‘আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব মেলা ভালো লোক ছিলেন’
‘আমাদের জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাহেব মেলা (অনেক) ভালো লোক ছিলেন। গ্রাম থেকে শুরু করে স্যার অনেক কাজ করেছেন।’
কথাগুলো বলেছেন যশোর থেকে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের জানাজায় আসা আবদুল আওয়াল (৬৫)। আজ সোমবার সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় টানেলে জানাজায় আসা আওয়াল এনটিভি অনলাইনকে এই কথা বলেন।
আবদুল আওয়াল বলেন, ‘যখন রাজনীতি শুরু করি তখন থেকেই এরশাদের দল করি। একবার আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরেছিলেন। এক সময় দাপিয়ে রাজনীতি করেছি জাতীয় পার্টিতে। তখন আমাদের দিন ভালো আছিল।’
আবদুল আওয়াল আরো বলেন, ‘অনেকেই তাঁকে স্বৈরাচার বলেন। তাঁর বিরুদ্ধে নানা কথা বলেন। কিন্তু বর্তমানে কী স্বৈরশাসন চলে না? অথচ আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব কী না করেছেন দেশের জন্য। জাতীয় পার্টির বহু খারাপ সময় গেছে, কখনো ছেড়ে যাইনি। কারণ এরশাদকে মনে ধারণ করেছিলাম। কখনো বের হয়ে যেতে ইচ্ছে করেনি।’
আবদুল আওয়ালের সঙ্গে এসেছিলেন তাঁর বন্ধু হামিদ রহমান। তিনি বলেন, ‘সবাই বলে স্বৈরশাসক এরশাদ। আমি বলি, তাহলে বাংলাদেশের জন্য আরেকজন স্বৈরশাসক দরকার। তাহলে বাংলাদেশ আবার গ্রামীণ বাংলাদেশ হয়ে উঠবে। ভয়ডরহীন বাংলাদেশ গড়ে উঠবে আবার।’
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা আজ সোমবার সকালে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার টানেলে অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ছাড়াও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক নেতারা অংশ নেন।
এরশাদের জানাজায় অংশ নিতে সকাল থেকেই বৃষ্টি উপেক্ষা করে শত শত মানুষ জাতীয় সংসদ ভবনে আসতে থাকেন। এ জন্য কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। সারিবদ্ধভাবে তল্লাশির ভেতর দিয়ে সবাইকে ভেতরে প্রবেশ করতে হয়েছে। সারা দেশ থেকেই নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ এইচ এম এরশাদকে শ্রদ্ধা জানাতে আসেন সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায়।
সকাল ১০টার দিকে সাবেক রাষ্ট্রপতির মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) হিমঘর থেকে জাতীয় সংসদ ভবনে নিয়ে আসা হয়। এরশাদের লাশ দক্ষিণ প্লাজার টানেলে রাখার পর সেখানে তৈরি হয় আবেগঘন পরিবেশ। সেখানে দাঁড়িয়ে কেউ কেউ তাঁর ভালো কাজের সুনাম করছিলেন, কেউ অঝোরে কাঁদছিলেন।
সকাল ১০টা ৫০ মিনিটের দিকে জানাজা পড়ানো শুরু করেন ইমাম। তবে পেছন থেকে ইমামের কণ্ঠ শোনা যাচ্ছিল না বলে চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন জানাজায় অংশ নেওয়া মানুষ। জানাজায় ইমামতি করেন সংসদ সচিবালয় মসজিদের ইমাম আবু রায়হান। জানাজা শেষে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ এরশাদের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এরশাদকে শেষবারের মতো দেখতে জানাজায় আসা নেতাকর্মীরা হুমড়ি খেয়ে পড়ছিলেন।
জানাজা শেষে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ মরহুমের মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংসদনেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে তাঁর সামরিক সচিব শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ ছাড়া স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর পক্ষে সংসদের সার্জেন্ট অ্যাট আর্মস শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সংসদের ডেপুটি স্পিকার ফজলে রাব্বী নিজে গিয়ে ফুলেল শ্রদ্ধা জানান। সে সময় শত শত নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ সাবেক রাষ্ট্রপতিকে শ্রদ্ধা জানান।
এরপর এরশাদকে রাজধানীর কাকরাইলে দলের প্রধান কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। লাশ নিয়ে যাওয়ার পর পরই কান্নায় ভেঙে পড়েন তাঁর ছেলে এরিক এরশাদ। তখন পরিবারের লোকজন তাঁকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে যান। সেখানে নেতাকর্মীরা সাবেক এই রাষ্ট্রপতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান। বাদ আসর তাঁর আরেকটি জানাজা হয় জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। জানাজা শেষে তাঁর মরদেহ ফের সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়।
কাল মঙ্গলবার হেলিকপ্টারে করে এরশাদের মরদেহ রংপুর নিয়ে যাওয়া হবে। বাদ জোহর রংপুর জেলা স্কুলের মাঠে এরশাদের শেষ জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।
গতকাল রোববার সকালে ঢাকা সিএমএইচে মারা যান এইচ এম এরশাদ। গতকালই বাদ জোহর ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট কেন্দ্রীয় মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর তাঁর মরদেহ সিএমএইচের হিমঘরে রাখা হয়।
জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির (জাপা) চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের দ্বিতীয় জানাজা আজ সোমবার সকালে সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজার টানেলে অনুষ্ঠিত হয়। ছবি : ফোকাস বাংলা