ভোলার মেঘনার পারে কান্নার রোল
ভোলা সদর উপজেলার ইলিশা ও রাজাপুর ইউনিয়নসহ জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা ভাঙছেই। ঘরবাড়ি আর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান সরিয়ে নেওয়ার আগেই মেঘনা নদীর গর্ভে চলে যাচ্ছে চোখের সামনে। গত ২০ দিনে মেঘনার ভাঙনের কবলে পড়ে অন্তত এক হাজার ২০০ পরিবার গৃহহীন হয়েছে।
urgentPhoto
নদী ভাঙন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) চেষ্টা করলেও তারা অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় লোকজন। সব মিলিয়ে চরম ক্ষোভ ও হতাশ হয়ে আছেন ভাঙনকবলিত লোকজন।
ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ী আলামিন বলেন, ‘কী করে আপনাকে বুঝাবো- সকালে দোকান খোলার মুহূর্তেই দেখি, মেঘনা নদীর পাড়ে হঠাৎ করে ফাটল। কিছু বুঝে উঠার আগেই বিলীন হতে শুরু করে একে একে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। মাত্র ২০ মিনিটে ইলিশা ফেরিঘাটসহ অন্তত ২০টি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মেঘনার পেটে চলে যায়। খবর পেয়ে এসে ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর আহাজারি করা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।’
ফেরিঘাটের বড় ব্যবসায়ী মো. কালু মিয়া বলেন, ‘ভাঙনের খবর পেয়ে বাড়ি থেকে এসে দেখলাম, মেঘনা নদী আমার দোকানসহ সব নিয়ে যাচ্ছে। পানির এতটাই স্রোত যে মুহূর্তের মধ্যেই তলিয়ে যাচ্ছে। চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না।’
একই অবস্থা আরেক বড় ব্যবসায়ী মো. জামাল উদ্দিনের। কথা বলতে পারছিলেন না কান্নার কারণে। একপর্যায়ে বলেন, কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে তিনি কয়েক লাখ টাকার মালামাল তুলেছিলেন দোকানে। বুঝতে পারেননি মুহূর্তে সব শেষ হয়ে যাবে। এখন পথে বসা ছাড়া আর কিছু করার নেই তাঁর।
এদিকে মেঘনা হয়ে ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ রাজাপুর গ্রামের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে ওই গ্রামের মরহুম আলী আহমদ মিয়ার স্ত্রী ৮৫ বছরের বৃদ্ধ নূর জাহান বেগমকে। পানির খড়স্রোত আর মেঘনার দিকে অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে ছিলেন। কী যেন ভাবছেন। তাঁর পাশেই মাটি ভেঙে পড়লেও খেয়াল নেই সেদিকে। কাছে গিয়ে জানতে চাইলেই কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, ওই খানে ঘর-দুয়ার জমি ছিল। সব নিয়ে গেছে। এখন কোথায় থাকবেন। আর কোথায় যাবেন। স্বামীর কবরটা পর্যন্ত নদী নিয়ে গেছে।
একই অবস্থা দেখা গেল একই গ্রামের রহিজল হকের স্ত্রী ৭০ বছরের বৃদ্ধ বিলকিস বেগমের। ঘরবাড়ি সব নিয়ে যাওয়ায় শেষ পর্যন্ত জমির দলিল নিয়ে নাড়াচাড়া করছেন মেয়েকে নিয়ে। জানতে চাইলে বললেন, ‘কানি (একর) কানিতে জমি ছিল, সব নদী নিয়ে গেছে। পোলাপান নিয়ে কোথায় থাকব সেই চিন্তা করি। জমি নেই। তার পরও দলিল নিয়ে যাচ্ছি। যাতে বুকের সাথে আগলে রেখে ভাবতে পারব অন্তত এক সময় অনেক জমি ছিল আমাদের।’
এদিকে মেঘনার ভাঙন রোধে কাজের অনিয়ম নিয়ে এলাকাবাসীর রয়েছে চরম ক্ষোভ। পাউবো নদীতে যা ফেলছে তা মাছের খাবারের মতো পানিতে ভেসে যাচ্ছে বলে জানালেন মো. আবুল কালাম। বললেন, ‘যেখানে প্রতিদিন শতাধিক টিউব ব্যাগ ডাম্পিং করার কথা সেখানে ডাম্পিং করছে মাত্র ১০ থেকে ২০টি করে। এ ছাড়া মাঝেমধ্যে কাজ বন্ধ রাখে।’
পাউবো ও ঠিকাদারের বিরুদ্ধে এই ব্যক্তিসহ পুরো এলাকাবাসীর ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তাদের মতে, ভাঙনের কারণে গত ২০ দিনে গৃহহারা হয়েছে এক হাজার থেকে এক হাজার ২০০ পরিবার।
এসব অভিযোগ স্বীকার করে পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল হেকিম বলেন, সময় মতো বালু না পাওয়ায় কাজ বন্ধ ছিল। এ পর্যন্ত এক লাখ ২৫ হাজারের বেশি জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হয়েছে। ভাঙন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত ডাম্পিংয়ের কাজ অব্যাহত থাকবে।