নীতির প্রশ্নে আপস নাই : প্রধানমন্ত্রী
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীদের প্রেতাত্মারা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জাতির পিতার আদর্শ অনুসরণ করে রাজনীতি করলে তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে। তাই ভোগ বিলাসে গা না ভাসিয়ে আদর্শিক রাজনীতি করার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
আজ শুক্রবার বিকেলে গণভবনে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষ্যে ছাত্রলীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ছাত্রলীগ কর্মী হিসেবেই রাজনীতি শুরু করেছেন তিনি। আর দলের প্রয়োজনে আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দেশে ফেরার পর নানা প্রতিকূলতার মধ্যেই মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য কাজ করতে হয়েছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা ও স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জীবন দিয়েছেন। আর তাঁর পাশে থেকে নিভৃতে সংসার, দল ও দেশের জন্য কাজ করে গেছেন তাঁর মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিব। তাঁদের কাছ থেকেই মানুষের জন্য কাজ করার রাজনীতি শিখেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘কখনো গ্রেনেড হামলা, কখনো গুলি, কখনো ট্রেনে আঘাত, নানা ধরনের, বোমা-বিরাট বোমা পুঁতে রাখা, অনেক বাধা-বিঘ্ন। আমি তো কখনো সেগুলো পরোয়া করিনি। কারণ আমার আত্মবিশ্বাস যে আমি যে পথে যাচ্ছি, ন্যায় ও সত্যের পথে যাচ্ছি। আমার রাজনীতি বাংলার জনগণের জন্য। যে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটাবার জন্য আমার বাবা তাঁর জীবন দিয়ে গেছেন, আমার মা জীবন দিয়ে গেছেন, আমার ভাইয়েরা জীবন দিয়ে গেছেন; সে দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফুটানো আমার জীবনের একমাত্র লক্ষ্য। সেটাই আমার একমাত্র রাজনীতি।’
জাতির পিতার সেই রেখে যাওয়া আদর্শ নিয়ে রাজনীতি করার জন্য ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গে ভালো করে লেখাপড়া শেখার পরামর্শ দেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আরেকটা কথা হচ্ছে লেখাপড়া শিখতে হবে। সব থেকে বড় সম্পদ হলো শিক্ষা। ধন-সম্পদ চিরদিন থাকে না। কেউ যদি অনেক সম্পদ বানিয়ে খুব গর্ব করে, চিরদিন তা ধরে রাখতে পারে না। কিন্তু শিক্ষা এমন একটা সম্পদ যে সম্পদ কেউ কোনোদিন কেড়ে নিতে পারে না। তাই ছাত্রলীগের প্রত্যেকটা ছেলেমেয়েকে সকলের আগে শিক্ষা গ্রহণ করতে হবে। এটাই হচ্ছে সবচেয়ে বড় সম্পদ। এখন তো আমার বয়স হয়ে গেছে। তোমরা হলে ভবিষ্যৎ। তোমরা নেতৃত্ব দেবে। কাজেই তোমাদেরকেই এই আদর্শের পতাকা সমুন্নত রেখে প্রগতির পথে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।’
প্রধানমন্ত্রী ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দকে পড়ালেখায় মনোনিবেশের পাশাপাশি পদের প্রতি মোহ থেকে নয়, আদর্শভিত্তিক রাজনীতিতে আত্মনিবেদন করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, তিনি এবং তাঁর ভাই শেখ কামালও ছাত্রলীগের রাজনীতি করেছেন। একজন কর্মীর মতো কাজ করেছেন, যে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে তা সম্পাদন করেছেন। কিন্তু পদের দিকে তাকাননি।
সড়ক দুর্ঘটনাকে কেন্দ্র করে শিশুরা যে আন্দোলন করেছে তা নিয়ে অনেকেই রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত ফায়দা লুটতে চেষ্টা করেছে অভিযোগ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যতই আন্তর্জাতিক চাপ থাকুক গুজব সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে নীতির প্রশ্নে কোনো আপস করা হবে না।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘খুব দুর্ভাগ্য। এখনো কতগুলো প্রেতাত্মা ঘুরে বেড়ায়। যারা আমাদের স্বাধীনতা চায়নি, যারা আমাদের স্বাধীনতার বিরোধিতায় ছিল, আর পঁচাত্তরের পরে তারা মাথাচাড়া দিয়ে আরো দ্বিগুণ উৎসাহে উঠল। এবং তাদের সেই সহযোগীরা এখনো শেষ হয়নি। ছোট্ট শিশুরা, একটা অ্যাক্সিডেন্ট ঘটেছে, রাস্তায় নেমেছে। ওই শিশুদের ঘাড়ে পাড়া দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার জন্য একদল নেমে পড়ল। এদের মধ্যে অনেকেই খুব জ্ঞানী-গুণী। অনেকেই আঁতেল, অনেকেই আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন। এবং তাদের উসকানির কারণে কত শিশুর জীবন যেতে পারত! আর তাদের বিরুদ্ধেই যখনই ব্যবস্থা নিলাম, তখনই চারিদিকে যেন হাহাকার। আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকেও বিভিন্ন চাপ। একটা কথা, দেশে-বিদেশের সকলের মাথায় রাখা উচিত, নীতির প্রশ্নে আপস নাই।’
দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করতে নতুন প্রজন্মকে আদর্শিক রাজনীতি করার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সভাপতি রেজওয়ানুল হক চৌধুরী শোভন ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও বক্তব্য দেন।