হেফাজতে ইসলাম কখনো আমাদের শত্রু ছিল না : প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কখনো আমাদের শত্রু ছিল না। কওমি মাদ্রাসার মান দিয়ে তাদের উপকার করেছি। তাই তাঁরা দোয়া করছে। তাঁরা যদি আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও সমস্যা নেই বলে থাকে, তাহলে তাদের আমি ধন্যবাদ জানাচ্ছি।’
আজ বুধবার বিকেলে সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে এক সাংবাদিক প্রশ্ন করে বলেন, ‘আপনাদের শত্রু হেফাজতের প্রধান আল্লামা শফি বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া সবাই আশ্বাস দিয়েছে। কিন্তু কেউ কওমি মাদ্রাসার মান দেওয়ার বিষয়ে বাস্তবায়ন করেনি। কিন্তু শেখ হাসিনা বাস্তবায়ন করেছেন। তাই আওয়ামী লীগে যোগ দিলেও সমস্যা নেই।’ এরই জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘হেফাজতে ইসলাম কখনো আমাদের শত্রু ছিল না। বরং তাদেরকে খালেদা জিয়া মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে শাপলা চত্বরে নিয়ে আসে। তাদের জন্য গরু জবাই করা হবে বলে রাত পর্যন্ত ধরে রাখা হয়। পরে ছোট ছোট বাচ্চাদেরকে কলা-রুটি দিয়ে ভয়াবহ পরিবেশের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়। আমি তাদের বোঝাতে সক্ষম হয়েছি। তাদের শিক্ষাব্যবস্থার কোনো মূল্যায়ন ছিল না। কওমি মাদ্রাসার মান দেওয়ার মাধ্যমে তাদের রুটি-রোজগারের একটি ব্যবস্থা হবে। আমরা তাদের ভবিষ্যতের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধর্মকে আমরা অস্বীকার করতে পারি না। আবার ধর্মকে অপব্যবহার করাও উচিত হবে না। আমি চাই না শাপলা চত্বরের মতো কোনো ভয়াবহ চিত্র দেশে ফিরে আসুক। আমি মনে করি, সেই পরিস্থিতি দেশে আসবে ও না।’
এ সময় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিষয়ে কোনো ধরনের আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে কিনা সাংবাদিক মোজাম্মেল বাবুর এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা বলেন, ‘ল উইল টেক ইটস ওন কোর্স (আইন তার নিজস্ব গতিতে চলবে)। এর বেশি কিছু বলতে চাই না। বেশি বললে বলেন বেশি কথা বলি। আর কম কথা বললে, কম কথা বলি। এ পর্যন্তই থাক।’
জাতিসংঘের ৭৩তম সাধারণ অধিবেশনে যোগদান এবং সপ্তাহব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে আজ বিকেল ৪টার দিকে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের উদ্দেশে গত ২১ সেপ্টেম্বর দেশ ছাড়েন প্রধানমন্ত্রী। সপ্তাহব্যাপী সেখানে অবস্থান করে ১ অক্টোবর দেশে ফেরেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে সফরকালে প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘের অধিবেশনে প্রতিবারের মতো এবারও বাংলায় ভাষণ দেন। তাঁর ভাষণে চলমান রোহিঙ্গা সংকটে জাতিসংঘ ও মিয়ানমারের মধ্যকার চুক্তির বাস্তবায়নে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসের সঙ্গে বৈঠক করেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক আয়োজিত এক সংবর্ধনায় যোগ দেন। পাশাপাশি নিউইয়র্কে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেওর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করেন।
এ ছাড়া জাতিসংঘ অধিবেশনের ফাঁকে প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধান এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা ও এজেন্সির প্রধানদের সঙ্গেও বৈঠক করেছেন। এসব আলোচনায় অন্যতম বিষয় ছিল রোহিঙ্গা সংকট।
যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থানকালে মিয়ানমারের প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে আশ্রয় প্রদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ইন্টারপ্রেস সার্ভিসেস নিউজ এজেন্সির ‘ইন্টারন্যাশনাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড’ ও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে দূরদর্শী নেতৃত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ গ্লোবাল হোপ কোয়ালিশনের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের ২০১৮ সালের ‘আউটস্ট্যান্ডিং লিডারশিপ’ অ্যাওয়ার্ড গ্রহণ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রী আজকের সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে সেই সব বিষয় তুলে ধরেন। পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেন। পরে বিকেল সাড়ে ৫টায় সংবাদ সম্মেলন শেষ হয়।