বৈঠক শেষে বিজিপির গুলি, রোহিঙ্গা শিশু হাসপাতালে
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে রোহিঙ্গাদের লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করেছে মিয়ানমার সীমান্ত রক্ষী বাহিনী-বিজিপি। এতে আনসার উল্লাহ নামের ১১ বছরের এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার বিকেল পৌনে ৫টার দিকে ওই ঘটনার সময় রোহিঙ্গা শিশুরা শূন্য রেখায় ফুটবল খেলছিল। গুলিবিদ্ধ আনসার উল্লাহ মিয়ানমারের মংডুর রাইম্যংখালী এলাকার জমির হোসেনের ছেলে। তাকে কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের রেডক্রিসেন্ট ফিল্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আজ এমন সময়ে এই গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটে যখন কক্সবাজারে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমারের বিজিপির মধ্যে আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ে একটি বৈঠক শেষ হয় এবং সীমান্তের ওই পয়েন্টে গুলি বর্ষণ, মাইকিংসহ হুমকিমূলক আচরণ বন্ধ করার আশ্বাস দেওয়া হয় ওই বৈঠকে।
ঘুমধুম পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক ইমন চৌধুরী জানান, আজ বিকেল পৌনে ৫টার দিকে তুমব্রুর কোনাপাড়া শূন্য রেখায় রোহিঙ্গা শিশুরা ফুটবল খেলছিল। এ সময় বিপরীত পাশের একটি সীমান্ত চৌকি থেকে বিজিপির সদস্যরা গুলিবর্ষণ করে। এতে আনসার উল্লাহর পায়ে গুলি লাগে।
শূন্য রেখার ওই পয়েন্টটিতে প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস, ৪৫ মিনিট পর গুলি
আজ বেলা সাড়ে ১২টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিজিবির কক্সবাজারের আঞ্চলিক সদর দপ্তরে মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) সঙ্গে আঞ্চলিক কমান্ডার পর্যায়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠক শেষে বিজিবির কক্সবাজার আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রকিব উল্লাহ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে জানান, বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রুর কোনারপাড়া শূন্য রেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার ব্যাপারে আশ্বাস দিয়েছে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল। এ ছাড়া মিয়ানমারের রাখাইনে বিভিন্ন কারখানায় ইয়াবা উৎপাদন বন্ধ করা ও বাংলাদেশে পাচার প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না বলে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল অভিযোগ করলে মিয়ানমার এ ব্যাপারে ভূমিকা রাখবে বলে আশ্বস্ত করে। বৈঠকে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল মিয়ানমার অভ্যন্তরে তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়ায়, যেখানে প্রায় চার হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে সেখানে অস্ত্র প্রদর্শন, গুলি বর্ষণ ও হুমকিমূলক মাইকিং প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মিয়ানমার প্রতিনিধিদল তা ক্রমান্বয়ে কমিয়ে নেবে বলে আশ্বাস দেয়।
গত বছর রোহিঙ্গা সংকট শুরু হওয়ার পর এই প্রথম উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনীর মধ্যে উচ্চ পর্যায়ের এই সৌজন্য বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষে ৯ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিজিবির কক্সবাজার আঞ্চলিক কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম রকিব উল্লাহ। মিয়ানমারের পক্ষে ১২ সদস্যের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন বিজিপির মংডু আঞ্চলিক কমান্ডার পুলিশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়েন টো।
ওই বৈঠক শেষ হওয়ার ৪৫ মিনিট পর বিজিপি কোনারপাড়া শূন্য রেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ওপর গুলিবর্ষণ করে। এতে শিশু আনসার উল্লাহ গুলিবিদ্ধ হয়।
নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজের বরাত দিয়ে বান্দরবানে এনটিভির প্রতিনিধি আলাউদ্দিন শাহরিয়ার জানিয়েছেন, মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনীর গুলিতে আহত শিশুকে শরণার্থী ক্যাম্পের পাশের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় সাড়ে চার হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিয়েছে।
শূন্য রেখায় আশ্রয় কেন্দ্রের দলনেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, গুলি বর্ষণের ঘটনায় জিরো পয়েন্টে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের আতঙ্ক বিরাজ করছে।
কক্সবাজার ৩৪ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল নোমান হোসেন জানান, খেলার ছলে রোহিঙ্গা তিন শিশু মিয়ানমার সীমান্তের কাটাতারের খুব কাছে শুকনো লাকড়ি কুড়াতে যায়। এ সময় বিজিপির গুলিতে আহত হয়েছে এক রোহিঙ্গা শিশু। তবে বাংলাদেশ সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
এ বিষয়ে বান্দরবানের জেলা প্রশাসক মো. আসলাম হোসেন জানান, শূন্য রেখায় আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের তিনটি শিশু সীমানার কাঁটাতারের কাছে যায় কাঠ সংগ্রহে। এ সময় মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি শিশুদের লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে এক শিশু গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হয়। তাকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাশের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।