হিন্দুদের আ.লীগ থেকে সতর্ক থাকতে বললেন খালেদা জিয়া
হিন্দুদের আওয়ামী লীগ থেকে সতর্ক থাকার কথা বললেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। তিনি বলেছেন, ‘আওয়ামী লীগ সাপের থেকে কোনো অংশে কম নয়। তাই আপনারা ওঝা হয়ে আর ঝাড়তে যাবেন না। সাপ যাতে দংশন করতে না পারে সেজন্য আপনারা সতর্ক থেকে সেভাবে কাজ করেন।’
শ্রীকৃষ্ণের শুভ জন্মাষ্টমী উপলক্ষে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে শুভেচ্ছা বিনিময় করেছেন খালেদা জিয়া। আজ সোমবার সন্ধ্যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে এই শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের আয়োজনে অনুষ্ঠানে হিন্দু সম্প্রদায়ের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তারা বিএনপি চেয়ারপারসনের কাছে হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতনের কথা তুলে ধরেন। সরকারের মদদে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর এবং সম্পত্তি দখল হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা। অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিএনপি নেতা গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, গৌতম চক্রবর্তী, নিতাই রায় চৌধুরীসহ দলের জ্যেষ্ঠ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
খালেদা জিয়া বলেন, ‘সংখ্যালঘু কথাটার ব্যবহার আমরা করি না। কেন করব সংখ্যালঘু? সংখ্যায় কম হলেই সংখ্যালঘু হয়ে যাবে? আমি যে এ দেশের মাটিতে জন্মগ্রহণ করেছি- এ মাটির ওপর যে আমার অধিকার আছে- সেটাই তো আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। কাজেই আমি বাংলাদেশি এটাই আমার সবচেয়ে বড় পরিচয়। সেজন্যই আমি সকলকে সমান চোখে দেখি।’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘তারা (আওয়ামী লীগ) লোক দেখানোর মতো বলে, আমরা (আওয়ামী লীগ)ধর্মনিরপেক্ষ। কিন্তু ধর্মনিরপেক্ষ বলে সকল ধর্মের ওপর আঘাত করে তারা। আপনারাই বলেন, কোন ধর্মের মানুষ তাদের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে? কোনো ধর্মের মানুষ পায়নি। আমরা বলি আমরা সকল ধর্মের ধর্মীয় স্বাধীনতাতে বিশ্বাস করি। সমান অধিকারে বিশ্বাস করি। আপনাদের ধর্মকর্ম করার অধিকার আছে। সে স্বাধীনতায় আমরা বিশ্বাস করি। আপনাদের পুঁজো অনুষ্ঠানের বিএনপির নেতারা যান শুভেচ্ছা বিনিময় করেন।’
মন্দিরভিত্তিক পাঠাগার বিএনপির সময়ে চালু হয়েছে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, ‘বিএনপি সাম্প্রদায়িক দল নয়। বিএনপিতে মুসলমানের সংখ্যা বেশি থাকতে পারে কিন্তু বিএনপি সকলের সমান অধিকারে বিশ্বাস করে। আমরা যদি বিশ্বাস না করতাম তাহলে তো দলের স্থায়ী কমিটিতে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে রাখতাম না। গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে তো আমি আজকে থেকে দেখছি না। আমি যখন থেকে রাজনীতিতে এসেছি, সে জিয়াউর রহমানের হাত ধরে রাজনীতি শুরু করেছে। আমি যখন থেকে রাজনীতিতে এসেছি তাকে আমি দেখে এসেছি। সে কাজ করেছে অনেক। যুবদলের সেক্রেটারি ছিল। আমি তাঁকে বিশ্বাস করি।’
খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদেরকে এখন জিজ্ঞাসা করতে চাই, কেরানীগঞ্জেতো অনেক হিন্দু আছে তাহলে গয়েশ্বর ফেল করলো কেন? গয়েশ্বর তখন এমপি হলে আপনাদের জন্য কথা বলতে পারতো সংসদে। নিতাই রায় মাগুরায় মনোনয়ন পেয়েছিল আপনারা তো তাকে ভোট দেননি। ভোট দিয়ে জিতিয়ে আনতে পারেননি।’
বিএনপির সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের দূরত্ব কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনাদের মাঝ থেকেও এ জিনিসটা আসতে হবে। এটা কখনো এক পাশের হতে পারে না। আমরা শুধু করবো আপনি আমার কাছে প্রত্যাশা করবেন কিন্তু অন্য পাশ থেকে সেভাবে সমর্থন বা সাড়াটা পাবো না তাহলে কিন্তু জিনিসটা এগোবে না।’
খালেদা জিয়া আরো বলেন, ‘আমাদের মধ্যে যে দূরত্বটা, ভুল বোঝাবোঝি, বিশ্বাস অবিশ্বাসের ব্যাপার হয়েছে এটাকে দূর করতে হবে প্রথমে। এটা দূর হলে, এটা যদি কমে আসে দেখবেন আর কোনো সমস্যা হবে না। আজকে আপনাদের কাছে পরিষ্কার হওয়া উচিত এ আওয়ামী লীগ থাকলে হিন্দুরা বেশি দুর্ভোগে পড়ে।’ খালেদা জিয়া বলেন, ‘আওয়ামী লীগ উপরে এক কথা বলবে আর ভেতরে অত্যাচার নির্যাতন করে বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে, মেয়েদের ওপর অত্যাচার করে। এ অবস্থায় হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ এখানে থাকতে ভয় পায়। স্বাধীনতার পর থেকেই আওয়ামী লীগ এ কাজ করেছে এবং বেশির ভাগ কাজ সেই সময় করেছে, দেখা যাবে শেখ হাসিনার আত্মীয়স্বজনরাই আপনাদের জায়গা-জমি দখল করেছে। তিনি বলেন, মন্দির ভেঙে, মূর্তি ভেঙে ওই জায়গাও দখল করে ওখানে তারা নিজেদের প্রতিষ্ঠান বানাবে এ রকম তাদের অভিব্যক্তি।’