রাজশাহীতে ককটেল হামলায় বিএনপি জড়িত: পুলিশ কমিশনার
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে বিএনপির পথসভায় ককটেল হামলার সঙ্গে বিএনপিই জড়িত বলে দাবি করেছেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তার।
আজ রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন হাফিজ আক্তার।
পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, ‘ঘটনার পর রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টু ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর ফোনালাপে বিষয়টি স্পষ্ট হয়েছে।’
দুই নেতার ফোনালাপের অডিও রেকর্ড হাতে পাওয়ার পর গতকাল শনিবার রাতে নিজ বাসা থেকে মতিউর রহমান মন্টুকে আটক করেছে পুলিশ।
গত ১৭ জুলাই বিএনপির মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুলের পক্ষে নগরীর সাগরপাড়া এলাকায় ছাত্রদল আয়োজিত পথসভায় বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু বক্তব্য শুরুর পর পরই তিনটি ককটেল হামলা হয়। চারটি মোটরসাইকেলে গিয়ে ককটেলগুলোর বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় বাংলাভিশনের সাংবাদিক পরিতোষ চৌধুরী আদিত্যসহ দুইজন আহত হন।
ওই হামলার জন্য আওয়ামী লীগকে দায়ী করে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দিয়েছে বিএনপি। তবে ঘটনার দিনই সংবাদ সম্মেলন করে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে বিএনপি নিজেরাই এ কাণ্ড ঘটিয়েছে।’ লিটন সেদিন দাবি করেন, ঘটনার আগের দিন লন্ডনে অবস্থানরত তারেক রহমানের সঙ্গে রাজশাহী পর্যটন মোটেলে অবস্থানরত বিএনপি নেতা রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলুর দীর্ঘ সময় কথা হয়। তারেকের পরিকল্পনায় দুলু এই বোমা হামলার ঘটনা ঘটান। এ সময় লিটন তাঁর গ্রেপ্তারও দাবি করেন।
বিএনপির পথসভায় ককটেল হামলার ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাত আটজনকে আসামি করে বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে বোয়ালিয়া মডেল থানায় একটি মামলা করে। ওইদিন পুলিশ জানায়, মোটরসাইকেলে যে আটজন গিয়ে সরাসরি হামলায় অংশ নেন, তাদেরকেই আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে হিমেল নামে এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়। আদালতে তার পাঁচদিনের রিমান্ডেরও আবেদন করা হয়েছে। তবে আবেদনের শুনানি হয়নি।
পুলিশ জানায়, গ্রেপ্তারের পর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হিমেল বিএনপির নির্বাচনী পথসভায় ককটেল হামলার বিষয়ে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য দেয়। এর ভিত্তিতে শনিবার রাতে নিজ বাড়ি থেকে জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুকে আটক করে পুলিশ। এরপর রোববার দুপুরে পুলিশ কমিশনার জরুরি সংবাদ করে মন্টুকে আটকের কারণ ব্যাখ্যা করেন।
এর মধ্যে ‘আগামীর রাজশাহী’ নামে একটি ফেসবুক পেজে রাজশাহীতে ককটেল হামলায় বিষয়ে একটি ফোনালাপের কথোপকথনের রেকর্ড প্রকাশ পায়। পুলিশ দাবি করছে, হামলা চালানোর পর এই কথোপকথন বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু ও রাজশাহী জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মন্টুর মধ্যে হয়েছে। এতে যাকে মন্টু নামে দাবি করা হচ্ছে তিনি টিপুকে বলেছেন, ‘ভাইয়ার (তারেক রহমান) কাছে ক্রেডিট নেওয়ার জন্য দুইজনকে দিয়ে এই বোমা হামলা চালানো হয়েছে।’
সংবাদ সম্মেলন পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার জানান, বিএনপির নির্বাচনী পথসভায় বোমা হামলাটি যে তাদের লোকজনই করেছিল, সেই ঘটনাটি মন্টু মুঠোফোনে দলের সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুকে জানিয়েছেন। শনিবার রাতে আটকের পরম মন্টু পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মুঠোফোনে কথোপকথনের কথা স্বীকারও করেছেন। দলের নেতাকর্মীরাই ককটেল হামলার সঙ্গে জড়িত বলে তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন।
পুলিশ কমিশনার জানান, ককটেল হামলার ঘটনার দুইদিন পর তাইফুল ইসলাম টিপুর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন মতিউর রহমান মন্টু। শনিবার রাতে তাদের সেই কথোপকথনের অডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়ে। ওই অডিওতে শোনা যায়, বিএনপি নেতা মন্টু কেন্দ্রীয় নেতা টিপুকে জানাচ্ছেন, ভাইয়ার (তারেক রহমান) কাছে ক্রেডিট নেওয়ার জন্য এই হামলা চালানো হয়েছে, যাতে জড়িত তাঁর দলের লোকজনই।
ফোনালাপে বিএনপি নেতা মন্টু ও টিপুর কণ্ঠ কীভাবে নিশ্চিত হওয়া গেল, এমন প্রশ্নের জবাবে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ কমিশনার হাফিজ আক্তার বলেন, ‘মন্টু নিজেই স্বীকার করেছেন যে কথোকপথনটি তাঁদের। তাছাড়া এই ঘটনায় দলের নেতাকর্মীরাই জড়িত বলেও তিনি পুলিশকে জানিয়েছেন। মন্টু পরিচিত মানুষ। কণ্ঠটা আপনারা (সাংবাদিকরা) নিজেরাও বুঝতে পারছেন নিশ্চয়।’
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘মন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। বোমা হামলার পরিকল্পনাকারী, মদদদাতা এবং যারা ঘটনাস্থলে বিস্ফোরণ ঘটিয়েছেন, তাঁদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। মামলার তদন্ত কাজও চলবে, আসামিরাও গ্রেপ্তার হবে।’
পুলিশ কমিশনার বলেন, ‘বিএনপি নেতা মন্টুকে ঘটনার পর দায়ের করা বিস্ফোরকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে দায়ের করা মামলাটিতেই গ্রেপ্তার দেখানো হবে। আরও জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রয়োজনে রিমান্ডেরও আবেদন করা হবে।’
মতিউর রহমান মন্টু পুলিশের হাতে আটক থাকায় অডিও রেকর্ডের বিষয়ে তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি। তবে তাইফুল ইসলাম টিপু বলেন, ‘এই অডিওর ব্যাপারে আপনার কাছেই প্রথম শুনলাম। আগে শুনিনি। বিষয়টা আমি দেখছি।’
এই হামলার বিষয়ে মন্টুর সঙ্গে কথা হয়েছে কি না, জানতে চাইলে টিপু বলেন, ‘ভাই, আমি বিএনপির সহদপ্তর সম্পাদক। কত মানুষের সাথেই তো কত কথা হইতেছে। এখন কারটা কোনটা আর কোনটা কীভাবে কারা সেট করসে সেটা তো জানি না। মানুষের কথা তো একজন আরেকজনের সঙ্গে সেট করতেছে। এইটা কেমনে আমি বলব? এই রকম কোনো কথা আমি বলছি বলে মনে নাই।’