বিএনপি আতঙ্কে ভুগছে সরকার : ফখরুল
সরকার বিএনপি আতঙ্কে ভুগছে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কোনো কিছু হলেই সরকার এর সঙ্গে বিএনপিকে জড়িয়ে দেয়। আজ শুক্রবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের মাঝে বিএনপি ভীতি আছে। যেমন একটা প্রাণী আছে, পানি দেখলেই ভয় পায়; ঠিক তেমনি আওয়ামী লীগও বিএনপির নাম শুনলে জলাতঙ্ক রোগীর মতো ভয় পায়। তারা যা কিছু হয়, সেখানে বিএনপি দেখতে পায়। মনে হয় বিএনপি ভীতিতে প্রত্যেক রাতে ঘুমাতে পারে না।’
বিএনপি নেতা বলেছেন, ‘পুলিশের সহায়তায় এবং তাদের সামনে বিএনপি-জামায়ত কর্মীরা আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোটা নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের মারপিট করবে, সাংবাদিকদের কোপাবে, আওয়ামী লীগ অফিস আক্রমণ করবে আর তাদের গ্রেপ্তার করা হবে না—এ কথা বিশ্বাস করবে এ দেশে এমন কোনো পাগলও নেই।’
ফখরুল বলেন, ‘আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেছেন, এসব আক্রমণ নাকি বিএনপি-জামায়াত কর্মীরা করেছে। হেলমেট পরা ও মুখোশধারী আক্রমণকারীরা ছাত্রলীগ-যুবলীগ কর্মী ছিল, এটা আহত সব সাংবাদিক এবং ছাত্রছাত্রীরা বলার পরও তিনি তাঁদের বিচার করার জন্য নাম চান। এমন বাজে রসিকতায় তিনি আনন্দ পেতে পারেন, কিন্তু দেশবাসী লজ্জিত হয়।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগই পুলিশ নিয়ন্ত্রণ করে এবং সেই পুলিশ তাদেরই নির্দেশে হেলমেট ও মুখোশধারীদের মানুষ কোপানোর পর নির্বিঘ্নে সরে যেতে দিয়েছে। এর পর হামলায় আহতদের কাছে নাম চাওয়া একটা নোংরা রসিকতা ছাড়া আর কিছু হতে পারে না। বলা বাহুল্য, সাংবাদিক ও টিভি চ্যানেলগুলোর ওপরে কড়া নিয়ন্ত্রণ রাখার পরও এই সত্যগুলো টিভি ক্যামেরার চোখ এড়িয়ে যায়নি এবং তা জনসমক্ষে প্রকাশ পেয়ে গেছে।’
বিএনপির মহাসচিব অভিয়োগ করে বলেন, ‘সরকারি দলের সিদ্ধান্তেই সরকারি দল ও ছাত্রলীগ, যুবলীগ, শ্রমিক লীগের নেতাকর্মীরা পুলিশের ছত্রছায়ায় হেলমেট ও মুখোশ পরে অগ্নেয়াস্ত্র, লাঠি, কিরিচ, রামদা নিয়ে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের ওপর অমানবিক ও বর্বরোচিত হামলা চালিয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে ঢুকে ছাত্রছাত্রীদের মারপিট করেছে। দলবদ্ধভাবে বিভিন্ন হোস্টেলে ও আবাসস্থলে গিয়ে ছাত্রদের মারপিট করে পুলিশে হস্তান্তর করেছে। এ সবকিছুই ঘটেছে পুলিশের চোখের সামনে এবং তাদের সহযোগিতায়।’
আন্দোলনে সমর্থনের বিষয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলনের প্রতি প্রকাশ্যেই সমর্থন জানিয়েছি। এটা অপরাধ হলে প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে পুলিশ কর্মকর্তারা পর্যন্ত একই অপরাধে অভিযুক্ত হওয়ার কথা। কিন্তু যে সরকার প্রার্থী, ভোটার এবং ভোট ছাড়া নিজেরাই নিজেদের নির্বাচিত ঘোষণা করে জোর করে রাষ্ট্র চালাতে লজ্জাবোধ করে না, তাদের কাছ থেকে পক্ষপাতমূলক বক্তব্য ও আচরণ ছাড়া আর কী আশা করা যেতে পারে। আমরা নিশ্চিত যে নানা বাধাবিপত্তির মধ্যেও মিডিয়া ও সামাজিক মিডিয়ার মাধ্যমে দেশবাসী প্রকৃত তথ্য পরিষ্কারভাবে জেনে গেছেন। আর সে জন্য ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের ক্রমাগত মিথ্যাচারে তাঁরা বিভ্রান্ত হবেন না।’
