মৃত্যুদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে আলবদর রিয়াজ ফকিরের আপিল
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ার আলবদর বাহিনীর প্রধান রিয়াজ উদ্দিন ফকির রায়ের বিরুদ্ধে আপিল দায়ের করেছেন।
গতকাল বৃহস্পতিবার এ আপিল করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তাঁর আইনজীবী মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন।
গত ১০ মে বিচারপতি মো. শাহিনুর ইসলামের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধে রিয়াজ উদ্দিন ফকিরের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
ওই রায়ের পরে মুজাহিদুল ইসলাম শাহীন জানিয়েছিলেন, দুটি অভিযোগে রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ এবং দুটি অভিযোগে যাবজ্জীবন দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এর আগে ২১ মার্চ যুক্তিতর্ক শেষে রায়ের জন্য সিএভি (রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ) রাখেন।
এ মামলায় তিন আসামির মধ্যে অন্য দুজন ফুলবাড়ীয়ার রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ আলী গ্রেপ্তারের পর ও রাজাকার ওয়াজ উদ্দিন পলাতক অবস্থায় মারা গেছেন। এ জন্য তাদের অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে।
রিয়াজের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, আটক, অপহরণ, নির্যাতন ও ধর্ষণের পাঁচটি মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ২২ আগস্ট থেকে ২১ নভেম্বর পর্যন্ত ফুলবাড়ীয়া উপজেলার বেবিট্যাক্সি স্ট্যান্ড, রাঙামাটিয়া ঈদগাহসংলগ্ন বানা নদী, বিদ্যানন্দ ফাজিল মাদ্রাসা, ফুলবাড়ীয়া ঋষিপাড়া, আছিম বাজার ও ভালুকজান গ্রামে তিনি এসব অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়েছিলেন বলেও অভিযোগে বলা হয়েছে।
২০১৬ সালের ১১ ডিসেম্বর রিয়াজ ও ওয়াজের বিরুদ্ধে অভিযোগ (চার্জ) গঠন করেছিলেন ট্রাইব্যুনাল। ওই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি তিন আসামির বিরুদ্ধে তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করে ওই দিনই প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করেন তদন্ত সংস্থা। এর ভিত্তিতে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ তৈরি করে ২০১৬ সালের ২১ সেপ্টেম্বর দাখিল করেন প্রসিকিউশন। এ মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. আতাউর রহমান ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবর থেকে এক বছর চার মাস সাত দিনে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর ২০১৬ সালের ১১ আগস্ট আমজাদ ও রিয়াজকে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার কেশরগঞ্জ ও ভালুকজান গ্রাম থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
পরদিন ১২ আগস্ট ট্রাইব্যুনালে সোপর্দ করার উদ্দেশে ময়মনসিংহ থেকে দুই আসামিকে নিয়ে আসার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে পুলিশের প্রিজন ভ্যান। এতে চার পুলিশ ও আসামি আমজাদ গুরুতর আহত হন। পরে আমজাদকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরে মারা যান তিনি।
এদিকে, পলাতক অবস্থায়ই ওয়াজ উদ্দিনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায় অভিযোগ গঠনের পরে। গ্রেপ্তারকৃত রিয়াজ উদ্দিন ফকিরকে সেফহোমে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থা।
ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ভালুকজান গ্রামের শহীদ তালেব মণ্ডলের ছেলে খোরশেদ আলী বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় তিনি অভিযোগ করেন, তাঁর বাবা তালেব মণ্ডলকে আখিলা নদীর ব্রিজের ওপর দাঁড় করে গুলি করে হত্যা করেন থানা রাজাকার বাহিনীর প্রধান আমজাদ ও আলবদর বাহিনীর প্রধান রিয়াজ ফকিরের নেতৃত্বে ওয়াজ উদ্দিনসহ অন্য রাজাকাররা।
এ ছাড়া মামলায় বলা হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমজাদ আলী, রিয়াজ উদ্দিন ফকির ও ওয়াজ উদ্দিন হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণসহ নানা মানবতাবিরোধী অপরাধে নেতৃত্ব দেন। আছিম বাজারের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাসহ বহু মানুষকে হত্যা ও পাটিরায় দুই হিন্দু নারীকে ধর্ষণের অভিযোগও করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।