের হয়ে গিয়েছিল ক্যান্টনমেন্ট থেকে বঙ্গবন্ধুর বাড়ির দিকে। তারা গেছিল কবে? ১৪, ১৫ আগস্টের আগে। এ দুটো ইউনিটের ওপর নির্দেশ ছিল তারা মাসে দুবার নাইট রেইড (রাতে টহল) করবে। সেটা হবে বৃহস্পতি ও শুক্রবার রাতে। ১৪, ১৫ আগস্টের রাত ছিল বৃহস্পতি ও শুক্রবারের রাত। ওই রাতে যখন ট্যাংকগুলো চলাফেরা করেছে ইন্টেলিজেন্সের সামনে দিয়ে, মানুষের সামনে দিয়ে কেউ তাদের ওপর কোনো সন্দিহান ছিল না। যতক্ষণ না তারা তাদের লিমিট ক্রস (সীমা অতিক্রম) করেছে। এটা এক নম্বর। দুই নম্বর : বঙ্গবন্ধু ১৫ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন। ১৪ আগস্ট পুলিশ আইজি নুরুল ইসলাম আমাকে বললেন, বঙ্গবন্ধু যে মঞ্চ থেকে বক্তব্য রাখবেন তার আশপাশে কিছু এক্সপ্লোশন (বিস্ফোরণ) হচ্ছে। সে জায়গাটাকে সেভ (রক্ষা) করার মতো তাঁর কাছে কিছু ছিল না। আমি কি তাঁকে সাহায্য করতে পারি। নিশ্চয়ই পারি। কারণ আমার কাছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিট ছিল যারা এন্টি-এক্সপ্লোশন এক্সপার্ট। তাদের পাঠিয়েছি সে জায়গাগুলো সেভ করার জন্য। ১৪ আগস্ট এগুলোকে সেভ করার জন্য সবাই তৎপর ছিল। একই সঙ্গে ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি : কারা এটা করেছে, কেন করেছে, কী করতে চাচ্ছে; এসব নিয়ে তারা ব্যস্ত ছিল। এ সময় পাকিস্তানিদের কিছু এজেন্ট পার্বত্য চট্টগ্রামে আমাদের পুলিশের আউটপোস্টের ওপর আক্রমণ করে; ইমিডিয়েটলি আফটার ইনডিপেনডেন্স (স্বাধীনতার ঠিক পরপরই)। ওটাকে রক্ষা করার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে যাওয়ার মতো যানবাহন আমাদের ছিল না। ছিল না হেলিকপ্টার, ছিল না উড়োজাহাজ। ওই সময় বঙ্গবন্ধু শ্রীমতি গান্ধীর (ইন্দিরা গান্ধী) সঙ্গে কথা বলার পর শ্রীমতি গান্ধী একটা হেলিকপ্টার আমাদের দেন। সে হেলিকপ্টারটা চট্টগ্রামে রেখেছিলাম, যাতে করে পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি দরকার পড়ে তবে ব্যবহার করা যাবে। ওই হেলিকপ্টারটা মাসে একবার কলকাতায় সার্ভিসিংয়ের জন্য নেওয়া হয়। ১৫ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। এ দিনটাকে সামনে রেখে তারা ওই সার্ভিসিংয়ের তারিখ ঠিক করে। ১৪ আগস্ট তারা চট্টগ্রাম থেকে কলকাতায় রওনা দেয়। পথিমধ্যে ফেনীতে এসে এটা শকুনের সঙ্গে ধাক্কা লেগে বিধ্বস্ত হয়। বিধ্বস্ত হওয়ায় এতে যতজন ছিল সবাই মারা যায়। এরা যেহেতু আমার অতিথি, আমি সেদিন এটা নিয়ে খুব তৎপর ছিলাম। তাদের মৃতদেহগুলো ফেনী থেকে শুরু করে ঢাকায় নিয়ে আসা এবং ঢাকা থেকে কলকাতায় পাঠানো, এসব নিয়ে আমি ব্যস্ত ছিলাম। ব্যস্ত ছিলাম বিধায় আমার অন্যদিকে আর কোনো খেয়াল ছিল না। যাই হোক, আমি যে একজন মানুষ। আমি কাজ করব। আমাকে জানতে হবে। আমাকে কেউ না কেউ খবর যদি দেয় তাহলে তো আমি জানব। ওই সময় আমরা যখন আর্মিকে বড় করার জন্য কাজ শুরু