লেগুনে মাছ চাষ বন্ধে হাইকোর্টের সাত দফা নির্দেশনা
রাজধানীর সায়েদাবাদ এলাকায় ওয়াসার পানি শোধনাগারের লেগুনে মাছ চাষ বন্ধ করতে সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছেন হাইকোর্ট। রায়ে লেগুন এলাকার সীমানা দেয়াল দিয়ে ঘিরে দেওয়ার পাশাপাশি দুই মাস পরপর মাছ নিধন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া জনগণকে সতর্ক করতে সাইনবোর্ড বসিয়ে তদারকি জোরদার করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে আজ রোববার বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রায় দেন।
রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। ওয়াসার পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট কামরুন নেসা ও সিটি কপোরেশনের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট জাহানারা শিলা।
রায়ে দেওয়া সাত দফা নির্দেশনাগুলো হলো :
১. আগামী দুই বছরের মধ্যে লেগুন এলাকার চতুর্দিকে সীমানাপ্রাচীর নির্মাণ করতে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ।
২. ম্যাজিস্ট্রেট, মৎস্য বিভাগ, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীদের উপস্থিতিতে দুই মাস পরপর ওষুধ প্রয়োগ করে লেগুনের মাছ নিধন করতে হবে।
৩. লেগুন এলাকায় তদারকির জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক আনসার ও নিরাপত্তা প্রহরী নিয়োগ করতে হবে।
৪. লেগুন এলাকায় নৈশ টহল জোরদার করতে হবে।
৫. জনসচেতনতার জন্য এই মাছ বিষাক্ত, ক্ষতিকর এবং মাছ চাষ ও ধরা শাস্তিযোগ্য অপরাধ লেখা প্রয়োজনীয় সংখ্যক সাইনবোর্ড স্থাপন করতে হবে।
৬. লেগুন এলাকার প্রয়োজনীয় সংস্কার ও সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে।
৭. ওই এলাকার জনপ্রতিনিধিরা নাগরিক কমিটি গঠন করে মাছ চাষ বন্ধের ব্যবস্থা নেবেন এবং ওয়াসা কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে সহযোগিতা করবেন।
২০১১ সালের ১৩ জুলাই ‘ওয়াসার লেগুনের বিষাক্ত মাছ খাচ্ছে ঢাকার মানুষ’ শিরোনামে একটি জাতীয় দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই প্রতিবেদনটি যুক্ত করে আদালতে জনস্বার্থে রিট করেন মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। পরে প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১১ সালের ১৪ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল জারি করেন। রুলে লেগুন এলাকায় মাছ কেন অবৈধ নয় তা জানতে চাওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে গত ৩০ আগস্ট হাইকোর্ট রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। আজ রোববার এ বিষয়ে সাত দফা নির্দেশনাসহ রায় ঘোষণা করা হয়।
এ বিষয়ে মনজিল মোরসেদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সায়েদাবাদ এলাকায় পয়োবর্জ্য পরিশোধনের জন্য ওয়াসার ২৪৬ একর জমিতে বেশ কিছু লেগুন বা পুকুর রয়েছে। ঢাকা শহরের বর্জ্যের সঙ্গে মিশে আসা অ্যালুমিনিয়াম, লেড, পারদ ও দস্তাসহ বিভিন্ন বিষাক্ত রাসায়নিকের কারণে এসব লেগুন মাছ চাষের অনুপযুক্ত হলেও স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী সেখানে মাছ চাষ করে তা রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করে আসছিলেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় এসব লেগুনে অভিযান চালিয়ে মাছ নিধন শুরু হয়। কিন্তু তারপরও লেগুনে মাছ চাষ বন্ধ না হওয়ায় এই রিট দায়ের করি।’