আইএস আছে, আইএস নেই
চলতি বছরের ১৮ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর খানবাড়ী চৌরাস্তা এলাকার একটি বাড়ি থেকে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। পুলিশ জানায়, বাংলাদেশ থেকে আইএস সদস্য সংগ্রহের জন্য গোপন বৈঠক করার অভিযোগে এদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ ঘটনায় ওই দিনই যাত্রাবাড়ী থানায় একটি মামলা করা হয়।
প্রায় পাঁচ মাস তদন্ত শেষে গত ১৫ মে এই মামলায় অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। অভিযোগে বলা হয়, গ্রেপ্তার হওয়া শাফায়াতুল কবীর বাংলাদেশে আইএসের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছিলেন। অভিযোগপত্রটি আমলেও নিয়েছেন আদালত। শিগগিরই শুনানির মধ্য দিয়ে বিচারকাজ শুরু হবে।
গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর সামিউর রহমান নামে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক ব্রিটিশ নাগরিককে সাংবাদিকদের সামনে হাজির করে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। পরে সংবাদ সম্মেলনে গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান দাবি করেন, আটক সামিউর আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট বা আইএসের সদস্য।
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি পুলিশের মুখপাত্র মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘সামিউর রহমানের দুটো উদ্দেশ্য ছিল- তাদের ভাষায়, শপ ওপেন ফর বাংলাদেশ অ্যান্ড মিয়ানমার। মানে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারে শপ ওপেন করবে। মানে এই যে একিউআইএসের যে ঘোষণা ছিল, সেই অনুসারে তারা কার্যক্রম চালাবে। সঙ্গে সঙ্গে যারা এই মুহূর্তে সিরিয়ায় যেতে চায় আইএসের সঙ্গে কার্যক্রম কিংবা একিউএসের সঙ্গে যারা যেই এলাকায় যেতে পারবে, সেই এলাকায় যাদের আধিপত্য তাদের সঙ্গেই তারা জিহাদে যোগদান করবে। এই রকম একটা প্রস্তুতির ভিত্তিতে তারা আলাপ-আলোচনা করছিল।’
ডিবির দাবি, আটক সামিউর রহমান আগেও সিরিয়ায় আসা-যাওয়া করেছেন।
এদিকে গত কয়েকদিনে বাংলাদেশে দুজন বিদেশি নাগরিক হত্যা ও এরপর হত্যার দায় স্বীকার করে আইএসের পক্ষে বিবৃতি দেওয়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলা হয়, বাংলাদেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই। প্রধানমন্ত্রীও এমন দাবি করেছেন।
বাংলাদেশে আইএস আছে নাকি নেই -এই বিতর্কের আগুনে নতুন করে ঘি ঢেলেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়কমন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক। আজ রোববার সকালে (১১ অক্টোবর) তিনি বলেন, ‘সংঘবদ্ধভাবে না থাকলেও দেশে বিচ্ছিন্নভাবে বা ব্যক্তিগতভাবে আইএস থাকতে পারে।’
মেহেরপুর মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এ কথা বলেন।
তবে কয়েকদিন ধরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলছেন, বাংলাদেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই। সম্প্রতি দুই বিদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনায় ইসলামিক স্টেট বা আইএস সদস্য জড়িত নয়।
সবশেষ গতকাল শনিবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে শ্রীকৃষ্ণাষ্টমী পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘জাপানি নাগরিক অত্যন্ত ভদ্রলোক, বয়স্ক একজন ভদ্রলোক। তিনি আবার মুসলমানও হয়েছিলেন। হয়ে নামাজ পড়তেন। তাঁকে কেন আইএস মারবে আমার জিজ্ঞাস্য। আর তিনি হলেন পল্লীবান্ধব, বাংলাদেশি বান্ধব। তাঁকে কেন আইএস মারবে? আর এই যে ইতালিয়ান ভদ্রলোক। তাঁর যে এনজিও, আমরা শুনেছি, আমরা পরীক্ষা করে দেখতিছি...এটা অনেকটা ইসরাইলের অত্যাচারে যারা অতিষ্ঠ হয়েছে তাদেরকে সহযোগিতা করে তাদের খাদ্য সরবরাহ করা জন্য এই এনজিওটা কাজ করত। তাদের আইএস মারবে কেন? কাজেই আইএস এখানে জড়িত নয়। এখানে অন্য কোনো কিছু আছে সেইটাই আমরা বাইর করছি।’
এর আগে গত ৩০ সেপ্টেম্বরও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রায় একই ধরনের বক্তব্য দিয়েছিলেন। সেদিন সচিবালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের নিশ্চিত করে আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেন, দেশে আইএসের কোনো অস্তিত্ব নেই।
এর আগে গত ৪ অক্টোবর গণভবনে সংবাদ সম্মেলনে দেশে আইএসের অস্তিত্ব নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকার জঙ্গিবাদীদের প্রশ্রয় দেয় না। এখন পর্যন্ত এখানে আইএসের কোনো ঘাঁটি গড়ে ওঠেনি।’
এর মাত্র দুদিন আগে ২ অক্টোবর ময়মনসিংহের আঠারোবাড়ি এলাকা থেকে এক স্কুলছাত্রকে আটক করা হয়। ওই সময় পুলিশ জানায়, আইএসে যোগ দেওয়ার ডাকসংবলিত লিফলেট প্রচারের সময় তাকে আটক করা হয়।