পবায় আওয়ামী লীগের মুনসুর রহমান চেয়ারম্যান নির্বাচিত
রাজশাহীর পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মুনসুর রহমান বেসরকারি ফলাফলে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। নৌকা প্রতীক নিয়ে তিনি পেয়েছেন ৩৫ হাজার ৫১৯ ভোট। তাঁর নিকটতম ওয়ার্কার্স পার্টির মো. আশরাফুল হক তোতা হাতুড়ি প্রতীকে পেয়েছেন ছয় হাজার ৬১১ ভোট। এ ছাড়া আনারস প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আফজাল হোসেন পেয়েছেন ৮৪২ ভোট। মঙ্গলবার রাতে রিটার্নিং কর্মকর্তা বেসরকারি এই ফলাফল ঘোষণা করেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত উপজেলার ৭৯টি কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণভাবে ভোটগ্রহণ করা হয়। কোনো কেন্দ্রেই ভোটারদের উপস্থিতি চোখে পড়ার মতো ছিল না।
নির্বাচনে ভোটারদের অংশগ্রহণ কম হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে নির্বাচনে উপজেলা চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী আশরাফুল হক তোতা বলেন, হাতুড়ি প্রতীকের সমর্থক ও ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে। তাঁর মতে, ভোটারদের বেশিরভাগই তাঁর সমর্থক। আওয়ামী লীগ প্রার্থীর লোকজন বিষয়টি উপলব্ধি করতে পেরে ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দিয়েছে। ফলে সারিবদ্ধভাবে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেওয়ার মতো উপস্থিতি ছিল না।
তবে তাঁর এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগ প্রার্থী মুনসুর রহমান বলেন, এলাকায় ওয়ার্কার্স পার্টির সাংগঠনিক ভিত্তিই নেই। প্রচণ্ড গরম, নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী না থাকা এবং নৌকার বিপক্ষে শক্তিশালী প্রার্থী না থাকায় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস জন্মেছে যে নৌকার বিজয় শুধু সময়ের অপেক্ষা। এসব কারণে ভোটারদের উপস্থিতি তুলনামূলক কম ছিল বলে মনে করেন তিনি।
পবা উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে তিনজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এঁরা হলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী ও সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মুনসুর রহমান, ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী ও বর্তমান ভাইস চেয়ারম্যান আশরাফুল হক তোতা ছাড়া এবং স্বতন্ত্র প্রার্থী আফজাল হোসেন সুমন। ভাইস চেয়ারম্যান প্রার্থী পাঁচজন। এঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক, উপজেলা কৃষক লীগের সভাপতি ওয়াজেদ আলী খান, নওহাটা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রবিউল জামাল বাবলু, এএফএম আহাসান উদ্দিন মামুন ও আলমগীর হোসেন। এ ছাড়া মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনজন। এঁরা হলেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি বেগম সুফিয়া হাসান, আওয়ামী লীগ নেত্রী আরজিয়া বেগম ও রীতা বিবি।
নির্বাচন প্রসঙ্গে যুবমৈত্রী জেলা শাখার সভাপতি মনির উদ্দীন পান্না বলেন, বিভিন্ন ভোটকেন্দ্র সকাল থেকেই ছিল নৌকা প্রতীকের কর্মী-সমর্থকদের দখলে। তারা সেখানে বসে বসে চিহ্নিত করছে কারা ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী অর্থাৎ হাতুড়ির ভোটার। যখনই হাতুড়ির কোনো ভোটার ভোটকেন্দ্রে এসে উপস্থিত হয়েছে, তখনই তারা দেশীয় অস্ত্র প্রদর্শন করে তাদের বিভিন্নভাবে ভয়-ভীতি দেখিয়ে বাড়িতে ফেরত পাঠিয়েছে। তিনি বলেন, এই নির্বাচনকে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা যাবে না।
একই অভিযোগ করে হাতুড়ি প্রতীকের চেয়ারম্যান প্রার্থী আশরাফুল হক তোতা বলেন, হাতুড়ি প্রতীকের ভোটারদের ভোট দিতে না দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের ভোট দেওয়ার যে গণতান্ত্রিক অধিকার রয়েছে, তা হরণ করা হয়েছে।
পবা উপজেলার এবারের নির্বাচনে মোট ভোটার দুই লাখ ২৮ হাজার ১৩৭ জন। মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৭৯টি। সুষ্ঠুভাবে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন করতে সতর্ক অবস্থানে ছিল বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।