অকৃতকার্যদের কথা শুনার সুযোগ নেই : স্বাস্থ্যমন্ত্রী

সরকারকে বিব্রত করার জন্যই ‘ভিত্তিহীন’ দাবি নিয়ে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা বাতিলের আন্দোলন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, পরিসংখ্যান বলছে সবচাইতে মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাই সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে। তাদের অনেকেই কৃষক বা স্কুল শিক্ষকের সন্তান। কেউ পিতৃহীন, ঢাকায় মেসে থেকে পড়াশুনা করেছে। এরা বেশির ভাগই দেশের বিভিন্ন প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা।
‘যারা আন্দোলন করছে, তারা দেশের দরিদ্র ও মেধাবীদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছে। পরীক্ষা ভালো না দিয়ে পাস করার সুযোগ নেই। অকৃতকার্য ছাত্রছাত্রীদের কথা শোনারও সুযোগ নেই।’ যোগ করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী।
আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং হাসপাতালের পরিচালকদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় মোহাম্মদ নাসিম এসব কথা বলেন। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের তথ্য কর্মকর্তা পরীক্ষিৎ চৌধুরী এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিষয়টি জানায়।
গত ১৮ সেপ্টেম্বর দেশের ২২টি সরকারি মেডিকেল ও একটি ডেন্টাল কলেজে একযোগে ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এতে ৮৪ হাজার ৭৮৪ জন অংশ নেন। পরীক্ষা গ্রহণের পর থেকেই শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগ তুলে আন্দোলনে নামেন। তবে শুরু থেকেই প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়।
রাজপথে আন্দোলন করে কোনো অযৌক্তিক দাবি আদায় করা যায় না উল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান সরকার নির্বাচিত সরকার। এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছে। যুক্তির বাইরে কখনো যাওয়া যাবে না।’
এ সময় মোহাম্মদ নাসিম মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র তৈরি ও সরবরাহ প্রক্রিয়ার কোনো ত্রুটি আছে কি না, তা দেখতে নিজে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে গেছেন বলেও জানান। তিনি বলেন, ‘প্রক্রিয়ার প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে আমি ধারণা নিয়েছি। এই প্রক্রিয়ায় কোনোভাবে একটি প্রশ্নপত্রও বাইরে যাওয়ার সুযোগ নাই। পরীক্ষায় দায়িত্ব পালনকারী মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, কলেজ কর্তৃপক্ষ, জেলা প্রশাসন, এমনকি প্রশ্নের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত পুলিশ প্রশাসন থেকে এ যাবত কোনো অভিযোগ কখনোই ওঠেনি।’
মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষার দিনের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, পরীক্ষার দিন আমি নিজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। সেখানে অবস্থানরত কয়েক শ অভিভাবক এবং সাংবাদিকের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে কথা বলেছি। তখনো কেউ প্রশ্ন ফাঁসের বিষয়ে আমার কাছে ন্যূনতম কোনো অভিযোগ করেনি। সর্বোচ্চ কঠোরতা ও নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে শতভাগ সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
কোনো শিক্ষক বা শিক্ষার্থী যাতে কোনোভাবেই ক্লাস ব্যাহত করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এবং হাসপাতালের পরিচালকদের নির্দেশ দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, সরকারি মেডিকেল কলেজের ভর্তি প্রায় শেষ হয়ে গেছে। বেসরকারি মেডিকেলে ভর্তির প্রক্রিয়াও শুরুর পথে। ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ভাগ্য অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া উচিত হবে না। কোনো অজুহাত দেখিয়ে স্বার্থন্বেষী মহলের প্ররোচনায় মেডিকেলের ক্লাস ব্যাহত হতে দেবেন না। সরকার সব রকম সহযোগিতা করবে। কিন্তু কারো গাফিলতি সহ্য করা হবে না।
এ সময়ে বেসরকারি বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, দুর্যোগ ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. আ ফ ম রুহুল হক, সংসদ সদস্য হাজি মো. সেলিম, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মো. নুরুল হক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সনালসহ দেশের সব সরকারি মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ও হাসপাতালের পরিচালকরা বক্তব্য দেন।