‘আমরা হত্যার বদলে হত্যা চাই’
লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে কুপিয়ে হত্যার প্রতিবাদ কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে স্বাধীন বাংলা বেতার সংগঠক ও মুক্তিযোদ্ধা কামাল লোহানী বলেছেন, ‘ওরা মেরে যাবে আর আমরা সহ্য করতে থাকব? আমরা চিৎকার করে শুধু বলতে থাকব, আমরা নিন্দা জানাই? আমরা হত্যার বদলে হত্যা চাই। ওরা যদি এভাবে মারতে থাকে, আমরা যিশুখ্রিস্টের মতো আরেকটা গাল পেতে দিতে পারব না। সে জগৎ এখন নেই। বাংলাদেশের মানুষ প্রমাণ করেছে, শুধু বায়ান্ন নয়, একাত্তরে পর্যন্ত... এ দেশের মানুষ মারতেও জানে।’
ব্লগার অভিজিৎ হত্যা ও রাফিদা বন্যার হত্যাচেষ্টাকারীদের শাস্তির দাবিতে আজ শুক্রবার বেলা পৌনে ১১টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করেন প্রতিবাদী ছাত্র-শিক্ষক নাগরিক।
নিরাপত্তাব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করে কামাল লোহানী বলেন, ‘পুলিশ তো কত নিরাপত্তার স্তরের কথা বলে। তিন স্তর, চার স্তর, কত স্তর নিরাপত্তার তারা ব্যবস্থা নিচ্ছে? কিন্তু স্তরের ভেতরে কোন স্তরে তাঁরা ছিলেন তখন মগ্ন? যেখানে অভিজিৎ এবং তাঁর স্ত্রী বন্যাকে এভাবে আক্রমণ করা হলো। ... কোথায় ছিলেন তাঁরা সেই মুহূর্তে।’
সমাবেশে মানবাধিকারকর্মী খুশী কবির বলেন, হত্যাকারীরা লেখার মাধ্যমে, লেখা দিয়ে যুক্তি খণ্ডনের সাহস পায় না। তাই ভিড়ের মধ্যে অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে মারে।
লেখক-কলামিস্ট আবুল মকসুদ বলেন, ‘একাত্তরের ঘাতক শক্তি অভিজিতের প্রাণ কেড়ে নিয়েছে।...অভিজিৎ বাংলাদেশের প্রগতিশীল সব মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। তাঁর হত্যাকাণ্ড ব্যক্তি অভিজিতের হত্যা নয়। তাঁর হত্যাকাণ্ড প্রগতিশীল মানুষের প্রতিনিধিকে হত্যা।...আমরা চেয়েছিলাম বাংলাদেশ হবে শান্তির নীড়, আজকে বাংলাদেশ বধ্যভূমিতে পরিণত হয়েছে...বাংলাদেশের প্রগতিশীল চিন্তা যেন হারিয়ে না যায়, সে জন্য দল-মত নির্বিশেষে শপথ গ্রহণ করি। যেন আর কোনো অভিজিৎ, কোনো দ্বিতীয় হুমায়ুন আজাদ আমাদের মধ্য থেকে হারিয়ে না যান।’
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন ঐক্য-ন্যাপ সভাপতি পংকজ ভট্টাচার্য, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ কামাল, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি সারোয়ার আলী, মানবাধিকারকর্মী হামিদা হোসেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানা দাশগুপ্ত।
‘আক্রান্ত মুক্তচিন্তা’ ব্যানারের এই সমাবেশে মিছিল নিয়ে যোগ দেয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্র ফেডারেশন।
এ ছাড়া অভিজিৎ রায়ের হত্যার প্রতিবাদে বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শাহবাগে গণ-অবস্থান কর্মসূচি পালন করছে গণজাগরণ মঞ্চ।
মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার অভিজিতের হত্যাকারীদের ‘দানব’ আখ্যায়িত করে বলেন, যতক্ষণ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করা না হয়, ততক্ষণ গণজাগরণের অবস্থান কর্মসূচি চলবে।
গণজাগরণ মঞ্চের কর্মীদের সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচিতে আরো উপস্থিত ছিলেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারকাত, উদীচীর কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সনাতন মালো উল্লাস, আরিফ নূর, সাবেক ছাত্রনেতা জীবনানন্দ জয়ন্তসহ অন্যরা।