‘সুজির রং কেন এমন? বলেই মারধর’
“প্রতিদিনের মতো সুজি রান্না করেছিলাম। সুজির রংটা অন্যদিনের মতো ছিল না। ‘কেন এ রকম হলো?’ বলেই তাঁরা মারতে শুরু করেন।”
১১ বছরের শিশু হ্যাপি এ কথাগুলো বলছিল। হ্যাপি যাঁদের বিরুদ্ধে বলছিল তাঁদের একজন জাতীয় দলের ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেন। বাংলাদেশের হয়ে ৩৮টি টেস্ট ও ৫১টি ওয়ানডে খেলেছেন তিনি। হ্যাপির অভিযোগ, শাহাদাত আর তাঁর স্ত্রী নিত্য শাহাদাত নিয়মিতই নির্যাতন করতেন তার ওপর।
গতকাল রোববার থেকে হ্যাপি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে (ওসিসি) চিকিৎসাধীন। প্রহরার কারণে ওসিসিতে প্রবেশ করা বেশ কষ্টকর। অপেক্ষা করতে হয়েছে বেশ খানিকটা সময়। দুপুর দেড়টার দিকে ওসিসি থেকে বের হয়ে আসে হ্যাপি।
হ্যাপি হুইল চেয়ারে বসা ছিল। চোখ ফুলে আছে এখনো। শীর্ণ শরীরের বিভিন্ন অংশে নির্যাতনের চিহ্ন আছে। হুইল চেয়ারে বসেই কথা বলল হ্যাপি। মানুষটা অনেক ছোট। নির্যাতনে শরীর আরো ভেঙে গেছে। গলার আওয়াজও অনেক ক্ষীণ। আর এ কারণেই হয়তো বাক্যগুলো ছিল ছোট ছোট।
শুধু কি গতকালই মারধর করেছে? জবাবে হ্যাপি বলে, ‘না। প্রতিদিনই মারত। যেকোনো কিছু হলেই মারত।’ শাহাদাতও মারতেন? প্রশ্নে হ্যাপি বলে, ‘হ্যাঁ, উনিও মারতেন। ভয় লাগত খুব।’
কেন মারধর করত? হ্যাপি বলে, ‘অনেক সময় কোনো কারণ ছাড়াই মারত। আবার অনেক সময় ছোট ভুলের কারণে মারধর করত।’ হ্যাপি আরো বলে, ‘হাত দিয়ে অথবা হাতের কাছে যা থাকত তাই দিয়ে মারধর করত।’
গতকাল কেন এত মারধর? হ্যাপি বলে, ‘আমাকে সুজি রান্না করতে বলে। আমি সুজি রান্না করি। সুজির রং অন্যদিনের থেকে একটু ভিন্ন হওয়ায় সন্দেহ করে তারা দুইজনেই মারতে শুরু করে।’
হ্যাপি বলে, ‘সুযোগ পেয়ে দরজা খুলে পালিয়ে যাই।’
গতকাল রোববার শরীরে ও চোখে আঘাতের চিহ্নসহ ১১ বছর বয়সী হ্যাপিকে উদ্ধার করেন মিরপুরের কালশী রোডের কয়েকজন বাসিন্দা।
গতকাল রাতেই শাহাদাত হোসেন ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে গৃহকর্মী নির্যাতনের অভিযোগে মামলা করা হয়। মিরপুরের বাসিন্দা সাংবাদিক খন্দকার মোজাম্মেল হক বাদী হয়ে মিরপুর মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলাটি করেন।
এ বিষয়ে কথা বলতে ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনের সঙ্গে কথা বলার জন্য যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।