স্কুলছাত্রীকে যৌনপল্লীতে বিক্রি, ৫ বছর পর উদ্ধার
পাঁচ বছর আগে বাগেরহাটের মংলা উপজেলার এক স্কুলছাত্রীকে অপহরণের পর বিক্রি করা হয়েছিল যশোরের এক যৌনপল্লীতে। গতকাল শনিবার রাতে ওই যৌনপল্লী থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে র্যাব। আটক করে তিনজনকে। পাঁচ বছর পর মেয়েটি ফিরে পেয়েছে তার বাবা-মাকে।
র্যাব-৬ যশোর ক্যাম্পের অধিনায়ক স্কোয়াড্রন লিডার কাওছার হোসেন জানান, পাঁচ বছর আগে স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে চেতনানাশক ওষুধ খাইয়ে মেয়েটিকে অপহরণ করা হয়। জ্ঞান ফেরার পর মেয়েটি দেখতে পায়, একটি বদ্ধঘরের ভেতর তাকে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর সে বাড়িতে যেতে চাইলে যশোর যৌনপল্লীর রাবেয়া বেগম ও তাঁর স্বামী আবুল কাশেম মেয়েটিকে মারধর করে। এসব মারধরের চিহ্ন এখনো রয়েছে মেয়েটির শরীরে।
র্যাব কর্মকর্তা জানান, মেয়েটির বাবা-মা এ ব্যাপারে তাঁদের কাছে লিখিত অভিযোগ দিলে শনিবার রাতে যশোর শহরের মাড়োয়ারি মন্দিরসংলগ্ন যৌনপল্লীতে অভিযান চালান র্যাব সদস্যরা। সেখান থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করা হয় এবং যৌনপল্লীর হীরা শেখ, রাবেয়া ও তাঁর স্বামী কাশেমকে আটক করা হয়।
আটক তিনজনের বাড়ি যশোর শহরে। আজ রোববার বিকেলে র্যাব ওই মেয়ে ও আটক তিনজনকে মংলা থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। এ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা হয়েছে।
মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফুর রহমান জানান, মেয়েটি মংলার ব্র্যাক পরিচালিত একটি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে দুই নারী তাকে প্রলোভন দেখিয়ে যশোরের মাড়োয়ারি মন্দিরসংলগ্ন যৌনপল্লীতে বিক্রি করে দেয়। যৌনপল্লীর সর্দার রাবেয়া বেগম (৪০) দীর্ঘ পাঁচ বছর মেয়েটিকে আটকে রেখে দেহব্যবসা করাতেন। বিভিন্ন সময় মেয়েটি তার বাড়িতে যেতে চাইলে রাবেয়া তাকে মারধর করতেন এবং ঘরের মধ্যে আটকে রাখতেন। একপর্যায়ে এক খদ্দেরের মাধ্যমে মেয়েটি মংলায় তার পরিবারকে যৌনপল্লীতে আটকে থাকার খবর জানায়। পরে মেয়েটির বাবা গত ৯ অক্টোবর মংলা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এই ডায়েরির পরিপ্রেক্ষিতে ঘটনার তদন্তে নামেন র্যাব ৬-এর সদস্যরা। তারা মেয়েটিকে উদ্ধার করে। সেই সঙ্গে রাবেয়া বেগম (৪০), তাঁর কথিত স্বামী আবুল কাশেম (৫০) ও তাঁদের সহযোগী হীরা শেখকে (৩০) আটক করে বিকেলে মংলা থানায় নিয়ে আসে। এ ঘটনায় পাঁচজনকে আসামি করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মংলা থানায় একটি মামলা করা হয়েছে।
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মেয়েকে ফিরে পেয়ে তার বাবা-মা আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন। মেয়েটি সাংবাদিকদের জানায়, সে দীর্ঘদিন পর তার পরিবারের সদস্যদের ফেরত পেয়ে খুবই খুশি। পেছনের অন্ধকার গলির কথা ভুলতে চায় সে।