একুশ আগস্টের মতো ঘটনা আর যেন না ঘটে
একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলার মতো ঘটনা এ দেশের মাটি যত দিন থাকে তত দিন যেন আর না ঘটে। এ মামলার যুক্তিতর্ক পেশ করার ১০২তম দিনে আসামি বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিণ্টুর পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশকালে আইনজীবী এস এম শাহজাহান এ কথা বলেন।
রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে আওয়ামী লীগ আয়োজিত সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ বর্বরোচিত ও নৃশংস গ্রেনেড হামলা মামলায় আসামীপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
আজ সোমবার আইনজীবী এস এম শাহজাহান যুক্তিতর্কে তার মক্কেল পিন্টুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষে আনীত অভিযোগ সাক্ষ্য দ্বারা সুনির্দিষ্টভাবে প্রমাণিত হয়নি বলে দাবি করেন। তিনি যুক্তিতর্কে বিভিন্ন নজির উপস্থাপন করেন। লিগ্যাল এভিড্যান্স থাকলে তাঁর আসামির সাজা হবে, লিগ্যাল এভিড্যান্স না থাকলে তাঁর আসামি খালাস পাবে দাবি করে বক্তব্য পেশ শেষ করেন আইনজীবী শাহজাহান।
রাজধানীর নাজিমউদ্দিন রোডে পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় হত্যা ও বিস্ফোরক আইনে দায়ের করা দুই মামলার একই সঙ্গে বিচার চলছে। মামলায় এ পর্যন্ত ৪৩ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শেষ হয়েছে।
আসামি আবদুস সালাম পিণ্টুর পক্ষে আজ পঞ্চম দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেন তার আইনজীবী। এর আগে চার কার্যদিবস আইনজীবী রফিকুল ইসলাম যুক্তিতর্ক পেশ করেন। ১৮ জুলাই এ আসামির পক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ শুরু হয়। এ যুক্তিতর্ক পেশ অসমাপ্ত রয়েছে। মামলার পরবর্তী তারিখ ধার্য রয়েছে আগামীকাল ৩১ জুলাই এবং পরের দিন ১ আগস্ট।
আজ আদালত আসামি সালাম পিন্টুর আইনজীবী রফিকুল ইসলামকে এ মামলার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক বিষয়ে যুক্তিতর্ক পেশ কাল শেষ করতে বলেছে। এরপর আসামি পিন্টুকে বক্তব্য রাখার জন্য সুযোগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া আসামি লুৎফুজ্জামান বাবরের আইনজীবীকে যুক্তিতর্ক পেশ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে।
এ মামলার রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান আজ সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, রাষ্ট্রপক্ষ আশা করছে আগস্ট মাসের মধ্যে এ মামলার বিচার ও নিষ্পত্তি হবে। তিনি বলেন, আসামিপক্ষ কালক্ষেপণে সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন। তিনি বলেন, আসামিপক্ষ এ মামলায় আইনে প্রদত্ত সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করছেন। তবে আসামিপক্ষ ন্যায়বিচারকে বিলম্বিত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
এ মামলার প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য আইনজীবী আকরাম উদ্দিন শ্যামল বাসসকে জানান, পৃথক মামলায় মোট আসামির সংখ্যা ৫২ জন। এর মধ্যে তিনজন আসামির অন্য মামলায় মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় তাদের মামলা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এখন ৪৯ আসামির বিচার চলছে। ১৮ জন এখনো পলাতক। আসামিদের মধ্যে ৪৫ জনের যুক্তিতর্ক পেশ হবে। এরই মধ্যে ৪৩ জনের যুক্তিতর্ক শেষ হয়েছে।
প্রসিকিউশনের অন্যতম সদস্য অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা জানান, মামলায় পলাতক আসামিদের মধ্যে যাদের বিরুদ্ধে আইনে সর্বোচ্চ সাজার ধারায় অভিযোগ রয়েছে তাদের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত (স্টেট ডিফেন্স) আইনজীবী ছিল। পলাতক চারজন আসামির বিষয়ে রাষ্ট্র আইনজীবী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। তারা হচ্ছেন- সাবেক সেনা কর্মকর্তা এ টি এম আমিন ও সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান খান ও খান সাঈদ হাসান। অ্যাডভোকেট ফারহানা রেজা জানান, এ চার আসামির আইন অনুযায়ী সর্বোচ্চ সাজা তথা মৃত্যুদণ্ড হতে পারে এমন কোনো ধারায় অভিযোগ গঠন হয়নি। তাই তাঁরা ‘স্টেট ডিফেন্স বা রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী’ সুবিধা পাচ্ছেন না।
এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে ২২৫ জন সাক্ষী আদালতে সাক্ষ্য দেয়। আসামিপক্ষে সাক্ষীদের জেরা করেছে। গত বছরের ৩০ মে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দের জেরা শেষের মধ্য দিয়ে সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ হয়।
২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামি ৫২ জন। মামলার আসামি বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর, বিএনপি নেতা সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুসহ ২৩ জন কারাগারে রয়েছে। অন্য দিকে তারেক রহমান, বিএনপি নেতা হারিছ চৌধুরী, শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, মেজর জেনারেল (এলপিআর) এ টি এম আমিন, লে. কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দারসহ ১৮ জন এখনো পলাতক। জামিনে থাকা আসামিরা হলেন- খালেদা জিয়ার ভাগ্নে লে. কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, সাবেক আইজিপি মো. আশরাফুল হুদা, শহুদুল হক ও খোদা বক্স চৌধুরী এবং মামলাটির তিন তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির সাবেক বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিন, সিআইডির সিনিয়র এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমান, এএসপি আব্দুর রশীদ, সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার আরিফুল ইসলাম।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতাকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পত্নী আইভি রহমান।
তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচণ্ড শব্দে তাঁর শ্রবণশক্তি আঘাতপ্রাপ্ত হয়।