পাবনায় শিশু হত্যায় রাজশাহীতে একজনের ফাঁসির রায়
পাবনার চাটমোহর উপজেলায় চার বছরের শিশু আবদুল্লাহ আল নূর হত্যা মামলার প্রধান আসামিকে ফাঁসির দণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলার অপর এক আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং তিন আসামি খালাস পেয়েছেন।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শিরীন কবিতা আখতার চাঞ্চল্যকর এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।
ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামির নাম সোহেল বিশ্বাস। তিনি চাটমোহর পৌরসভার চৌধুরীপাড়া মহল্লার নজরুল ইসলামের ছেলে। আর যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামির নাম আবদুস সামাদ। সম্পর্কে তিনি নিহত শিশুর ফুফা। এ মামলায় শিশু নূরের বাবা আবুল হোসেনের বোনের ছেলে কবির হোসেন, আবুল হোসেনের সৎমা আয়েশা বেওয়া ও সোহেল বিশ্বাসের স্ত্রী আজিজা আক্তার রূপা খালাস পেয়েছেন।
মামলার বিবরণে জানা যায়, নিহত শিশু নূর জন্মসূত্রে গ্রিসের নাগরিক ছিল। গ্রিস থেকে ফেরার পর তার বাবা আবুল হোসেন চাটমোহর পৌরসভার হারান মোড় মহল্লায় দোতলা একটি বাড়ি তৈরি করে বসবাস শুরু করেন। এই বাড়ির নিচতলায় ভাড়া থাকতেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সোহেল বিশ্বাস। ২০১৪ সালের ২৫ জুন শিশু নূর নিখোঁজ হয়। সেদিন মোবাইল ফোনের মাধ্যমে নূরের বাবার কাছে ১৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। এর দুই দিন পর স্থানীয় ভাদড়া এলাকার জলমগ্ন একটি আবাদি জমি থেকে অর্ধগলিত অবস্থায় নূরের মাথা, দুটি হাত ও নাড়িভুঁড়িবিহীন দেহ উদ্ধার করে পুলিশ। সেদিন আবুল হোসেন ছেলের প্যান্ট এবং মাদুলি দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন। পুলিশ এ দিন হত্যাকাণ্ডে জড়িত সন্দেহে আবুল হোসেনের বাড়ির ভাড়াটিয়া সোহেল বিশ্বাসকে আটক করে। এ সময় তার ঘর থেকে রক্তমাখা দা, বঁটি, চাকু, স্কুলব্যাগ ও পলিথিন উদ্ধার করা হয়।
এ ঘটনায় নিহত শিশুর বাবা সেদিন সোহেল বিশ্বাসকে প্রধান আসামি করে তাঁর স্ত্রীসহ আটজনের বিরুদ্ধে চাটমোহর থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে অভিযোগপত্র থেকে তিনজনকে বাদ দেওয়া হয়। মামলাটি প্রথমে পাবনার নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ বিশেষ ট্রাইব্যুনালে চলে। পরে বাদীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলাটি রাজশাহী দ্রুত বিচার টাইব্যুনালে পাঠানো হয়। দ্রুত বিচার টাইব্যুনালের বিচারক যথাযথ সাক্ষ্য-প্রমাণ গ্রহণ এবং মামলার নথি পর্যালোচনা সাপেক্ষে হত্যাকাণ্ডের প্রায় চার বছর পর মামলার রায় ঘোষণা করলেন।
রায় ঘোষণার সময় মামলার পাঁচ আসামিই আদালতে উপস্থিত ছিলেন। দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন আদালতের বিশেষ সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অ্যাডভোকেট এন্তাজুল হক বাবু।
এদিকে, রায় নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন নিহত শিশু নূরের বাবা আবুল হোসেন। তিনি বলেন, ‘একই ঘরে স্বামী-স্ত্রী মিলে আমার ছেলেকে হত্যা করল। কিন্তু একজনের ফাঁসির আদেশ দেওয়া হলো, একজনকে খালাস দেওয়া হলো, এ কোন বিচার? আমি এ রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাব।’