ভোলায় প্রকাশ্যে কারেন্টজাল দিয়ে জাটকা শিকার
ভোলার মেঘনা নদীতে নিষিদ্ধ কারেন্ট জালে ধরা পড়ছে ঝাঁকে ঝাঁকে জাটকা ইলিশ। জাটকা ধরা আর কারেন্ট জাল ব্যবহার নিষিদ্ধ হলেও এর সবই হচ্ছে প্রকাশ্যে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে জেলেদের অভিযোগ, এক শ্রেণির ব্যবসায়ী প্রশাসনের সঙ্গে যোগসাজসে এই জাটকা ধরতে তাঁদের বাধ্য করান। urgentPhoto
সরেজমিনে দেখা যায়, ভোলার মেঘনা নদীতে এখন জেলেদের ছোট আর বড় নৌকার ভিড়। নদীতে যেদিকেই তাকানো যায় চোখে পড়বে শুধু নৌকা আর নৌকা। মাছ ধরায় ভীষণ ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। কথা বলারও ফুরসত তাদের নেই। জাল ফেলা আর টেনে মাছ তুলে আনা নিয়েই এখন সব ব্যস্ততা।
প্রতিবার যখন জাল তুলছে জেলেরা তখনই জালজুড়ে উঠে আসছে একের পর এক ইলিশ। তবে সেগুলো বড় নয়, সবই জাটকা।
এসব জেলেরাও জানেন জাটকা ধরা আর কারেন্ট জাল নিষিদ্ধের কথা। এমন একজন জেলে মো. আবদুল খালেক বলেন, ‘এখন জাল ফেললেই সব গুঁড়া (জাটকা) পাওয়া যাচ্ছে। বিক্রি করতে গেলে তেমন দামও পাওয়া যাচ্ছে না। আর বড় ইলিশও খুব একটা পাওয়া যাচ্ছে না।’
আরেক জেলে মো. আমিনুল ইসলাম আমিন বলেন, ‘সব ব্যবসায়ী মিলে সিন্ডিকেট করে ইলিশ কিনছে। তাই দাম পাওয়া যাচ্ছে না। কিন্তু আমাদের কিছু করার নেই। তাদের ইলিশ না দিলে নদীতে মাছ ধরতে দেবে না। আটকে রাখবে জাল ও নৌকা।’
এক শ্রেণির ব্যবসায়ী প্রশাসনকে ‘ম্যানেজ’ করেই সব করছে বলে অভিযোগ করেন জেলেরা।
দাম না পাওয়া সম্পর্কে জেলেদের অভিযোগ বিষয়ে আড়তদার মো. ইউসুফ ব্যাপারী ও দুলাল হাওলাদার বলেন, এখন জাটকার মৌসুম। প্রচুর জাটকা ধরা পড়ছে নদীতে। তবে জেলেরা সঠিক দাম পাচ্ছে। আর তারা ঢাকার মোকামে নিয়ে দাম পাচ্ছে না। লোকসান হচ্ছে। এখানে দাম বেশি দিয়ে কিনতে হচ্ছে আর ঢাকায় কম দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
জাটকা নিষিদ্ধ হওয়ার পরও কেন কেনা হচ্ছে, জানতে চাইলে পুরো বিষয়টি এড়িয়ে যান ব্যবসায়ীরা। বলেন, ‘জেলেরা ধরে আর আমরা ক্রয় করি।’
নিষিদ্ধ জাটকা ধরা ও কারেন্ট জাল ব্যবহার সম্পর্কে ভোলা সদর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা পলাশ হালদার বলেন, ‘ইলিশ মাছ সারা বছর ডিম পেড়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে সারা বছরই জাটকা পাওয়া যাবে। তবে এই সময়টায় বেশি পাওয়া যাচ্ছে।’ কারেন্ট জাল বিষয়ে অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মো. সেলিম রেজা বলেন, ‘মা ইলিশ নিধন অভিযান সফল বলেই প্রতি বছর ইলিশ মাছের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে।’
তবে জাটকা পাওয়ার কথা স্বীকার করে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘কারেন্ট জাল ব্যবহার ও জাটকা ধরা নিষেধ। তাই কারেন্ট জাল ব্যবহার ও জাটকা ধরা নির্মূল করার চেষ্টা করছি। একই সঙ্গে মহামান্য হাইকোর্টের যেহেতু আর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই, সে ক্ষেত্রে কারেন্ট জাল উৎপাদনের স্থানে অভিযান চালিয়ে তা বন্ধ করে দেওয়া উচিত।’ সে লক্ষে কাজ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।