সাবেক আইজিপি বেনজীরের রিসোর্টে এনবিআরের অভিযান, কর ফাঁকির সত্যতা
পলাতক পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন গোপালগঞ্জের সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্কে অভিযান চালিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (গোয়েন্দা দল)। আজ মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় ঢাকা থেকে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেলের (সিআইসি) পরিচালক তারেক ইকবালের নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের একটি গোয়েন্দা দল পার্কে আসে।
গোয়েন্দা দল কর ফাঁকির সত্যতা পেয়েছে। তাই শুধু গোপালগঞ্জ নয় সাবেক আইজিপির সব স্থাপনায় অভিযান চালানো হবে। এ ব্যাপারে মামলা করা হবে বলেও জানায় এনবিআরের গোয়েন্দা দল।
বেনজীর আহমেদ ২০১৫ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত র্যাবের মহাপরিচালক এবং ২০২০ সাল থেকে ২০২২ পর্যন্ত পুলিশের মহাপরিদর্শক থাকাকালীন গোপালগঞ্জের বৈরাগীটোলা গ্রামে ৬২১ একর জমির ওপর গড়ে তোলেন সাভানা ইকো রিসোর্ট অ্যান্ড ন্যাচারাল পার্ক। রিসোর্ট ও অন্যান্য স্থাপনা মিলে এই এলাকায় এক হাজার ৪০০ বিঘা (৫২ শতাংশে বিঘা) জমি বেনজীরের দখলে রয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে হিন্দু সম্প্রদায়ের জমি দখল করে এই পার্ক করেন বেনজীর আহমেদ। গত বছরের জুনে এই পার্কটি আদালতের নির্দেশে ক্রোক করে স্থানীয় প্রশাসন। বর্তমানে পার্কটি রিসিভার নিয়োগের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে।
মূলত বেনজীর আহমেদের সম্পদ বিবরণীতে দেওয়া তথ্যের সঙ্গে মাঠের বাস্তবতা মিলিয়ে দেখতে এই অভিযান চালায় সিইসি। পার্কে ভিতরে প্রবেশ করে তদন্তদল বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন স্থাপনা ঘুরে দেখে। পরে পার্কের বিভিন্ন অফিস কক্ষের কম্পিউটারের হার্ডডিক্স ও ফাইলপত্র যাচাই-বাছাই করে তথ্য সংগ্রহ করে। এ সময় তদন্ত দলটি কর ফাঁকির সত্যতা পায়। তবে কয়েকটি বিভাগের কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার পর কী পরিমাণ কর ফাঁকি দেওয়া হয়েছে তা জানাতে পারবেন বলে সাংবাদিকদের জানান সিআইসির উপপরিচালক শাহ মো. ফজলে এলাহী।
সিআইসি সেলের উপপরিচালক শাহ মো. ফজলে এলাহী বলেন, আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে সুনির্দিষ্ট কিছু তথ্য এসেছে। সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের মালিকানাধীন সাভানা পার্কের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে। তাদের আয়কর নথি যাচাই-বাছাই করা হয়েছে। আয়কর নথিতে কী পরিমাণ তথ্য দেখানো হয়েছে এবং কী পরিমাণ তথ্য আয়কর নথিতে দেখানো হয়নি সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করেছি। যেটুকু ডকুমেন্ট হস্তগত হয়েছে তাতে বেনজীর আহমেদের এই প্রতিষ্ঠানে বিপুল অঙ্কের আয়কর ফাঁকির সত্যতা আছে। তার পরও পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমাদের আরো কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে আমাদের কিছু তথ্য সংগ্রহ করতে হবে তাহলেই আমরা বলতে পারব কী পরিমাণ আয়কর ফাঁকির ঘটনা ঘটেছে।
আমাদের কাছে কর ফাঁকির যথেষ্ট প্রমাণ আছে। এখানে বিভিন্ন জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে কী পরিমান অর্থ ব্যয় হয়েছে—এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের সঙ্গে কথা বলে আমরা সেগুলো নেব এবং যাচাই-বাছাই করে বলতে পারব যে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছে। শুধু গোপালগঞ্জ নয় সাবেক আইজিপির দেশের সব স্থাপনায় অভিযান চালানো হবে। কর ফাঁকির তথ্য কর বিভাগকে জানানো হবে। সেটার উপর ভিত্তি করে মামলাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান সিআইসির এ কর্মকর্তা।
এ অভিযানে সিআইসি উপপরিচালক মো. জিল্লুর রহমান ও শরীফ মো. ফয়সালসহ অন্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।