রাজশাহীতে ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশকে ঘিরে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির অভিযোগ
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চাহিদা অনুযায়ী শেষ পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে বিভাগীয় সমাবেশ করার অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। গতকাল বুধবার বিকেলে মাদ্রাসা ময়দানের পরিবর্তে নগরীর গণকপাড়া মোড়ের সড়কে সমাবেশের জন্য পুলিশ অনুমতি দেয়।
অনুমতি পাওয়ার পর পরই সমাবেশ সফল করতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে নগরীতে মাইকিং শুরু করে দেওয়া হয়। বুধবার রাতে সেই ভেন্যু পরিবর্তন করে পুলিশ। পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের চাহিদা অনুযায়ী মাদ্রাসা ময়দানে ১২টি শর্তে তিন ঘণ্টার জন্য সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হয়।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এসব তথ্য জানিয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মিজানুর রহমান অভিযোগ করেন, প্রশাসন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সমাবেশে লোকজনের উপস্থিতিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজশাহীর বিভিন্ন রুটে পরিবহন শ্রমিকদের দিয়ে বাস চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। রাজশাহী বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে পুলিশ। এরই মধ্যে বেশ কিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তারও করা হয়েছে।
মিনু বলেন, যত প্রতিবন্ধকতাই সৃষ্টি করা হোক না কেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কাল শুক্রবারের বিভাগীয় সমাবেশে জনগণের উপস্থিতি এই মাঠে অতীতের সব জনসমাবেশের উপস্থিতির রেকর্ডকে ভঙ্গ করবে।
রাজশাহীতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ৯ নভেম্বর বিভাগীয় সমাবেশ করতে পুলিশের অনুমতির জন্য গত ২২ অক্টোবর মহানগর বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক শফিকুল হক মিলন ঐক্যফ্রন্টের পক্ষে পুলিশের কাছে অনুমতি চেয়ে আবেদন করেন।
পরে এ নিয়ে বিএনপি নেতারা একাধিকবার রাজশাহী মহানগর পুলিশের (আরএমপি) কমিশনার এ কে এম হাফিজ আক্তারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। সর্বশেষ বুধবার দুপুরে মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল ও শফিকুল হক মিলন আরএমপি কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পরে বিকেলে পুলিশ গণকপাড়া মোড়ে সমাবেশের অনুমতি দেয়। পরে তা বাতিল করে বুধবার রাতে ১২টি শর্তে মাদ্রাসা ময়দানে সমাবেশ করার অনুমতি দেয় পুলিশ।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের সিটি এসবির বিশেষ পুলিশ সুপার স্বাক্ষরিত অনুমতিপত্রে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশের জন্য তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। অনুমতিপত্রে বলা হয়েছে, দুপুর ২টার আগে সমাবেশের কার্যক্রম শুরু করা যাবে না এবং ৫টার মধ্যে সমাবেশ শেষ করতে হবে। নির্দিষ্ট সময়ের আগে সমাবেশস্থলে প্রবেশ করা ও সমবেত হওয়া যাবে না। সমাবেশের পর কোথাও অবস্থান করা যাবে না। সমাবেশে রাষ্ট্রবিরোধী কোনো বক্তব্য ও বিবৃতি প্রদান করা যাবে না এবং যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে কোনো বক্তব্য দেওয়া যাবে না। সমাবেশস্থল ও পার্শ্ববর্তী স্থানে মাইক কিংবা সাউন্ডবক্স ব্যবহার করা যাবে। তবে শহরের অন্য কোথাও মাইক বা সাউন্ড কিংবা প্রজেক্টর ব্যবহার করা যাবে না। সমাবেশে কোনো প্রকার লাঠিসোঁটা, ফালা, তীর বা কোনো প্রকার অস্ত্র-শস্ত্র কিংবা লাঠি সংযুক্ত ব্যানার, ফেস্টুন আনা ও বহন করা যাবে না। সমাবেশ চলাকালে রাস্তায় জনসাধারণের যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করা যাবে না।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশকে ঘিরে বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরীর মালোপাড়াস্থ মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন মিজানুর রহমান মিনু। ছবি : এনটিভি
সমাবেশকে ঘিরে বৃহস্পতিবার নগরীর মালোপাড়াস্থ মহানগর বিএনপির কার্যালয়ে জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে আয়োজকরা। সংবাদ সম্মেলনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমন্বয়ক মিজানুর রহমান মিনু সমাবেশকে ঘিরে প্রশাসনের বিরুদ্ধে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার অভিযোগ আনেন। তিনি বলেন, ‘তারা আমাদের মিটিংয়ে বাধা দিচ্ছে। আগামীকালের মিটিংকে ঘিরে একদিন আগে বৃহস্পতিবার থেকেই বাস-ট্রাক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। উদ্দেশ্য আমাদের সমাবেশে যাতে লোক সমাগম না হয়। ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রামেও তারা একই কাজ করেছিল। এরই মধ্যে পুলিশ আমাদের শত শত নেতার বড়ি বাড়ি গিয়েছে, আমাদের অনেককে গ্রেপ্তারও করেছে। আমরা যেন সঠিকভাবে মাঠ ব্যবহার করতে না পারি, সেজন্য তারা নানা বাইন্ডিং দিয়েছে।’
মিনু বলেন, সব প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে শুক্রবারের বিভাগীয় সমাবেশ সফল করা হবে। সমাবেশে দলীয় নেতাকর্মীর চেয়ে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ থাকবে বেশি। ঐতিহাসিক মাদ্রাসা মাঠে এ পর্যন্ত যত সমাবেশ হয়েছে, সেসব সমাবেশে উপস্থিতির রেকর্ড ভেঙে শুক্রবারের সমাবেশ নতুন রেকর্ড করবে।
শুক্রবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশে সভাপতিত্ব করবেন মিজানুর রহমান মিনু। সমাবেশে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ ঐক্যফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ও রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতৃবৃন্দ বক্তব্য দেবেন।
এদিকে, রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন জেলার বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বিভাগীয় সমাবেশে লোক সমাগম ঠেকাতে বাস চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দল। বগুড়া জেলা বিএনপির সভাপতি ভিপি সাইফুল ইসলাম জানান, প্রশাসন ও ক্ষমতাসীন দলের নেতাদের নির্দেশে বগুড়ার কোনো বাস মালিক রাজশাহীর সমাবেশে যোগ দেওয়ার জন্য বাস ভাড়া দিচ্ছে না। তিনি বলেন, এভাবে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ বাধাগ্রস্ত করা যাবে না।