করি; আমাদের অর্থ ঘাটতি ছিল বলে আমাদের ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি (গোয়েন্দা সংস্থা) দুইটা করার দরকার মনে করি নাই। ডিজিএফআই অরগানাইজেশনটা আর্মি হেডকোয়ার্টারে রেইজ হয়। তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয় যতক্ষণ পর্যন্ত না আমরা অন্য পর্যায়ে যাব, সেকেন্ড স্টেজে যাব ততক্ষণ পর্যন্ত তারা আর্মি, নেভি ও এয়ারফোর্সকে ইন্টেলিজেন্সসেবা দেবে। ওই ইন্টেলিজেন্স ইনফরমেশন দেওয়ার জন্য তাদের এভাবে রাখা হয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৪ সালে এসে এ ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি আর্মি হেডকোয়ার্টার থেকে প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিয়েটে চলে যায়। চলে যাওয়ার পর যে অফিসার প্রত্যেকদিন সকালে এসে চিফদের ব্রিফ করত ওই প্রেসিডেন্ট সেক্রেটারিয়েটে চলে যাওয়ার পর তাদের আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারণ তারা ডিরেক্টলি প্রেসিডেন্টের কাছে রিপোর্ট করে। এটার জায়গাতে ইন্টেলিজেন্ট এজেন্সি তৈরি করার জন্য একটা প্রস্তাব ডিফেন্স মিনিস্ট্রিতে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কোনো কারণবশত এটা পাস হচ্ছিল না। সেটা পাস হয়েছে ১৫ আগস্ট ৭৫-এর পরপরই।
এ পরিস্থিতির মধ্যে আমি ১৪, ১৫ তারিখ রাতে ওই ইন্ডিয়ান অফিসারদের বডি (মৃতদেহ) কলকাতায় পাঠিয়ে দিয়ে আমি বাড়িতে গিয়ে ঘুমাচ্ছিলাম দেড়টার পরে। আমি সকালে চেষ্টা করি নামাজ পড়ার জন্য। কিন্তু সেদিন ঘুমিয়ে পড়েছিলাম বলে আর নামাজ পড়া হয়নি। আমার যে ইন্টেলিজেন্স অফিসার ছিল লেফটেন্যান্ট কর্নেল সালাহ উদ্দিন, সে সকালে এসে আমার বাড়িতে ঢোকে। আমার ব্যাটম্যানকে (ব্যক্তিগত কর্মচারী) বলে। ব্যাটম্যান আমার দরজায় টোকা দেয়। টোকা দেওয়ার পর আমি উঠে জিজ্ঞাসা করি কী ব্যাপার? সালাহ উদ্দিন আমাকে বলল, স্যার আপনি কি আর্মার ও আর্টিলারিকে শহরের দিকে পাঠিয়েছেন। বললাম না তো, কেন? বলল, তারা তো রেডিও স্টেশন, গণভবন, বঙ্গভবন, ৩২ নম্বরের দিকে যাচ্ছে। আমি তাকে জিজ্ঞাসা করলাম শাফায়াত জানে? সে বলল আমি জানি না। আমি তখন তাকে বললাম তুমি নিজেই চলে যাও শাফায়াত জামিলের বাসায়। তাঁর কাছে তখন ছিল তিনটা ব্যাটালিয়ান- ফার্স্ট, সেকেন্ড এবং ফোর্থ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট। এ তিনটা ব্যাটালিয়ান দিয়ে তা প্রতিরোধ করার জন্য। আমি ঘরের ভেতরে ঢুকে তাকে টেলিফোনে বলে দিচ্ছি। আমি ঘরে ঢুকে তাঁকে (শাফায়াত) ফোন করি, করে তার ফোনটা এনগেইজড পেলাম। তারপর আমি রিং করলাম বঙ্গবন্ধুকে। বঙ্গবন্ধুর ফোন যেটা ওয়ান টু ওয়ান, রেড ফোন সেটা এনগেজড। একবার, দুইবার, তিন, চার যখন সাতবার ফোন করে আমি পাই নাই, তখন আমি সেটটা আমার ওয়াইফের কাছে দিয়ে বললাম তুমি এ নম্বরটা রিং করো যখন পাবা আমাকে দিও। আমি