মন্ত্রী হলেন নুরুল ইসলাম, পঞ্চগড়ে আনন্দ মিছিল
নতুন মন্ত্রিসভায় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেয়েছেন পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুজন। আর এতে পঞ্চগড় শহরসহ বিভিন্ন উপজেলায় মিষ্টি বিতরণ ও আনন্দ মিছিল করেছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।
গত ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসন থেকে নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম সুজন। টানা তৃতীয়বারের মতো তিনি ওই এলাকার সাংসদ নির্বাচিত হন।
স্বাধীনতার ৪৭ বছর পর পঞ্চগড় থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় সাংসদকে মন্ত্রী করায় গতকাল রোববার রাতে পঞ্চগড় জেলা শহর, বোদা ও দেবীগঞ্জ উপজেলা সদরে আনন্দ মিছিল বের করা হয়।
‘ক্লিন ইমেজে’র সাংসদ হিসেবে নুরুল ইসলাম সুজনকে মন্ত্রী করায় বোদা-দেবীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ-সংগঠন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, সরকারি ও বেসরকারি দপ্তরের প্রধানসহ পুরো জেলাবাসী আনন্দ ও উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছে।
আনন্দ মিছিল শেষে জেলার বিভিন্ন জায়গায় সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে বক্তারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
পঞ্চগড় প্রেসক্লাব ও বোদা প্রেসক্লাব তাৎক্ষণিকভাবে এক প্রতিক্রিয়ায় পঞ্চগড়ের মানুষের স্বপ্ন পূরণ করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন। এ ছাড়া ময়দানদীঘি ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক-কর্মচারীরাও প্রধানমন্ত্রীকে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।
সমাবেশে বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ফারুক আলম টবি বলেন, ‘তাঁর মন্ত্রিত্বে নেতাকর্মীসহ এলাকার মানুষের মধ্যে না পাওয়ার যে বেদনা ছিল, তা দূর হয়েছে। সবার মনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। এলাকাবাসী আনন্দিত ও উৎফুল্ল হয়েছে। আশা করি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের দিকনির্দেশনায় আগামী দিনে পঞ্চগড় জেলায় আমূল পরিবর্তন আসবে।’
বোদা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও পৌরসভার মেয়র ওয়াহিদুজ্জামান সুজা বলেন, ‘নুরুল ইসলাম সুজন এমপি মহোদয়কে যথাযথ মূল্যায়ন করায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাই। বোদা-দেবীগঞ্জবাসীর দীর্ঘদিনের আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়েছে।’
পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, ‘স্বাধীনতার পর পঞ্চগড় থেকে আওয়ামী লীগের কোনো মন্ত্রী ছিলেন না। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম সুজন এমপি মহোদয়কে পূর্ণ মন্ত্রী করায় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীসহ সর্বস্তরের মানুষের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানাই।’
মন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে নুরুল ইসলাম সুজন বলেন, ‘আল্লাহতায়ালার দরবারে অশেষ শুকরিয়া। আমি প্রধানমন্ত্রীকে কৃতজ্ঞতা জানানোর পাশাপাশি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি বোদা ও দেবীগঞ্জ এলাকার প্রত্যেক জনগণকে, যাদের ভালোবাসায় আমি বিপুল ভোটে তৃতীয়বারের মতো সাংসদ নির্বাচিত হয়েছি।’
নুরুল ইসলাম সুজন ১৯৫৬ সালের ৫ জানুয়ারি পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদিঘী ইউনিয়নের নবাবগঞ্জ মহাজনপাড়াস্থ সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ময়দানদীঘি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পঞ্চম শ্রেণি পাস করেন। এরপর ময়দানদীঘি বিএল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ঠাকুরগাঁও সরকারি কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এমএসসি করেন তিনি। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এলএলবি পাস করেন। ছাত্রাবস্থা থেকেই ছাত্ররাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন নুরুল ইসলাম। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ডাকসুর বিজ্ঞান মিলনায়তন বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন তিনি। ঢাবির সিনেট সদস্যও ছিলেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক, যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সহআইন বিষয়ক সম্পাদক ও আইনবিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন নুরুল ইসলাম সুজন। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সহসম্পাদক ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার একজন আইনজীবীও ছিলেন নুরুল ইসলাম। তিনি পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের দুবারের নির্বাচিত সভাপতি। সুজন ২০০৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে পঞ্চগড়-২ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবারের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে একই আসন থেকে আবারও সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলেন তিনি।
মরহুম এমাজউদ্দীন আহম্মেদ ও মরহুমা কবিজান বেছারের দ্বিতীয় সন্তান নুরুল ইসলাম সুজন। তাঁর বড় ভাই মরহুম অ্যাডভোকেট মো. সিরাজুল ইসলাম পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন এবং সংসদ সদস্য হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ৬ নম্বর সেক্টরের হয়ে অংশ নেন সিরাজুল ইসলাম। তাঁর মৃত্যুর পর ছোট ভাই নুরুল ইসলাম সুজন ঢাকায় আইন পেশার পাশাপাশি পঞ্চগড় জেলা আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন।
এক ছেলে ও দুই মেয়ের জনক নুরুল ইসলাম সুজনের স্ত্রী নিলুফার ইসলাম গত ২৯ ডিসেম্বর (নির্বাচনের আগের দিন) ইন্তেকাল করেন। ৩১ ডিসেম্বর সোমবার তাঁকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়।