বাদশা-মিনু কোলাকুলি, ‘এমন যদি হতো’
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বিভিন্ন স্থানে যখন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নৌকা ও ধানের শীষের প্রার্থী এবং কর্মী-সমর্থকরা দুটি ধারায় বিভক্ত, নির্বাচনী সহিংসতায় প্রাণ যাচ্ছে, ভাঙচুর ও হামলা হচ্ছে, তখন বিরল দৃষ্টান্ত দেখা গেল রাজশাহী-২ আসনে।
রাজশাহী সিটি করপোরেশন নিয়ে গঠিত আসনটিতে মহাজোটের প্রার্থী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা ও বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করেছেন। মিনুর হাতে নৌকার প্রচারপত্র তুলে দেন বাদশা। দুই প্রার্থী একে অপরের কাছে নিজ নিজ প্রতীকে ভোট চেয়েছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে নগরীর দরগাপাড়ায় হজরত শাহ মখদুম (র.) মসজিদ প্রাঙ্গণে এই ঘটনা ঘটে। দুই নেতাই এই মসজিদে নামাজ আদায় করেন। নামাজ শেষে মসজিদের সামনে মুসল্লিদের মাঝে নৌকার প্রচারপত্র বিতরণ শুরু করেন ১৪ দলের নেতাকর্মীরা। তখন মিনু নামাজ পড়ে বের হলে তাঁর হাতেও নৌকার প্রচারপত্র তুলে দেন ফজলে হোসেন বাদশা। এ সময় ফজলে হোসেন বাদশা তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনুকে বুকে টেনে নিয়ে তাঁর সঙ্গে কোলাকুলি করেন।
দুই প্রার্থীর এমন আচরণে মুগ্ধ হন স্থানীয় বাসিন্দা ও মুসল্লিরা। তাঁরা বলাবলি করতে থাকেন, সারা দেশেই যদি নির্বাচনে এই পরিবেশ থাকত তাহলে ভোটের পরিবেশ পাল্টে যেত, রাজনীতিও পাল্টে যেত। বন্ধ হয়ে যেত সহিংসতা-হানাহানির রাজনীতি।
রাজশাহী সদর আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। গত ১০ বছর থেকে তিনি এ আসনের এমপি। অন্যদিকে এ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মিজানুর রহমান মিনু। এর আগে ২০০২ সালে রাজশাহী সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বাদশা ও মিনু একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। সেই নির্বাচনে বাদশাকে হারিয়ে মেয়র হন মিনু। এরপর নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুখোমুখি হন বাদশা ও মিনু। সেবার মিনুকে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন বাদশা। আর দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় বিনাভোটে রাজশাহী সদর আসনে আবারও এমপি হন বাদশা। এবারের নির্বাচনেও তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে নৌকা প্রতীক নিয়ে লড়ছেন।
এদিকে, শুক্রবার জুম্মার নামাজের আগ পর্যন্ত নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডে গণসংযোগ ও নির্বাচনী প্রচার করেন বিএনপি প্রার্থী মিজানুর রহমান মিনু। এ সময় তিনি বলেন, খালেদা জিয়াকে মুক্ত এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করার জন্য এই নির্বাচনে বিএনপি, ২০ দলীয় জোট ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট অংশগ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, যত বাধাই আসুক না কেন, কোনোভাবেই বিএনপি জোট নির্বাচন বর্জন করবে না। এবারের নির্বাচনে বিএনপি জোটের বিজয় কেউ রোধ করতে পারবে না।
তবে সাবেক এই মেয়র অভিযোগ করেন, সরকারি দল বিএনপি প্রার্থীদের ব্যানার, পোস্টার, লিফলেট ছিড়ে ফেলছে ও নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করছে। বিএনপি কখনো সহিংস রাজনীতি করেনি উল্লেখ করে মিনু বলেন, যারা এগুলো করছে এবং মদদ দিচ্ছে, তারা জনগণের কাছে হেয় প্রতিপন্ন হচ্ছে।
অন্যদিকে, শুক্রবার বিকেলে নগরীর ২ নম্বর ওয়ার্ডের কড়াইতলা মোড়ে এক সমাবেশে বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ১০ বছর আগে ২ নম্বর ওয়ার্ড গ্রাম ছিল। এখন সেটা শহর হয়ে গেছে। অনেক প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এমন উন্নয়ন ধরে রাখতে চাইলে আগামী নির্বাচনে নৌকায় ভোট দিতে হবে।
বাদশা আরো বলেন, রাজশাহী ১৪ দলের সমন্বয়ক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হয়েছেন। আমি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হতে পারলে দুজনে মিলে অনেক বড় বড় প্রকল্প আনব। আমাদের রাজশাহী এগিয়ে যাবে। এ জন্য আমাকে সুযোগ দেবেন। আগের প্রতিশ্রুতি যেভাবে রক্ষা করেছি, এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।