মাগুরায় ভোটের লড়াই দলে, ময়দানে
আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশ এখন ভোটজ্বরে আক্রান্ত। সব জেলায় বিভিন্ন দলের প্রার্থীদের মধ্যে শুরু হয়েছে তোড়জোড়। সবাই যার যার অবস্থান ঘোষণা করছেন, গণসংযোগ করছেন নিজ নিজ এলাকায়। এই উত্তাপ থেকে পিছিয়ে নেই মাগুরা জেলাও। এরই মধ্যে জেলার বিভিন্ন দলের প্রার্থীরা ভোটের মাঠে বুঝে নিতে চাইছেন নিজের অবস্থান।
ধারণা করা হচ্ছে, এ জেলায় এবারে তরুণ ও প্রবীণ প্রার্থীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য প্রতিযোগিতা হবে। প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়েরই আছে মনোনয়নপ্রত্যাশী তরুণ ও প্রবীণ প্রার্থী।
এক হাজার ৪৮ দশমিক ৬১ বর্গকিলোমিটার আয়তনের মাগুরা জেলার দুই আসনে মোট উপজেলা চারটি। এখানে ভোটার সংখ্যা ছয় লাখ ৮৪ হাজার ২২৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার তিন লাখ ৪২ হাজার ৪৫৩ জন ও নারী ভোটার তিন লাখ ৪১ হাজার ৭৭২ জন।
এ দুই আসনে এবারে ভোটের পার্থক্য গড়ে দিতে পারেন তরুণ ভোটাররা। ফলে তাঁদের চাওয়া-পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনে। তাঁরা এমন প্রার্থী চান, যিনি কেন্দ্রের সঙ্গে সমন্বয় রেখে উন্নয়নের ছোঁয়া পৌঁছে দিতে পারেন তৃণমূল পর্যন্ত। কেউ কেউ বলছেন, সব সময় যাকে কাছে পাওয়া যায় এমন প্রার্থী চান তাঁরা।
তরুণ (২৫) এক ভোটার বলেন, ‘তৃণমূলের মানুষের খোঁজ-খবর যিনি রাখবেন, আমরা সে রকম একজন প্রার্থী মাগুরার জন্য চাই।’
এক তরুণী (২১) ভোটার বলেন, ‘এমন একটা প্রার্থী হবে যে সবার… মাগুরার সেবা করতে পারবেন।’
অন্যদিকে মধ্যবয়সী (৪৫) আরেক ভোটার বলেন, ‘দেশপ্রেমিক এবং তরুণ নেতৃত্ব মাগুরায় প্রতিষ্ঠিত হোক।’
সদর ও শ্রীপুর উপজেলা নিয়ে মাগুরা এক আসন। এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল আবদুল ওয়াহাব ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব সাইফুজ্জামান শিখর, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আবু নাসির বাবলু দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী।
প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সহকারী সচিব সাইফুজ্জামান শিখর বলেন, ‘আমরা মাগুরাকে মাদকমুক্ত করবার জন্য, আমরা মাগুরার যুবক এবং তরুণদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবার জন্য আমরা পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছি। মাগুরার মানুষ আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকবে। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে ভোট দেবে।’
অন্যদিকে, বিএনপি থেকে মনোনয়নপ্রত্যাশী দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির মুরাদ, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মনোয়ার হোসেন খান ও জেলা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক শ্রীপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বদরুল আলম হিরো।
নিজের প্রার্থিতার পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কবির মুরাদ বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন মাগুরা জেলা বিএনপির সভাপতি ছিলাম এবং তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে আমার একটা সম্পর্ক গড়ে উঠছে। আমি বিশ্বাস করি এটাও যে, ধানের শীষ যদি একটু সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, অবাধ নির্বাচন হয় বিপুল ভোটে আমি জয়যুক্ত হব।’
মাগুরা সদর উপজেলার চারটি ইউনিয়ন এবং শালিখা ও মহম্মদপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত মাগুরা-২ আসন। যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী ড. বীরেন শিকদার এখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে বেশ সুবিধাজনক অবস্থায় আছেন। তবে এ আসনে তাঁর শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী হতে পারেন ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি ড. ওহিদুর রহমান টিপু ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আবদুল মান্নান।
আবারও দলীয় মনোনয়ন পেয়ে নির্বাচিত হবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার বলেন, ‘বিগত তিনবার আমাকে নির্বাচিত করেছে। আগামী দিনেও আমি আশা করি যে, এই উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সন্তুষ্ট হয়ে আমাকে নির্বাচিত করবে।’
অন্যদিকে বিএনপি থেকে এ আসনে মনোনয়ন চাইবেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান নিতাই রায় চৌধুরী। এ ছাড়া আলোচনায় আছেন সাবেক সংসদ সদস্য কাজী সালিমুল হক কামাল। জিয়া অরফানেজ মামলায় নিম্ন আদালত তাঁকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে। তিনি নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আইনি জটিলতা আছে। এ ছাড়া শালিখা উপজেলা চেয়ারম্যান ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য মোজাফফর হোসেন টুকু মনোনয়নপ্রত্যাশী এ আসনে।
নিজের মনোনয়ন প্রত্যাশায় মোজাফফর হোসেন টুকু বলেন, ‘আন্দোলন সংগ্রাম এবং নেতাকর্মীদের বিপদের সময় আমাকে পাশে পায়। এই জন্যেই নেতাকর্মীরা মনে করে যে, মোজাফফর হোসেন টুকুকে যদি আগামীতে দল নমিনেশন দেয়, এই সিটটা পুনরুদ্ধার করতে আমরা সক্ষম হব।’