একে অপরকে দায়ী করল বিএনপি-আ.লীগ
রাজশাহীতে বিএনপির নির্বাচনী গণসংযোগের সময় ককটেল হামলায় আওয়ামী লীগকে দায়ী করেছে বিএনপি। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেছেন, ‘নিজেদের ভরাডুবি বুঝতে পেরে রাজশাহীর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতেই প্রতিপক্ষ এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।’
অন্যদিকে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ককটেল হামলার ঘটনাকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দাবি করেছেন। এ ঘটনার পর তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
ঘটনার পর মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন খায়রুজ্জামান লিটন।
আজ মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে নগরীর সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর বক্তব্য দেওয়ার সময় ওই হামলার ঘটনা ঘটে।
এতে এক সংবাদকর্মীসহ পাঁচজন আহত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে রাজশাহী জেলা ছাত্রদল নগরীর সাগরপাড়া বটতলা মোড়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে গণসংযোগ করতে জমায়েত হয়। এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা হাবিবুর রহমান হাবিব, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু, সহসাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ শাহীন শওকত, জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, জেলা ছাত্রদলের সভাপতি রেজাউল করিম টুটুল অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন। সমবেত নেতাকর্মীদের উদ্দেশে হ্যান্ডমাইকে রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বক্তব্য দেওয়া শুরু করার পর পরই বিকট শব্দে পরপর তিনটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, চারটি মোটরসাইকেলে মুখে রুমাল বাঁধা সশস্ত্র আট যুবক এসে তিনটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে বটতলা মোড়ের পূর্ব দিকের রাস্তা ঢুকে সাগরপাড়া জামে মসজিদের পাশের রাস্তা দিয়ে পালিয়ে যায়।
ককটেল হামলায় বাংলাভিশনের স্টাফ রিপোর্টার পরিতোষ চৌধুরী আদিত্য ও ঘটনাস্থলের পাশে কর্মকারের দোকান মালিক স্বপন কর্মকারের পায়ে স্প্রিন্টার বিদ্ধ হয়। তাৎক্ষণিকভাবে তাঁদের বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদারের গাড়িতে করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়। ঘটনাস্থলে গিয়ে রাস্তায় ককটেল বিস্ফোরণের চিহ্ন দেখা গেছে। পাশে স্বপন কর্মকারের দোকানে বিস্ফোরিত ককটেলের খোসা পড়ে থাকতে দেখা গেছে। খবর পেয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান মিনু, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার আহতদের হাসপাতালে দেখতে যান। এ সময় নিজের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে বুলবুল বলেন, ‘প্রকাশ্য দিবালোকে কারা অস্ত্র নিয়ে মোটরসাইকেলে এসে বোমা হামলা করতে পারে, সেটা তো সবার কাছেই পরিষ্কার।’
‘বিএনপির গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগের হামলা’
সরকারদলীয় প্রার্থীর লোকজন ককটেল হামলার সাথে জড়িত দাবি করে বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বলেন, ‘নিজেদের ভরাডুবি বুঝতে পেরে রাজশাহীর শান্তিপূর্ণ নির্বাচনী পরিবেশ নষ্ট করতেই প্রতিপক্ষ এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘সকালে জেলা ছাত্রদল আয়োজিত গণসংযোগ কর্মসূচি আমরা শান্তিপূর্ণভাবে শুরু করেছিলাম। গত কয়েকদিন থেকে রাজশাহীর নির্বাচনী পরিবেশে একটা আতঙ্ক সৃষ্টি করা হয়েছিল। নগরবাসীর সেই আতঙ্ক দূর করার জন্য এবং তাদের রাস্তায় নামানোর জন্য বিশেষ করে নির্বাচনে মানুষ যাতে স্বতঃস্ফুর্তভাবে অংশ নিতে পারে, আমরা দুই তিন থেকে সেই চেষ্টা করছি। সেই মুহূর্তে আজকের শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচিতে সুপরিকল্পিতভাবে হামলা চালিয়ে আগামী ৩০ তারিখের নির্বাচন পণ্ড করার জন্য তারা চেষ্টা চালিয়েছে।’
দুলু বলেন, ‘এই ঘটনার মধ্য দিয়ে তারা জানান দিয়েছে আগামী ৩০ জুলাই রাজশাহীতে কি ধরণের নির্বাচন হবে।’ দুলু বলেন, ‘রাজশাহীর মাটি বিএনপির ঘাঁটি। এখানকার মানুষের ধানের শীষ ছাড়া ভোট দেওয়ার আর কোনো জায়গা নেই।’ বিএনপির গণজোয়ার দেখে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মীরা ককটেল হামলা চালিয়েছে দাবি করে দুলু বলেন, ‘এখন ভাবার সময় হয়েছে আগামী ৩০ জুলাইয়ের নির্বাচনে আমরা থাকব কি না।’
‘বিএনপি নিজেরাই তাদের পথসভায় হামলা চালায়’
দুপুরে মহানগর আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ককটেল হামলার ঘটনাকে বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দল দাবি করেছেন। এ ঘটনার পর তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়েও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, ‘রাসিক নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে এবং নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার পথ খুঁজছে বিএনপি। আর এজন্য বিএনপি নিজেরাই তাদের নির্বাচনী প্রচারণার পথসভায় বোমা হামলা চালিয়েছে। আর এর দোষ চাপাচ্ছে আওয়ামী লীগের ওপর।’
সংবাদ সম্মেলনে খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু রাজশাহীতে আসার পরে আমরা লক্ষ করলাম, একটা প্রচার সারা শহরে ছড়িয়ে পড়েছে যে, দুলু শহরের প্রান্তসীমায় একটি হোটেলে অবস্থান নিয়েছেন। সেখানে মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হচ্ছে বা হবে। এটি জানাজানি হয়ে যাওয়ার কারণে স্থান পরিত্যাগ করে তিনি পর্যটন মোটেলে অবস্থান গ্রহণ করেন। এই কালো টাকা নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য এসেছে এবং এই টাকা এক হাত থেকে আরেক হাতে গেছে, এ বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই।’
খায়রুজ্জামান লিটন আরো বলেন, ‘বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে ৮টা পর্যন্ত পর্যটন মোটেল থেকে লন্ডনে তারেক রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন বলে আমরা জানতে পেরেছি। আমার কাছে এখন মনে হয়, ওইখান থেকেই হয়তো নির্দেশ এসেছে, এই নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য ও আমাদের ঘাড়ে দোষ চাপাতে একটা ঘটনা ঘটাতে হবে। তারই অংশ হিসেবে আজকে শান্তির্পূণ পরিবেশে দুই-তিনটা ককটেল বিস্ফোরিত হয়।’
সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য এস এম কামাল হোসেন বলেন, ‘বিএনপির অন্তর্কলহ ও অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে তাদের আজকের পথসভায়। বিএনপির এখানে কে কোন গ্রুপ তা, আপনারা সবাই জানেন। আমাদের কাছে খবর আছে, দুর্নীতিবাজদের পৃষ্ঠপোষক তারেক রহমানের কাছ থেকে রাজশাহীর একজন নেতা দেখা করে এসেছেন। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য এবং নির্বাচন থেকে সরে যাওয়ার জন্যে তারা পথ খুঁজছে।’
মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত বোমা হামলার ঘটনায় থানায় কোনো মামলা হয়নি। রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার ইফতে খায়ের আলম জানান, মামলা না হলেও পুলিশ বিষয়টি নিয়ে অনুসন্ধান শুরু করেছে। হামলার সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার চেষ্টা করছে পুলিশ। বোমা হামলার ঘটনার পর র্যাবসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে।