শরীয়তপুরের দুজনের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন চূড়ান্ত

মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শরীয়তপুরের সোলায়মান মোল্লা (৮৪) ও ইদ্রিস আলী (৬৮) সরদারের বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন চূড়ান্ত করেছে ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে এ প্রতিবেদন ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর ধানমণ্ডিতে তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংস্থার সমন্বয়ক আবদুল হান্নান খান ও তদন্ত কর্মকর্তা সানাউল হক এ তথ্য জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল হান্নান এনটিভি অনলাইনকে বলেন, শরীয়তপুর সদর থানায় ১৯৭১ সালের এপ্রিল ও জুন মাসে পাকিস্তানি বাহিনীর দোসর হয়ে এ দুই আসামি হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণসহ মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলেন। তাঁদের বিরুদ্ধে গত ১ এপ্রিল শরীয়তপুর থানায় মামলা হওয়ার পর তা পরে ট্রাইব্যুনালে স্থানান্তর করা হয়। আসামি সোলায়মান মোল্লাকে গত ১৫ জুন গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠানো হয়। তবে অপর আসামি ইদ্রিস আলী পলাতক রয়েছেন। ১ এপ্রিল তদন্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন তদন্ত শুরু করেন। তাঁদের বিরুদ্ধে মোট চারটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
সাত খণ্ডে ৮৫১ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামিরা হলেন শরীয়তপুর জেলার পালং থানার ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর মুসলিমপাড়ার অধিবাসী। তাঁদের বিরুদ্ধে আটক তালিকার (সিজার লিস্ট) তিনজনসহ মোট ২৮ সাক্ষী রয়েছেন। গত ৪ এপ্রিল থেকে ২৯ অক্টোবর পর্যন্ত মামলার তদন্ত শেষ করেন কর্মকর্তা হেলাল উদ্দিন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, আসামি সোলায়মান মোল্লা ১৯৭১ সালে পাকিস্তানিদের সাহায্য করার জন্য শান্তি কমিটি এবং রাজাকার বাহিনী গঠন করেন। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় শরীয়তপুরে তিনি হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ সব ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। সোলায়মান ১৯৬৩ সালের পর মুসলিম লীগের নেতা হিসেবে শরীয়তপুর জেলার পালং থানার সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।
অপর আসামি গাজী ইদ্রিস আলীও একই ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধ করেন। তিনি ১৯৬৯ সালে জামায়াতের ছাত্রসংগঠন ‘ইসলামী ছাত্র সংঘের’ নেতা ছিলেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় ইদ্রিস ইসলামী ছাত্র সংঘের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।
সোলায়মান মোল্লা ও ইদ্রিস আলীর বিরুদ্ধে যত অভিযোগ—
অভিযোগ-১ : ১৯৭১ সালের ২২ মে আসামিরা পাকিস্তান দখলদার সেনাবাহিনীর ১০০ থেকে ১৫০ জন সদস্য নিয়ে শরীয়তপুর জেলার পালং থানা এলাকায় কয়েকটি গ্রামে হামলা চালান। এ সময় তাঁরা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কৃষক আবদুস সামাদসহ প্রায় ২০০ হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে গুলি করে হত্যা করেন এবং বাড়ির মালামাল লুট করেন।
অভিযোগ-২ : ১৯৭১ সালের ২৬ মে জেলার পালং থানার মালোপাড়া ও রুদ্রকর গ্রামে হামলা চালিয়ে মঠের পুরোহিতকে গুলি করে হত্যা এবং গ্রামগুলোতে লুটপাট করেন। পরে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয়। মালোপাড়া থেকে ৩০/৪৫ জন নারী-পুরুষকে ধরে মাদারীপুর পাকিস্তান আর্মি ক্যাম্পে নিয়ে তিন দিন আটকে রেখে নারীদের ধর্ষণ করেন। পুরুষদের গুলি করে হত্যা করেন।
অভিযোগ-৩ : একাত্তরের জুন মাসে একই থানার শৈলেন্দ্র কৃষ্ণ পালের বাড়িতে হামলা চালিয়ে দুজনকে হত্যা করেন এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকে নির্যাতন করে বেয়োনেট দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেন।
অভিযোগ-৪ : ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ থেকে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত আসামিরা দখলদার বাহিনীর সহায়তায় এলাকায় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতনসহ বিভিন্ন অপরাধ করে। এ সময় মানবতাবিরোধী অপরাধ করার মাধ্যমে মানুষের মধ্যে ভয়ভীতি ও আতঙ্কের সৃষ্টি করে পালং থানার এক থেকে দেড় হাজার মানুষকে দেশ ত্যাগ করে ভারতের শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় গ্রহণে বাধ্য করেন।