পড়া হয় না, খেলা হয় না, কাঠ চেরা হয় ঠিকমতো
ফরিদপুরের সালথা উপজেলার কুমারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে প্রতিদিন যথাসময়েই ক্লাস শুরু হয়। আর তার সাথে সাথে শুরু হয় কাঠ চেরাইয়ের শব্দ। বিদ্যালয়ের সামনে যে মাঠটি আছে, সেখানে খেলার সুযোগ নেই। জায়গাটি দখল করে করা হয়েছে করাত কল (স মিল)।
বিদ্যালয়টি যদুনন্দী ইউনিয়ন পরিষদে অবস্থিত। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রব মোল্যা দাবি করেছেন, তাঁর জামাতা ও পুত্রদের জায়গায় করাত কলটি বসানো হয়েছে এবং এ ব্যাপারে কাগজপত্রও আছে।
মাঠে খেলা তো দূরের কথা, কাঠ চেরাইয়ের বিকট শব্দে ছোট শিশুদের পড়াশোনাই কেবল নয় ক্ষতি হচ্ছে স্বাস্থ্যেরও।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছে, প্রায় তিন বছর আগে কুমারকান্দা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের খেলার মাঠের পূর্বদিকে প্রায় তিন শতাংশ জমি দখল করে করাত কলটি স্থাপন করেন আলমগীর মুন্সী নামের স্থানীয় এক ব্যক্তি। করাত কলটি স্থাপনের সময় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধা দিলেও কোনো কাজ হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারা আরো জানায়, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর রব মোল্যার স্বজন সিরাজ মিয়া আলমগীর মুন্সীকে দিয়ে করাত কলটি বসান। এ কারণে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয় বাসিন্দারা এর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার সাহস পায়নি।
বছর খানেক আগে স্থানীয় বাসিন্দাদের মৌখিক অভিযোগের ভিত্তিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদ্যালয়ের মাঠ থেকে করাত কল সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দেন বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানায়। তবে সে কথা মানেননি করাত কলের মালিক।
বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থীরা বলে, ‘ক্লাস চলার সময় কাঠ চেরাইয়ের কাজ শুরু হয়। যন্ত্রের শব্দে আমাদের পড়ালেখা নষ্ট হয়। মাঠের মধ্যে করাত কল থাকার কারণে খেলাধুলা করতে চরম বিপাকে পড়তে হয়।’
এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেলোয়ার হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি অনেক দূর থেকে এখানে এসে চাকরি করি। আমাকে ঝামেলায় না জড়ানোই ভালো।’
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুর বর মোল্যা বলেন, ‘আমার জামাই ও পুত্রদের জায়গায় করাত কল দিয়েছে আলমগীর। তাঁদের সব কাগজপত্র রয়েছে।’
এ ব্যাপারে মুঠোফোনের মাধ্যমে আলমগীরের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিশ্বাস রাসেল হোসেন বলেন, ‘কুমারকান্দা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে করাত কলের বিষয়টি আমি জানি না। তবে এখন জানলাম, এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’