রোববার থেকে ক্লাস বর্জন, রাজপথে অবস্থান
বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে টিউশন ফির ওপর আরোপিত মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা নতুন করে কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন। কর্মসূচি অনুযায়ী, আগামীকাল রোববার থেকে ভ্যাট প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত অনির্দিষ্টকালের জন্য সারা দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিকেল কলেজে ক্লাস বর্জন করবেন শিক্ষার্থীরা। পাশাপাশি রোববার সকাল ৯টা থেকে আবারও রাজপথে অবস্থান নেবেন তাঁরা।
আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর যমুনা ফিউচার পার্কের ফুড কোর্টে এক সংবাদ সম্মেলনে পাঁচ দফা দাবিতে এসব কর্মসূচি ঘোষণা করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
সন্ধ্যায় এ-সংক্রান্ত একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিও পাঠানো হয়। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে মাদানি শাহ, আসিফ ইকবাল, কবির আহমেদ, জেনিফার হক, শাহরিয়ারের নামে এ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিটি পাঠানো হয়। বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী এনটিভি অনলাইনকে কর্মসূচির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করা হয়। আন্দোলনকারীদের দাবি, এতে বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট, নর্থ সাউথ, ইনডিপেনডেন্ট, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশ (এআইইউ-বি), ব্র্যাক, ড্যাফোডিল, স্ট্যামফোর্ডসহ আরো কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘এই আন্দোলন কেবলমাত্র সরকারের ভ্যাটবিষয়ক সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই সরকারের বিরুদ্ধে না। বরং আমরা সরকারের সঙ্গে হাত মিলিয়ে ক্লাসে ফিরে গিয়ে দেশকে উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাই। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির এই অহিংস আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার সকল অপচেষ্টা থেকে সবাইকে বিরত থাকার অনুরোধ করছি। শিক্ষার্থীদের এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে অনুরোধ করছি।’
এতে আরো বলা হয়, ‘সরকার শিক্ষার্থীদের ন্যায্য দাবির প্রতি কোনো কর্ণপাত করেনি। বারবার শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী এবং শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ জানানোর পরও কোনো ফলাফল না আসায় আজ আমরা ক্লাস ছেড়ে রাজপথে নামতে বাধ্য হয়েছি।’
শিক্ষার্থীদের পাঁচ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- আরোপিত ভ্যাট সম্পূর্ণভাবে প্রত্যাহার, ভবিষ্যতে শিক্ষাক্ষেত্রে কোনো কর আরোপ করা যাবে না, ইস্ট ওয়েস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার বিচার, ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ওপর চিহ্নিত হামলাকারীদের বিচার এবং অর্থমন্ত্রীকে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাইতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আন্দোলনকারী কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগ, আন্দোলন থেকে সরে আসার জন্য তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
চলতি অর্থবছরের বাজেটে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিউশন ফির ওপর সাড়ে সাত শতাংশ ভ্যাট নির্ধারণ করে সরকার। শুরু থেকেই এ ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। গত বুধবার (৯ সেপ্টেম্বর) বেসরকারি ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলনে নামে। এ সময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে রাজধানীর আফতাবনগর ও রামপুরা এলাকায় পুলিশের পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পুলিশের লাঠিপেটা ও রাবার বুলেটে অন্তত ৩০ শিক্ষার্থী আহত হয়।
এর পরদিন বৃহস্পতিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে রাজপথ অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এতে যানজট সৃষ্টি হয়ে গোটা ঢাকা স্থবির হওয়ার উপক্রম হয়। এরই একপর্যায়ে এনবিআর এক প্রজ্ঞাপনে জানায়, আরোপিত ভ্যাট শিক্ষার্থীদের দিতে হবে না, তা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পরিশোধ করবে। পরে রাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও একই কথার পুনরোক্তি করেন।
এসব ঘোষণার পরও ভ্যাট কে দেবে এ নিয়ে ধোঁয়াশা দেখা দেয়। এর মধ্যেই গতকাল শুক্রবার (১১ সেপ্টেম্বর) অর্থমন্ত্রী জানান, এ প্রজ্ঞাপনের ব্যাপারে সরকার সমঝোতা করেছে এবং ‘আলটিমেটলি’ আগামী বছর থেকে শিক্ষার্থীদের ঘাড়েই বর্তাবে আরোপিত ভ্যাট।
এদিকে আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় শিক্ষা খাত থেকে পুরোপুরি ভ্যাট প্রত্যাহার করার দাবিতে আজও রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা হুঁশিয়ারি দেয়, ভ্যাট প্রত্যাহার না হলে ঈদের পর আরো কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।