শুঁটকি আটকায়, ইয়াবা যেতে দেয়!
ঢাকা ও চট্টগ্রাম আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে ইয়াবার মতো মাদকদব্য পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসীরা। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ বিষয়গুলো খতিয়ে দেখতে বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসে নজরদারি জোরদার করার আশ্বাস দেয়। শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামে প্রবাসীদের সহায়তার জন্য হেল্পডেস্ক কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রবাসীরা এসব অভিযোগের কথা জানান।
প্রবাসীদের হয়রানি রোধে চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ হালিশহরের জেলা পুলিশ লাইনে এই হেল্পডেস্ক চালু করে। পর্যায়ক্রমে জেলার ১৬টি থানায় একটি করে ডেস্ক চালু করা হবে বলে জানানো হয়। এর হটলাইন নম্বর হলো ৮৮-০১৭৬৯৬৯৪২৭৪। জেলা পুলিশ জানায়, এই নম্বরে কল করে প্রবাসীরা সারা সপ্তাহ রাতদিন ২৪ ঘণ্টা সহায়তা পাবেন।
অনুষ্ঠানে ওমান প্রবাসী ও ওমান বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি জসিম উদ্দিন অভিযোগ করে বলেন, বিদেশে যাওয়ার সময় দেশ থেকে শুঁটকি বা শুকনো মাছ জাতীয় কোনো পণ্য নিতে গেলে ইমিগ্রেশন আটকে দেয়, কাস্টমস ছাড়ে না। কিন্তু ইয়াবার মতো মাদক বিমানযোগে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। কারা কিভাবে এসব মাদক নিয়ে যাচ্ছে তা কাস্টমস ও ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা দেখেন না। এছাড়া স্ক্যানিং মেশিনে এসব পণ্য দেখা যায় না বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) প্রবাসী মো. সেলিম সিআইপি জানান, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে প্রবাসে আছি। নানা সমস্যায় আছেন প্রবাসীরা। হেল্পডেস্ক চালু করে আমাদের একটি দাবি পূরণ হলো। ভবিষ্যতে বিমানবন্দরে হয়রানিমুক্তভাবে সেবা নিশ্চিতের দাবি জানান তিনি।
কাতারে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত তাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন অভিযোগ করে কাতার প্রবাসী ও সেখানকার আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল জলিল বলেন, বিদেশ থেকে আসার পর বিমানবন্দরে তাঁরা কারো কাছে ভালো ব্যবহার পান না।
ইউএই প্রবাসী আবুধাবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ইফতেখার হোসেন বাবুল বলেন, প্রবাসীদের জন্য হেল্পডেস্ক চালুর বিষয়টি আমাদের দীর্ঘ দিনের দাবি। প্রধানমন্ত্রী যখনই প্রবাসে আমাদের সঙ্গে মিলিত হয়েছেন, তখন থেকেই আমরা এ হেল্পডেস্কের দাবি জানিয়ে আসছি।
বাবুল বলেন, ভবিষ্যতে উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যানকে প্রধান করে উপজেলা ভিত্তিক প্রবাসী হেল্প সহায়তা কেন্দ্র চালু করা হলে সাধারণ মানুষ আরো বেশি উপকৃত হবে।
অনুষ্ঠানে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে বিভিন্ন সংস্থার নানা হয়রানির কথা তুলে ধরে তা প্রতিরোধের দাবি জানান প্রবাসীরা। এ সময় ভবিষ্যতে প্রবাসীদের হয়রানি বন্ধে সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে পুলিশ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টগ্রামের পুলিশ সুপার (এসপি) নূরে আলম মিনা বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিমান বন্দরে ইমিগ্রেশন ও কাস্টমসের মাধ্যমে কোনো মাদক যাতে পাচার না হয় সে ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে অবহিত করা হবে। এসব অবৈধ কাজে ইউনিফর্ম পরা অন্য বিভাগের কোনো লোক জড়িত কিনা তা খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন।
পুলিশ সুপার বলেন, অনেকের ধারণা পুলিশের সব কাজ থানায়। থানার ওপরে আর কিছু নেই। সবার একটি ভুল ধারণা আছে। প্রতিটি থানায় একটি দুটি করে দুষ্ট লোক থাকে। অধিকাংশ ভালো। দুষ্টচক্র মানুষকে হয়রানি করে।
তবে এবার পুলিশ সদস্যদের আচরণে ও ব্যবহারে একটা আমূল পরিবর্তন হবে বলে নূরে আলম মিনা আশাবাদ ব্যক্ত করেন। কেউ কোনো ব্যক্তিগত কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হলে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবেন।
এসপি বলেন, প্রবাসীরা দেশে জমি কিনলে বা তাদের পৈত্রিক জমিজায়গা দুষ্টচক্র সিন্ডিকেট করে হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ভুয়া রেকর্ড তৈরি করে প্রবাসীদের হয়রানি করা হয়।
পুলিশ সুপার বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ইমিগ্রেশন দিয়ে একটি আলপিনও ধরা পড়ে। সেখানে আমাদের বিমানবন্দর স্ক্যানিং মাদক পর্যন্ত পাচার হয়ে যাওয়ার ঘটনা তাদের শঙ্কিত করে তুলছে। যার কারণে বহির্বিশ্বে আমাদের ইমেজ সংকটে পড়তে হয়।
অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (এএসপি) এ কে এম এমরান হোসাইন, আবুধাবি বঙ্গবন্ধু পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নাসির তালুকদার, কাতার প্রবাসী নূর মো. ইয়াসিন চৌধুরী সিআইপি ও জাপান প্রবাসী কাজী সরোয়ার হাবিব।