অন্য সিভিল লাইনে আর্মি চিফ, নেভি চিফ এবং জিয়া (জিয়াউর রহমান), খালেদ মোশাররফসহ সবাইকে টেলিফোন করলাম। তার আগে আমি শাফায়াত জামিলকে ফোন করলাম। শাফায়াতকে যখন আমি জিজ্ঞাসা করলাম, শাফায়াত তুমি কি আর্মার আর আর্টিলারিকে শহরের দিকে পাঠিয়েছ? বলে যে, না তো স্যার। কেন? আমি বললাম যে সালাহউদ্দিন এসে আমাকে এ কথা বলেছে। কী হয়েছে আমি জানি না, তুমি যদি না পাঠিয়ে থাকো তাহলে তাড়াতাড়ি তোমার কাছে যে তিনটা ব্যাটালিয়ান আছে এ দিয়ে তুমি তাদের প্রতিহত করো। এ বলে আমি অন্যদের সঙ্গে কথা বলি। ইতিমধ্যে জিয়াউর রহমান আমার বাসায় চলে আসে, খালেদ মোশাররফ চলে আসে। জিয়াউর রহমান আমার বাসায় আসছে একেবারে টিপটপ ড্রেসে, নিজে গাড়ি চালিয়ে। এবং খালেদ মোশাররফ আসছে ঘুমের কাপড় পরা। আমি খালেদ মোশাররফকে বললাম, খালেদ আমি শাফায়াতকে তো এ নির্দেশ দিয়েছি। এখন পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া দেখছি না। তুমি এক কাজ করো, তাড়াতাড়ি তুমি ৪৬ ব্রিগেডে যাও, শাফায়াতকে সক্রিয় করো। আমি ভেতরে গিয়ে জামা পরিবর্তন করে যাব। এই কথা বলে তাকে পাঠিয়ে দিলাম, যখন পাঠাচ্ছি জিয়াউর রহমান তখন আমার সামনে ছিল, বারবারই সে এইটা বাধা দিচ্ছিল যে পাঠিও না, পাঠিও না। একপর্যায়ে যখন পাঠাচ্ছি তখন সে বলল যে, হি ইজ গোয়িং টু স্পয়েল ইট (সে এটা বিনষ্ট করতে যাচ্ছে)। এখন জানি না হোয়াট ডিড হি মিন বাই দ্যাট কমেন্ট, ‘হি ইজ গোয়িং টু স্পয়েল ইট’। সে ওখানে গিয়ে কি অন্য কিছু করতে চেয়েছিল নাকি! এমনও তো হতে পারে, তার যে পরিকল্পনা, সেই পরিকল্পনা বিনষ্ট করতে পারে।
যাই হোক, এইটার পরে আমি আমার অফিসে এসে আমি খবর নিতে চেষ্টা করতেছি। অফিসে আইসা বসার সাথে সাথেই আমি খবর পেলাম, বঙ্গবন্ধু ইজ ডেড। এমন সময় আমি যেই অফিসে বসলাম, তার ডান পাশে মানে অফিসের পশ্চিম পাশে ব্যারিকেডের বাইরে একটা ট্যাংক এসে দাঁড়ায়। তারপরেই দুই-তিনটা গাড়ি এসে আমার অফিসের সামনে এসে দাঁড়ায়। ওই গাড়িগুলো থেকে একজন অফিসার ও ১৬-১৭ জন সোলজার এসে রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে আমার অফিসের দরজাটা খোলে। ওই সময় আমি যেখানে বসা আমার সামনে যে টেবিলটা ছিল, টেবিলের এই কোনার মধ্যে ছিল জিয়াউর রহমান বসা এবং আরেক কোনায় শাফায়াত জামিল, ও-ই ৪৬ ব্রিগেড থেকে ফিরে এসে রিপোর্ট করছিল কি দেখে আসছে সেইটা। আমার পাশে দাঁড়ানো ছিল তখন কর্নেল নাসিম, পরে সে সেনাবাহিনীর প্রধান হয়েছিল। নাসিম বলল, দেখতেছো না, চিফ ইজ হিয়ার? তখন সবাই বন্দুকটা আমার দিকে তাক করে। ডালিমের বন্দুকটা এতখানি কাছে যে আমি হাত দিয়ে বন্দুকের নল স্পর্শ করতে পারতেছি। আমি এইটা দেইখা ডালিমকে বললাম যে, ডালিম এই অস্ত্র আমি দেখে এবং ব্যবহার করে অভ্যস্ত। তুমি যদি ব্যবহার করতেই এসে থাকো, করো। আর যদি কথা বলতে এসে থাকো, তাহলে তোমার অস্ত্র এবং তোমার লোকদেরকে বাইরে রেখে তারপরে কথা বলো। তখন সে তার অস্ত্রটা নিচের দিকে নামাইয়া বলে, প্রেসিডেন্ট আপনাকে রেডিও স্টেশনে ডাকছে। আমি বললাম, প্রেসিডেন্ট? আমি তো শুনছি প্রেসিডেন্ট মারা গেছেন। সে বলে যে, স্যার, ইউ শুড হ্যাভ নোন বাই নাউ খন্দকার মোশতাক ইজ দ্য প্রেসিডেন্ট (স্যার, আপনার এরই মধ্যে জানা উচিত ছিল আমাদের প্রেসিডেন্ট খন্দকার মোশতাক)। আমি বললাম, খন্দকার মোশতাক মে বি ইওর প্রেসিডেন্ট, হি ইজ নট মাইন। এ কথা বলার সাথে সাথে সে বলে উঠল, স্যার আমাকে এমন কিছু করতে বাধ্য করেন না, যা আমি করতে আসি নাই। বললাম, তোমার যা খুশি করতে পারো। আমি তোমার সাথে কোথাও যাব না। এই কথা বলে আমার সিটের থেকে উঠে আমার টেবিলটা যে সামনে ছিল এইটার সাইড দিয়ে ঘুরে তাদের রীতিমতো ধাক্কা দিয়ে আমি আমার অফিস কক্ষ থেকে বের হই। আমার পেছনে পেছনে জেনারেল জিয়া এবং ডালিম বের হয় ঘর থেকে। ডালিম বের হওয়ার সাথে সাথেই আমি আমার গাড়ির দিকে যাচ্ছি বসার জন্য। এমন সময় আমি দেখি, জিয়া ডালিমের দিকে তাকিয়ে বলে, ‘ডালিম, ওয়েল ডান, ওয়েল ডান, কংগ্রাচ্যুলেশন। কিস মি, কিস মি।’ এটা ছিল আমাকে যাদের সাহায্য করার কথা তাদের কার্যক্রম। সেখান থেকে আমি গাড়িতে উঠলাম। গাড়িতে উঠে ৪৬ ব্রিগেডে রওনা হয়েছি, ডালিম তাদের গাড়ি-টাড়ি নিয়ে আমাকে ঘেরাও করে ওই ৪৬ ব্রিগেডে নিয়ে গেছে যেখানে রশীদ বসা ছিল। রশীদ আর মেজর হাফিজ। রশীদ আমাকে দেখেই বলে যে স্যার, আপনি রেডিও স্টেশনে যান। আমি বললাম যে, আমি তো রেডিও স্টেশনে এখন যাব না, যতক্ষণ পর্যন্ত না আমি অন্য চিফদের সাথে কথা বলব। এই কথা বলার সাথে সাথে তারা কী করেছে জানি না, তার কিছুক্ষণ পরেই এয়ার চিফ এবং নেভাল চিফকে ওইখানে নিয়ে আসে। নিয়া আইসা আমাদেরকে রীতিমতো গান পয়েন্টে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যায়।
রেডিও স্টেশনে নিয়ে যাওয়ার পরে একটা ঘরে নিয়ে গেল, যেখানে দেখি খন্দকার মোশতাক বসা। মোশতাকের সামনে একটা মাইক্রোফোন আর তার পাশে তাহের উদ্দিন ঠাকুর দাঁড়ানো। আমাকে দেখেই খন্দকার মোশতাক বলে উঠল, ‘কংগ্রাচ্যুলেশন সফিউল্লাহ, ইওর ট্রুপস হ্যাভ ডান এ ওয়ান্ডারফুল জব। নাউ ডু দ্য রেস্ট (অভিনন্দন সফিউল্লাহ, তোমার বাহিনী চমৎকার কাজ করেছে, এখন বাকিটা কর’)। আমি বললাম যে, কী বাকিটা? (হোয়াট রেস্ট?)। সে বলল, ‘ইউ শুড নো দ্যাট বেটার (তোমার এটা ভালো করে জানা উচিত)। আমি বললাম, ইন দ্যাট কেস লিভ ইট টু মি (এক্ষেত্রে ব্যাপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও)। এই কথা বলে আমি বেরিয়ে যাবে, এমন সময় পাশে দাঁড়ানো তাহের উদ্দিন ঠাকুর বলল, ওনাকে যেতে দিয়েন না। আরো কিছু কাজ বাকি আছে। আমি বেরিয়ে যাব, দেখি দরজার সামনে ডালিমরা দাঁড়ানো। তো সেখান থেকে আমাদের তিনজন চিফকে অন্য একটা কামরাতে নিয়ে যায়। ওইখানে তাহের উদ্দিন ঠাকুর আসে, আসার পরে এই সরকারের ওপর যে আমাদের আস্থা আছে, এই বলে একটা ভাষণ লেখে। আমাদের সেটা পড়তে হয়। পড়ার পরে সেটা তারা রেকর্ড করে।’
