প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে গাজীপুরে কোচিংয়ের মালিকসহ আটক ২
পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলা থেকে এক কোচিং সেন্টারের মালিকসহ দুই যুবককে আটক করেছে র্যাব।
আটক দুজন হলেন উপজেলার যোগীরসীট এলাকার মো. রফিকুল ইসলাম (২৫) ও মো. আকরাম হোসেন (১৮)।
র্যাব-১-এর বিশেষ কোম্পানি পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, শ্রীপুরের কাওরাইদ ইউনিয়নের যোগীরসীট বাজার এলাকায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে প্রশ্নপত্র ফাঁস চক্রের সক্রিয় সদস্য রফিকুল ইসলাম ও আকরাম হোসেনকে আটক করা হয়েছে। এ সময় তাদের কাছ থেকে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজে ব্যবহৃত দুইটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন বিশ্লেষণ করে তাদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হোয়াটসঅ্যাপ ও ফেসবুকে প্রশ্নপত্র ফাঁসে সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক রফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, তিনি গাজীপুরের ভাওয়াল বদলে আলম সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। লেখাপড়ার পাশাপাশি রফিকুল ইসলাম তাঁর নিজস্ব কোচিং সেন্টার পরিচালনা করেন এবং সেখানে শিক্ষকতা করতো। ২০১৭ সালে বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে প্রশ্নপত্র ফাঁসের কাজ শুরু করেন। তিনি ফেসবুকে পোস্ট দিলে ছাত্রছাত্রীরা মেসেজ দিয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করতো। রফিকুল ২০১৭ সালের পিইসি, জেএসসি ও এসএসসি পরীক্ষায় ছাত্র-ছাত্রীদের আট থেকে দশটি পরীক্ষার প্রশ্ন বিতরণ করে মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন। তিনি বিভিন্ন লিংক থেকে প্রশ্নপত্র ডাউনলোড করে ফেসবুকে পোস্ট দিতেন এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে বিকাশের মাধ্যমে টাকা নিয়ে তাদের প্রশ্ন বিতরণ করার পর ফাঁসকৃত প্রশ্নগুলো ফেসবুক থেকে মুছে দিতেন।
র্যাব কর্মকর্তা দাবি করেন, জিজ্ঞাসাবাদে ২০১৮ সালে এসএসসি পাস করা মো. আকরাম হোসেন জানিয়েছেন, গত বছর নিজের ফেসবুক আইডি দিয়ে অনলাইনে প্রশ্নফাঁসের কাজে যুক্ত হন তিনি। তিনি দশটি পরীক্ষার প্রশ্নের পোস্ট দেন এবং ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে অনলাইনে তা বিতরণ করে বিকাশের মাধ্যমে টাকা আয় করেন। তবে তাঁর দেওয়া প্রশ্ন এবং পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কিছুটা পৃথক ছিল। তাঁর মোবাইল বিশ্লেষণ করে জানা যায় তিনি ও রফিক একই ফেসবুক আইডি থেকে প্রশ্নপত্র সংগ্রহ ও বিতরণের কাজ করতেন।
লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল-মামুন আরো বলেন, তাদের দেওয়া পোস্ট দেখে অনেক সুযোগ সন্ধানী শিক্ষার্থী প্রলোভনে পড়ে প্রশ্নপত্র পাওয়ার আকাঙ্ক্ষায় বিকাশের মাধ্যমে তাদেরকে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা পাঠাতো। এক্ষেত্রে আসামিদের ফেসবুক ও হোয়াটসঅ্যাপের বিভিন্ন লিংক বা গ্রুপ থেকে পাওয়া প্রশ্নপত্র সরবরাহ করতো। আবার কখনো আগের বিভিন্ন বোর্ড পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কাটছাট করে, এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে নিজেরাই প্রশ্নপত্র তৈরি করে সরবরাহ করতো। এভাবে প্রশ্নপত্র সরবরাহ করে আটক দুই যুবক বিভিন্ন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে বিকাশ ও বিভিন্ন পন্থায় বিপুল পরিমাণ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
‘আটক আসামিদের দেওয়া তথ্য যাচাই-বাছাই করে এই চক্রের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য সদস্যদের আটকের চেষ্টা চলছে। উদ্ধারকৃত মোবাইল ফোন এবং আটকদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’
এ ছাড়াও প্রশ্নফাঁসে জড়িত অসাধু সংঘবদ্ধ চক্রকে আইনের আওতায় আনতে র্যাব-১-এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের একটি বিশেষ টিম দীর্ঘদিন ধরে গোয়েন্দা নজরদারি চালু রেখেছে বলে জানান এই র্যাব কর্মকর্তা।