মির্জা ফখরুল দাবি করেন, ‘আজ স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে সরকারি দলের সাধারণ সম্পাদক থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনকে পেশিশক্তি দিয়ে দমন করার অপকৌশল নিয়েছে। এরই অংশ হিসেবে বিএনপিসহ আন্দোলনকে সমর্থনকারী রাজনৈতিক, সামাজিক প্রতিষ্ঠান এমনকি সচেতন ব্যক্তিবর্গকে টার্গেট করে ফ্যাসিস্ট কায়দায় নিপীড়ন চালিয়েছে। নিরীহ অরাজনৈতিক শিক্ষার্থীরাও নির্যাতন ও মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই পায়নি।’
সড়ক আইন নিয়ে বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের দাবি মানার প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের অংশ হিসাবে সরকার মন্ত্রিসভায় সড়ক পরিবহন আইনের যে সংশোধনী অনুমোদন করেছে, তা ইতোমধ্যেই পরিবহন মালিক সমিতি ছাড়া সবাই প্রত্যাখ্যান করেছে। সংশোধিত এই আইনে ছাত্রছাত্রীদের দাবীকৃত নিরাপদ সড়ক অর্জিত হবে না। কারণ, এই আইনে সড়ক পরিবহন খাতে মানুষ হত্যা ও অনাকাঙ্ক্ষিত দুর্ঘটনা এড়ানোর স্পষ্ট দিকনির্দেশনা কিংবা কঠোর শাস্তির বিধান নেই। আইনে বিআরটিএর অভ্যন্তরীণ দুর্নীতি দমনের কোনো বিধান রাখেনি। দুর্ঘটনায় মৃত্যুকে হত্যাকাণ্ড বলা হবে কি না, এটা নির্ধারণের দায়িত্ব নিরপেক্ষ, যোগ্য, সংশ্লিষ্ট কাউকে রাখা হয়নি। আর তাই আমরা এই আন্দোলন এবং দীর্ঘদিন ধরে যারা নিরাপদ সড়কের জন্য কাজ করছেন তাদের সাথে অর্থবহ আলোচনা করে প্রস্তাবিত আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনীর দাবি জানাচ্ছি।’
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সহিংস কোনো কর্মকাণ্ডে বিএনপি কখনো জড়িত ছিল না দাবি করে ফখরুল বলেন, ‘যারা পুলিশের সামনে হেলমেট ও মুখোশ পরে সহিংসতা করেছে, সাংবাদিকসহ আন্দোলনকারীদের ওপর নির্মম হামলা চালিয়েছে। আওয়ামী লীগের সেই সন্ত্রাসীদের অবিলম্বে চিহ্নিত ও গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি।’
বেসরকারি সংস্থা সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদারের বাড়ির সামনে মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাটের ওপর হামলার দায়ীদের এখনো গ্রেপ্তার না করায় তীব্র নিন্দা জানান বলেন মির্জা ফখরুল।
টেলিভিশনের ওপর সম্প্রচারে সরকারি বাধানিষেধের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘সত্যকে প্রকাশ হতে দিতে হবে। আর না হলে যখনই আপনি সত্য প্রকাশিত হতে দেবেন না, তখনই গুজব ছড়াবে। কথা বলতে দিন, তাহলে গুজব ছড়াবে না। গুজব তো তখনই ছড়ায়, যখন আপনি সত্য প্রকাশে বাধা দেবেন, কথা বলতে দেবেন না, যারা সত্য প্রকাশ করবে বলবে তাদের গ্রেপ্তার নির্যাতন করবেন তখনই। তাই এসব বন্ধ করতে হলে সত্য প্রকাশ করতে দিতে হবে, কথা বলতে দিতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘(আলোকচিত্রী) শহিদুল আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে কেন? যখন তিনি আলজাজিরাতে একটা সাক্ষাৎকার দিয়েছেন যে, এ দেশে বাকস্বাধীনতা নেই, কথা বলার অধিকার নেই। সরকার গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণ করছে, বাকস্বাধীনতাকে রুদ্ধ করছে, এ সরকার একটি অনির্বাচিত সরকার, তখনই তাকে গ্রেপ্তার করে নির্যাতন করা হচ্ছে।’
ফখরুল আরো বলেন, ‘এ সরকার ধরেই নিয়েছে, জনগণের কাছে তাদের জবাবদিহি দরকার নেই। জনগণের কোনো মতামতের দরকার নেই। তারা এভাবে স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতা দখল করে দেশ শাসন করে যাবে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, উপদেষ্টা আবদুস সালাম, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহপ্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন।