চিঠি ‘পায়নি’ বঙ্গভবন
প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অভিশংসনের আবেদন জানিয়ে কোনো চিঠি বঙ্গভবন কর্তৃপক্ষ ‘পায়নি’। রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব জয়নাল আবেদিন এ কথা জানিয়েছেন। তবে আপিল বিভাগের বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী রাষ্ট্রপতির কাছে সন্ধ্যার দিকে চিঠিটি পাঠিয়েছেন বলে তাঁর ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতির প্রেসসচিব জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘অফিস চলাকালীন এ ধরনের কোনো চিঠি আমাদের কাছে আসেনি।’
বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ সূত্র জানায়, চিঠিটির অনুলিপি মুখ্যসচিবের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, আইন মন্ত্রণালয় ও সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের সব বিচারকের কাছেও পাঠানো হয়েছে।
সূত্রের মাধ্যমে বিচারপতির সই করা চিঠিটির অনুলিপিও পাওয়া যায়। চিঠিতে শামসুদ্দিন চৌধুরী বলেন, “বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের বিচারক হিসেবে আমার সর্বশেষ কর্মদিবস ১৭-০৯-১৫ ইং তারিখ। আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতি মহোদয়কে আমার পেনশন কার্যক্রম বিষয়ে সংশ্লিষ্ট অফিসকে নির্দেশনা প্রদানের অনুরোধ করলে, মাননীয় প্রধান বিচারপতির নির্দেশে রেজিস্ট্রার জেনারেলের স্বাক্ষরে বিগত ২৫-০৮-২০১৫ ইং তারিখে আমাকে অবহিত করা হয় যে, ‘সব পেন্ডিং রায় না লেখা পর্যন্ত আমার পেনশন কার্যক্রম গ্রহণ করা যাবে না।’ উক্ত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে আমি প্রধান বিচারপতি মহোদয় বরাবর বিগত ১-০৯-২০১৫ তারিখে এক পত্র প্রেরণ করি। যাহাতে উল্লেখ করি যে, ‘মাননীয় প্রধান বিচারপতির উক্তরূপ আদেশ প্রদান করার কোনো আইনগত কর্তৃত্ব নাই এবং অতীতে অবসরে যাওয়া সব মাননীয় বিচারপতিগণই অবসরে যাওয়ার অনেক পরেও রায় লিখিয়াছেন এবং আমার প্রতি প্রধান বিচারপতি মহোদয়ের আচরণ বৈষম্যমূলক ও বিদ্বেষপূর্ণ।’ অতঃপর তিনি রেজিস্ট্রারের মাধ্যমে বিগত ০২-০৯-২০১৫ ইং তারিখের পত্রে আমার পেনশনবিষয়ক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়টি আমাক অবহিত করেন এবং উক্ত পত্রে আমার অবসরে যাওয়ার পূর্বে যে সমস্ত মামলার রায় লেখা সম্ভব হইবে না সে সমস্ত মামলার নথি সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ফেরত প্রদানের অনুরোধ করেন এবং ‘ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী হিসেবে মামলার রায় না লিখে বিদেশ চলে যেতে পারি মর্মে সংশয় প্রকাশ করেন।’ যা কল্পনাপ্রসূত ও অলীক। উক্ত পত্রের পরিপ্রেক্ষিতে ৮-৯-২০১৫ ইং তারিখে আমি মাননীয় প্রধান বিচারপতিকে অবহিত করি যে, ইতিপূর্বে অবসরে যাওয়া কোনো বিচারপতিকেই নথি ফেরত দেওয়ার জন্য কখনো বলা হয়নি। প্রধান বিচারপতি হিসেবে আমার প্রতি তাহার আচরণ বৈষম্য ও জিঘাংসামূলক। তাহার এইরূপ আদেশ আমার স্বাধীন বিচারকার্যে হস্তক্ষেপের শামিল ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান-এর ৯৪ (৪) আর্টিকেলের পরিপন্থী। এবং তিনি সুস্পষ্টভাবে সংবিধানের ৯৪ (৪) আর্টিকেল সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করেছেন।”
চিঠিতে আপিল বিভাগের এই বিচারপতি আরো অভিযোগ করে জানান, আপিল বিভাগের একটি বিচারিক বেঞ্চ থেকে তাঁকে সরিয়েও দেওয়া হয়। ব্যক্তিগত বিরাগের বশবর্তী হয়ে প্রধান বিচারপতি এসব করছেন বলে দাবি করে তাঁর এই আচরণ অভিশংসন যোগ্য বলেও মত দেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।
এসবের থেকে এটাই প্রমাণিত হয় যে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা যেকোনো মামলায় অনুরাগ ও বিরাগের ঊর্ধ্বে থেকে বিচারকাজ পরিচালনা করতে অক্ষম বলেও চিঠিতে মত দিয়েছেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী। তাঁর এসব আচরণ অভিশংসনযোগ্য হওয়ায় তা বিবেচনা করতে রাষ্ট্রপতির কাছে আবেদন করেন বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী।
চিঠির অনুলিপি প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, প্রধান বিচারপতি, আইনমন্ত্রী ও সুপ্রিম কোর্টের সব বিভাগের বিচারপতির কাছে পাঠানো হয়েছে।
এর আগে গত ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারের নামে শামসুদ্দিন চৌধুরীকে তাঁর পেনশনবিষয়ক কার্যক্রম শুরু করার বিষয়ে একটি চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠির জবাবে গত ৮ সেপ্টেম্বর প্রধান বিচারপতি বরাবর একটি চিঠি লেখেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রারকে দিয়ে একজন আপিল বিভাগের বিচারপতিকে চিঠি দেওয়া শুধু অশোভনীয় ও অসৌজন্যমূলকই নয়, সহকর্মী বিচারকগণের প্রতি চরম হেয় ও অবমাননার বহিঃপ্রকাশ।’ এর মাধ্যমে প্রধান বিচারপতি সুপ্রিম কোর্টের সব বিচারপতিদের অসম্মান করেছেন বলেও ওই চিঠিতে উল্লেখ করেন শামসুদ্দিন চৌধুরী।