আমি দেখলাম, যদি না পড়ি তাহলে কী হবে? পড়লে কী হবে? যা দেখতেছি, যদি না পড়ি তাদের কিছু হবে না, হবে আমার। তখন আমার মনের মধ্যে যে চিন্তাটা, আমি যে কোনোভাবে চেষ্টা করব নিয়ন্ত্রণটা আমার হাতে আনতে, নিয়ন্ত্রণটা হাতে যদি আনতে পারি তাহলে আমরা জবাব দিতে পারব। এর আগে জবাব দিলে এইটার অ্যাকশনটা ভালো হবে না। তাই আই কুড নট রিঅ্যাক্ট (আমি জবাব দিতে পারতাম না)। তাদের কথায় বাধ্য হয়ে এটা পড়তে হয়েছে আমাকে। ওইখানে আমাদের পড়ানো শেষ করার পর খন্দকার মোশতাক এসে বলল যে, ‘কিছুক্ষণের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির শপথবাক্য পাঠ করা হবে। আমি সেখানে আমাদের প্রধানদের চাই।’ তো আমরা গেলাম ওইখানে। ওইখান থেকে বের হয়ে বঙ্গভবনে গেলাম। খন্দকার মোশতাক কিছুক্ষণের মধ্যেই শপথবাক্য পাঠ করবেন, ইতিমধ্যেই প্রেসিডেন্টের যে মিলিটারি সেক্রেটারি আমাকে আইসা বলল, ‘স্যার, আপনার একটা কল আছে।’ ‘কে?’ ‘জেনারেল ওসমানী।’ আমি গেলাম। কল ধরে বললাম, সফিউল্লাহ বলছি। বলে, ‘সফিউল্লাহ, কংগ্র্যাচুলেশন।’ আমি বললাম, ‘স্যার, ডু আই ডিজার্ভ দিস কংগ্র্যাচুলেশন (স্যার, আমি কী অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য)? তখন তিনি বললেন, ‘ওল্ড বয়, তুমি জানো না, তুমি গৃহযুদ্ধ থেকে দেশকে রক্ষা করেছ।’ আমি বললাম, আই ডোন্ট নো হোয়াট আই ডিড (আমি কী করেছি আমি জানি না)। এমনও হতে পারত যদি আমি কোনো সৈন্যদের নিয়ে প্রতিবাদ করতে যেতাম, বিপক্ষ শত্রু তো সৈন্যরাই হতো। এটা হয়তো বা, জানি না, তিনি এটা বলতে চেয়েছিলেন (হি মিন দ্যাট ওয়ে)। কিন্তু পরে গিয়ে আমার মনে হলো, হি ডিড নট মিন দিস (তিনি এটা বলতে চাননি)। কেন বলছি? ওই যে ১৫ তারিখে আমি বঙ্গভবনে গিয়েছি, আমি ছাড়া সবাই দেখি যাওয়ার চেষ্টা করে। আমার জন্য বলা হলো, আমি যেন এখান থেকে না যাই। ১৫, ১৬, ১৭, ১৮ আগস্ট একই কাপড়ে আমি বঙ্গভবনে ছিলাম এবং ওইখানে কনফারেন্সে অ্যাটেন্ড করেছি। কনফারেন্সটা কী? মার্শাল ল হবে কি হবে না। তো আমি একপর্যায়ে বললাম, মার্শাল ল হবে কি হবেনা, এখন বলে কী লাভ? মার্শাল ল অলরেডি ডিকলেয়ার্ড ইন দ্য রেডিও-টেলিভিশন (মার্শাল ল এরই মধ্যে রেডিও-টেলিভিশনে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে)। বলল যে, সেটা কে করছে? বলল যে আর্মি অফিসার। বলতেছে যে, এইটা তো তোমার ট্রুপস করছে। আমি বললাম, তারা যদি আমার ট্রুপস হতো, তারা কিন্তু আমার নাম নিত। তারা কিন্তু আপনার নাম নিছে। এই কথা বলার পর সে বলে উঠল যে, তুমি তো রেগে যাইতেছো খামাখা। আমি তো এইটা লর পয়েন্ট অব ভিউতে চিন্তা করতেছি। মানে খন্দকার মোশতাক যে কতটুক শ্রুড (ধূর্ত), এইটা আমি আগে বুঝি নাই। তার পক্ষে কথা বলার জন্য অনেকেই চেষ্টা করেছে। যাই হোক, আমরা তিন-চারদিন থাকার পর ১৭ তারিখের রাতে সে বলল যে, আমি কালকে তোমাদের একটা ড্রাফট দিব, সেই ড্রাফটটা ঠিক করে পরে সেইটায় গেজেট নোটিফিকেশন করা হবে। আমরা আবার ওইদিন রাত্র কাটাইলাম। পরের দিন সকালে সে বেরিয়ে এসে আমাকে, আমি ডানদিকে বসা ছিলাম, ডান পকেট থেকে একটা কাগজ বের করে আমার হাতে ধরায় দিল। আমি ওইটা খুলতে খুলতে, ওইটা খুইলা দেখতেছি আর বলতেছি যে, আপনি যান বিশ্রাম করেন। আমরা দেখি যে এইটার মধ্যে কোনো ভুলটুল আছে কি না। সে আমার দিকে চোখটা এমনভাবে ঘুরাইছে যে আমি মস্তবড় একটা অন্যায় করে ফেলছি।
খন্দকার মোশতাক বললেন, সফিউল্লাহ, আই হ্যাভ বিন ওয়ার্কিং অন দিস ফর লাস্ট থ্রি মান্থস (গত তিন মাস ধরে আমি এর ওপর কাজ করছি)। আমি তখন বলে উঠলাম যে, এক্ষেত্রে আপনি অবশ্যই ঠিক আছেন (ইন দ্যাট কেস ইট মাস্ট বি রাইট)। আমার আর দেখার দরকার নাই। খন্দকার তুমি দেখো, মানে এয়ার ভাইস মার্শাল এ কে খন্দকার। তুমি দেখো, আমার আর দেখার দরকার নাই।
ক্যান ইউ ইমাজিন (আপনারা চিন্তা করতে পারেন)? এই লোকটা তিন মাস যাবৎ মার্শাল ল জারি করার যে অর্ডার, সে ওইটার ড্রাফট তৈরি করতেছে। এগুলো তো আমরা জানি না। জানছি পরে। বঙ্গবন্ধুর খুব প্রিয় ছিল খন্দকার মোশতাক। একটা ঘটনা বলি, যে কেমন প্রিয় ছিল? বঙ্গবন্ধুর বাবা শেখ লুৎফর রহমান মারা যান ১৬ জানুয়ারি ১৯৭৫ সালে। বঙ্গবন্ধু তাঁর বাবাকে দেখার জন্য, মরদেহ সৎকার করার জন্য ঢাকা থেকে স্টিমারে যান টুঙ্গিপাড়া। আমরা পাগলাঘাটে ওনাকে বিদায় জানাতে গিয়েছি, ওইখানে গিয়া দেখি ওই জাহাজের মধ্যে খন্দকার মোশতাকও আছে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের সাথে। ওইখানে দেখি বঙ্গবন্ধু আমাদের সাথে কথা বলতেছেন, ওপরে দেখি খন্দকার মোশতাক দাঁড়াইয়া চিল্লায় চিল্লায় কানতেছে। মনে হচ্ছিল তাঁরই বাবা মারা গেছে। কিন্তু পরদিন আমরা হেলিকপ্টারে করে জানাজায় শরিক হইছি। জানাজার পর তাঁর মৃতদেহ খন্দকার মোশতাকও কান্ধে কইরা নিয়া গেছে কবরের ওইখানে। নামাইছে, ভেতরে ঢুকছে, যখন মাটি দিবে তখন তো আর সে উঠে না। বলে যে, আমার আর উইঠা কী লাভ, আমার বাবা মারা গেছে। আমাকেও এইখানে দাফন কইরা দাও। তো এইভাবে বঙ্গবন্ধুর মন জয় করছেন খন্দকার মোশতাক।
যাই হোক, আজকে এসব কথা এই জন্য বলছি, অনেকে বলে যে বঙ্গবন্ধু আমাকে টেলিফোন করেছিলেন। এবং আমার কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন, আমি অনীহা প্রকাশ করেছি। আপনাদের কাছে বলেছি, কিছুক্ষণ আগেই, যে আমি যখন কয়েকবার টেলিফোন করে পাইনি, তখন আমার ওই টেলিফোনটা আমার ওয়াইফের কাছে দিয়েছি যে তুমি এইটা করতে থাকো। সে করতেছিল করতেছিলে, একপর্যায়ে আমি টেলিফোনটা নিলাম। ততক্ষণে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মিনিট সময় পার হয়ে গেছে। আমি টেলিফোনটা নিয়া বঙ্গবন্ধুরে টেলিফোন করতেই পেয়ে গেছি। উনি আমার গলার আওয়াজ শুনেই বলে উঠলেন, ‘সফিউল্লাহ তোমার ফোর্স আমার বাড়ি আক্রমণ করেছে। কামালরে বোধ হয় মেরে ফেলেছে। তুমি জলদি ফোর্স পাঠাও।’ আমি তখন ওনাকে এতটুকুই বলছিলাম, স্যার, আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং (স্যার আমি কিছু করছি)। কারণ বাইরে আমি শাফায়াত জামিলকে এরই মধ্যে নির্দেশ দিয়েছি। আই অ্যাম ডুয়িং সামথিং, ক্যান ইউ গেট আউট অব দি হাউস (আমি কিছু করছি, আপনি কি বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে পারবেন)? তো উনি কিছু বললেন না। আমার মনে হলো যে ওনার সাথে কেউ ছিল। টেলিফোনটা তিনি টেবিলের ওপরে রাখছেন, আমি একটা শব্দ পাইলাম। তারপর ২০-৩০ সেকেন্ড পরে আমি কিছু গুলির আওয়াজ পাই। আমার যতটুক মনে হয় সেইটাই বোধহয় বঙ্গবন্ধুর শেষ (মুহূর্ত)।
যাই হোক, এভাবেই বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে আমার কথা হয়। আমি তাকে রক্ষা করতে পারি নাই। এই ব্যর্থতা নিয়েই আমি এতগুলি বছর চলছি ফিরছি। কিন্তু কেউ কেউ আমাকে অনেক রকম কথা বলে। আমি তো একা, একজন মানুষ। আমাকে বলে, জামিল যদি যেতে পারে, আমি যেতে পারলাম না কেন? জামিল গিয়ে কী করেছে? সে যাওয়ার পর তো সে গুলি খাইয়া মারা গেছে। আমি মরলে তারা খুশি হইত? আমি গেলে তো ওই একই হইত। আমার কাছে যদি কিছু শক্তি না থাকে এককভাবে গিয়ে তো কোনো লাভ হতো না। এই জন্য যেতে পারি নাই। এটাই আমার ব্যর্থতা।
তো যাই হোক, আপনাদের নিশ্চয়ই অনেকের মনের মধ্যে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে। আমি আছি, আপনাদের সেই প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য। তো, আজকে আমি বলব, এতগুলি বছর পর বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচার হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত সুষ্ঠু তদন্ত হয় নাই। যে এই হত্যার পেছনে কারা আছে?
আপনারা এইসব বই পড়েছেন নিশ্চয়? পড়ার পরেই হয়তো আপনাদের মনের ভিতর কিছু সন্দেহ আমার ওপর হয়েছে। যেমন অনেকে বলেন, আমি শাফায়াত জামিলকে....(যান্ত্রিক ত্রুটি কারণে অস্পষ্ট)। কথাটা শুধু শাফায়াত জামিলই বলছে। কিন্তু সে কী বলেছে? শাফায়াত জামিল বলতেছে, সকাল ৬টা ১০ মিনিটে হন্তদন্ত হয়ে রশিদ আমার ঘরে ঢুকে বলে, আমরা শেখ মুজিবকে হত্যা করেছি (উই হ্যাভ কিল্ড শেখ মুজিব)। এমন সময় টেলিফোন বেজে ওঠে। আমি টেলিফোন ধরতেই সফিউল্লাহ সাহেবের কান্নাভেজা বিমর্ষ কণ্ঠ শুনতে পাই। তিনি আমাকে কিছু বললেন না। আমার কথাটা হলো, আমি তখন পর্যন্ত কেন কাঁদতে যাব? তখন পর্যন্ত তো বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথা হয়নি। এবং কি তখন কীভাবে বঙ্গবন্ধু মারা গেছে সেইটাও আমি জানি না। আমি পরবর্তীতে যখন আমার বাড়ি থেকে বের হয়ে অফিসে আসি তখন আমি জানতে পারি। তার আগে আগে আমি জানতে পারি নাই। তাহলে আমি কাঁদতে যাব কেন?
সে যখন বলে, ৬টা ১০ মিনিটে রশিদ হন্তদন্ত হয়ে এসে তাকে বলে উই হ্যাভ কিল্ড শেখ মুজিব। আমি যদি বলি তাঁর নির্দেশ পালন করে সে রিপোর্ট দিতে আসছে, যে কাজের জন্য আমাকে পাঠাইছো সেই কাজ সফল করে আসছি। আমি কি ভুল বলব? কিন্তু আমি ওইগুলো বলব না। কারণ আমি দেখি নাই। কিন্তু যে কথাটা আমি বলব, এরকম একটা খবর পাওয়ার পর কারোর কি নির্দেশের প্রয়োজন আছে? তার কাছে তিনটি ব্যাটালিয়ন আছে। এই তিনটি ব্যাটালিয়ন দিয়ে যে কয়টা গিয়েছিল, ওই সবগুলিকে তো ধরে ফেলতে পারত। আমরা পরে জানতে পারি, যে ট্যাংকগুলো গিয়েছিল তাদের মধ্যে অ্যামিউনিশন ছিল না। এই অ্যামিউনিশন দিয়েছে খালেদ মোশাররফ। খালেদ মোশাররফ কেন দিয়েছে, আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করি। বলে যে, এখন তো সব আন্ডার কন্ট্রোল (নিয়ন্ত্রণ)। আমি বলি, আন্ডার কন্ট্রোল তোমার হুকুমে চলবে? তুমি অ্যামিউনিশন দিয়েছ। এখন তো তাদের সাহসী বানায়ে দিয়েছ।
যাই হোক, এখন এই যে কথাগুলো, এগুলো ভালো করে বিশ্লেষণ করলে সত্যি ঘটনা বেরিয়ে আসবে। আমি একা আর এটা বহন করতে পারছি না। আমি যেখানে যাই সবাই আমাকে দোষী মনে করে। আমি কিন্তু এটা বন্ধ করতে পারি নাই।
আরেকটা কথা, শাফায়াত জামিল বলতেছে, ‘আমি যেহেতু তাকে কোনো নির্দেশ দেয়নি। আমার বাসা থেকে জিয়াউর রহমানের বাসা ১০০ গজ। আমি জিয়াউর রহমানের বাসায় গেলাম, তাকে ডাকাডাকি করলাম তিনি বেরিয়ে এলেন, অর্ধেক শেভ করা ছিলেন। সফিউল্লাহ সাহেবের কথা বললাম। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। তিনি বললেন, সো হোয়াট? বঙ্গবন্ধু নেই তো, ভাইস প্রেসিডেন্ট তো আছে। ইউ অ্যালার্ট ইউর ট্রুপস (তুমি তোমার ট্রুপসকে সতর্ক রাখো)।’
মানে বঙ্গবন্ধু মারা গেছে ‘সো হোয়াট?, ভাইস প্রেসিডেন্ট তো আছে। ইউ অ্যালার্ট ইউর ট্রুপস।’ অ্যালার্টের অর্থটা কি? উনি তো বলেননি, ইউ সেন্ড ইওর ট্রুপস। (যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে অস্পষ্ট)। এখন কথা হলো, আমি যখন নাকি আমার বাসায় জিয়াউর রহমানের সঙ্গে কথা বলছিলাম। বারবার আমি বলতেছিলাম যে, শাফায়াতকে নির্দেশ দেওয়ার পরও সে কোনোকিছু করতেছে না। জিয়াউর রহমান ছিল সেদিন। সে তো আমাকে একথা বলে নাই শাফায়াত জামিল আসছিল। আর আমি তাকে এগুলো বলেছি। এই আমার ডেপুটি (জিয়াউর রহমান) তার নিজের কোনো উদ্দেশ্য ছিল বলেই সে এসব করেছে। কী উদ্দেশ্য ছিল সেটা তো আপনারা পরে দেখেছেন। বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরে আসছিল ৭২-এর ১০ জানুয়ারি। ১২ জানয়ারি কিন্তু বঙ্গবন্ধু দালাল আইন তৈরি করেছিলেন। এই দালাল আইনে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যক্রম শুরু করেছিলেন। ৭৫-এর ডিসেম্বরে দালাল আইন জিয়াউর রহমান বাতিল করে দেয় এবং যারা নাকি সাজাপ্রাপ্ত ছিল, ১২১ জন সাজাপ্রাপ্ত ছিল, ২১ জনের ফাঁসির হুকুম হয়েছিল; সবাই ছাড়া পায়। কেবল একজনের ফাঁসি হয়ে গিয়েছিল। তার নাম চিকন আলী, বাড়ি তার কুষ্টিয়ায়। জিয়াউর রহমান সমস্ত রাজাকারদের ছেড়ে দেয়। যারা নাকি আইনের আওতায় ছিল, তাদের বিচার হচ্ছিল। তাদের সবাইকে ছেড়ে দেয়। ওই যে দালাল আইনটি তা তুলে দেওয়া হয়। আমরা পরবর্তীতে চেষ্টা করে যাচ্ছি। বঙ্গবন্ধু এই আইনটি চালু করেছিলেন। আমার শেখ হাসিনা নেত্রীর কাছে এইটাই আমার দাবি, এই আইনটাকে পুনঃপ্রবর্তন করেন এবং যারা নাকি সাজা পেয়েছিল সেই সাজা কার্যকর করেন।”