এরশাদের সম্পত্তিতে কে কী পেলেন?
সাবেক রাষ্ট্রপতি এইচ এম এরশাদের মৃত্যুর পর কারা কী সম্পত্তি পাবেন মৃত্যুর আগে তা তিনি নিজেই নির্ধারণ করে দিয়ে গেছেন। এর মধ্যে বিলাস বহুল প্রেসিডেন্ট পার্ক, গুলশানের বাড়ি, দুটি ফ্ল্যাট এবং দলীয় কার্যালয় বণ্টন করে দিয়ে গেছেন এরশাদ।
এরশাদের পরিবারের সদস্য যারা
এইচ এম এরশাদের প্রথম স্ত্রী রওশন এরশাদ। পরে বিয়ে করেন বিদিশাকে। ১৯৮৩ সালে এরশাদ ও রওশনের ঘরে প্রথম সন্তান রাহগির আল মাহি (শাদ এরশাদ) জন্মগ্রহণ করেন। মালয়েশিয়ায় পড়াশুনা শেষ করে শেষে এখন ঢাকাতেই থাকেন। পেশায় তিনি একজন ব্যবসায়ী।
এরশাদের দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশা। তাঁদের সংসারে জন্ম নেয় এরিক এরশাদ। ২০০৫ সালে এরশাদ ও বিদিশার বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। এরিকের বয়স এখন ১৮ বছর। এরিক বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে বাবা এরশাদের সঙ্গে থাকতেন। গান বাজনায় বিশেষ পারদর্শিতা রয়েছে তাঁর। এরশাদ বিদিশার বিচ্ছেদের পর এরিকের দায়িত্ব নিয়ে আদালত পর্যন্ত গড়িয়েছিল। পরে আদালতের আদেশে এরিকের দায়িত্ব পান এরশাদ। এরশাদের সবচেয়ে প্রিয় সন্তান এরিক।
আরমান এরশাদ ও জেবিনকে দত্তক নিয়ে লালন পালন করেন এরশাদ। ‘আমার কর্ম আমার জীবন’ শীর্ষক এরশাদ তাঁর আত্মজীবনী গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন এই তিন ছেলে ও এক মেয়ের কথা। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান মারা যাওয়ায় এই সন্তানরাই এখন তাঁর উত্তরাধিকার।
আরমান এরশাদ থাকেন বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কে। আর কন্যা জেবিনের বিয়ের পর পরিবার নিয়ে বর্তমানে লন্ডনে আছেন।
এরশাদের সম্পত্তি
সর্বশেষ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় এরশাদ নির্বাচন কমিশনে যে হলফনামা জমা দিয়েছিলেন, তাতে তিনি তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন এক কোটি সাত লাখ টাকা। আর এই আয়ের উৎস দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত, সংসদ সদস্য, ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানী ও ব্যবসা থেকে।
এরশাদ ব্যবসা থেকে তাঁর আয় দেখান দুই লাখ ছয় হাজার ৫০০ টাকা। এ ছাড়া তিনি বছরে এক কেটি পাঁচ লাখ টাকা বেতন-ভাতা পেতেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় বিশেষ দূত হিসেবে সম্মানী ১৯ লাখ চার হাজার ৬৯৬ টাকা। সংসদ সদস্যের সম্মানী ১২ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের সম্মানী ৭৪ লাখ ৭১ হাজার ১০ টাকা।
এ ছাড়াও গুলশান ও বারিধারায় এরশাদের দুটি ফ্ল্যাট রয়েছে, যার দাম দেখিয়েছিলেন এক কোটি ২৪ লাখ টাকা। একটি দোকান রয়েছে যার মূল্য ৭৭ লাখ টাকা।
নির্বাচনী হলফনামার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এরশাদের হাতে নগদ অর্থ ছিল ২৮ লাখ ৫৩ হাজার ৯৯৮ টাকা। এ ছাড়া ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে এরশাদের জমা ছিল ৩৭ লাখ ৬৯ হাজার ৪৬ টাকা। ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে প্রায় ১৭ লাখ টাকা জমা রয়েছে। সোনালী ব্যাংকে প্রায় ৩৭ লাখ, ব্র্যাক ব্যাংকে ৭৩ হাজার ৩৪৩ টাকা এবং ইউনিয়ন ব্যাংকে ২৭ হাজার ৫২৪ টাকা ছিল এরশাদের। শেয়ারে অর্থের পরিমাণ ছিল তাঁর ৪৪ কোটি ১০ হাজার টাকা। সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ ও এফডিআর নয় কোটি ২০ লাখ টাকা, ডিপিএস নয় লাখ টাকা। আর এসব তথ্যই তাঁর নির্বাচনী হলফনামা থেকে পাওয়া যায়।
চলাচলের জন্য এরশাদের ৫৫ লাখ টাকা দামের ল্যান্ডক্রুজার জিপ, ১৮ লাখ টাকা দামের নিশান কার এবং ৭৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা দামের আরেকটি ল্যান্ড ক্রুজার জিপ রয়েছে। বাসায় ব্যবহারের জন্য ৬০ হাজার টাকা দামের ইলেকট্রনিক আসবাব ছিল তাঁর। তবে এরশাদের কোনো কৃষি ও অকৃষি জমি নেই।
হলফনামায় এরশাদ ঋণ দেখিয়েছেন ইউনিয়ন ব্যাংকে ৫৬ লাখ ১৯ হাজার ৬৮৯ টাকা এবং ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকে এক কোটি ৭৫ লাখ ৮৪ হাজার ৯৪৬ টাকা।
যা যাকে দান করেছেন
এরশাদ তাঁর সম্পত্তির কতটুকু কাকে দান করেছেন, সে বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো তথ্য কেউ জানেন না। তাঁর পরিবারের সদস্যরাও এ নিয়ে মুখ খোলেননি। কয়েক মাস আগে পাঁচ সদস্যের একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করে এরশাদ তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি সেখানে লিখিতভাবে দান করেছেন।
তবে ট্রাস্টি বোর্ডে দান করা সম্পত্তির বর্ণনা দেননি এরশাদ, সেখানে শুধু দানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ছোট ছেলে এরিককে বোর্ডে রেখেছেন এরশাদ। এ ছাড়া বোর্ডে আছেন এরশাদের একান্ত সচিব অবসরপ্রাপ্ত মেজর খালেদ আক্তার, চাচাতো ভাই মুকুল ও তাঁর ব্যক্তিগত কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর। তবে বড় ছেলে, স্ত্রী রওশন ও ভাই জি এম কাদেরকে ট্রাস্টি বোর্ডে রাখেননি এরশাদ।
এরশাদ তাঁর সম্পত্তির মধ্যে গুলশান ২-এর বাড়িটি অনেক আগেই স্ত্রী রওশনকে দিয়েছিলেন। বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ তাঁর সাবেক স্ত্রী বিদিশা এরশাদের একমাত্র ছেলে এরিক এরশাদের নামে দেওয়া হয়েছে। পালিত ছেলে আরমানকে দিয়েছেন গুলশানের অন্য একটি ফ্ল্যাট।
ঢাকার কাকরাইলে জাতীয় পার্টির প্রধান কার্যালয় এবং রংপুরের জাতীয় পার্টি অফিস দলকে দান করেছেন তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিরোধীদলীয় নেতা জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ আজ রোববার সকাল পৌনে ৮টায় ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর প্রথম জানাজা বাদ জোহর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় ইমামতি করেন কেন্দ্রীয় মসজিদের পেশ ইমাম আহসান হাবীব। এরপর তাঁর মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে নেওয়া হয়।