জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই : জি এম কাদের
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের বলেছেন, ‘জাতীয় পার্টিতে কোনো বিভেদ নেই। জাতীয় পার্টির সবাই একসঙ্গে ঐক্যবদ্ধ আছেন।’ তিনি বলেন, ‘পল্লীবন্ধুর শোক শক্তিতে পরিণত করে আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে দলকে আরো শক্তিশালী করব। আরো শক্তিশালী দল হিসেবে জাতীয় পার্টি আরো এগিয়ে যাবে।’
আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের বনানী অফিসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জি এম কাদের।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে জি এম কাদের বলেন, ‘হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শূন্য আসনে মনোনয়ন দিতে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী দলীয় ফোরামে আলোচনা করেই প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে। এ ছাড়া বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনেও দলীয়ভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে আমরা স্পিকারকে জানিয়ে দেব।’
তিনি বলেন, ‘২৬ জুন থেকে পার্টি চেয়ারম্যান পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ অসুস্থ থাকায় আমরা দলীয় কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নিতে পারিনি। দলকে শক্তিশালী করতে অচিরেই সারা দেশে সাংগঠনিক টিম কাজ শুরু করবে।’
তিনি বলেন, ‘আজ আমি মিডিয়ার সব বন্ধুসহ যাঁরা পল্লীবন্ধু এরশাদের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন, সহমর্মিতা প্রকাশ করেছেন, যাঁরা তাঁর জানাজায় শরিক হয়েছেন, যাঁরা তাঁর শবযাত্রায় শামিল হয়েছেন, সারা দেশের মানুষ যাঁরা তাঁর জন্য দোয়া করেছেন, যাঁরা তাঁর আত্মার মাগফিরাত কামনা করেছেন, তাঁরাসহ গোটা দেশবাসীর প্রতি আমি, আমাদের পার্টি এবং আমাদের পরিবারের পক্ষ থেকে আপনাদের মাধ্যমে গভীর কৃতজ্ঞতা জানাতে এই সংবাদ ব্রিফিংয়ের আয়োজন করেছি।’
জি এম কাদের বলেন, ‘আমি আরো বিশেষভাবে কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদের গর্বিত তিন বাহিনীর সকল সদস্যদের প্রতি, যাঁরা পল্লীবন্ধু এরশাদকে সর্বোচ্চ সম্মান প্রদর্শন করেছেন। আমি কৃতজ্ঞতা জানাই বাংলাদেশে অবস্থানরত সকল কূটনৈতিক মিশনের সদস্যদের প্রতি, যাঁরা পল্লীবন্ধু এরশাদের প্রতি গভীর শোক প্রকাশ করেছেন, আমি কৃতজ্ঞতা জানাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের সুদক্ষ চিকিৎসকদের প্রতি, যাঁরা অক্লান্ত পরিশ্রম করে পল্লীবন্ধু এরশাদকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। আমি আরো কৃতজ্ঞতা জানাই যে সকল স্টাফ পল্লীবন্ধুর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁকে সেবা দিয়েছেন। গতকাল আজাদ মসজিদে অনুষ্ঠিত পল্লীবন্ধুর কুলখানিতে যেসকল বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এবং সর্বস্তরের জনগণ অংশগ্রহণ করেছেন তাদের প্রতিও আমি কৃতজ্ঞতা জানাই।’ তিনি আরো বলেন, ‘আপনারা বিগত দিনগুলোর মতো আজও আমার আহ্বানে সাড়া দিয়ে এখানে উপস্থিত হয়ে আমাকে আবারও কৃতজ্ঞতার পাশে আবদ্ধ করেছেন।’
তিনি বলেন, ‘পল্লীবন্ধু এরশাদ গত ২৬ জুন গুরুতর অসুস্থ হয়ে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি হওয়ার পর থেকে টানা ১৬ দিন আপনারা এখানে এসে তাঁর স্বাস্থ্যের অবস্থা সম্পর্কে আমার ব্রিফিং শুনেছেন, আপনাদের স্ব-স্ব মিডিয়ায় তা প্রচার ও প্রকাশ করেছেন, সরাসরি সম্প্রচার করেছেন, কোনো কোনো দিন আপনারা দিনে দুবারও এসেছেন, আবার সারা দিন এখানে অপেক্ষাও করেছেন পল্লীবন্ধুর অবস্থা জানার জন্য। ১৪ জুলাই তারিখ সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে পল্লীবন্ধু এরশাদ শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করার পর রংপুরে তাঁর দাফন পর্যন্ত আপনারা মিডিয়াকর্মীরা যে অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন, তা আমার কাছে বর্ণনাতীত। এর জন্য শুধু কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলে খুব কম হয়ে যাবে। আমরা আপনাদের এই অবদানের কথা কোনোদিন ভুলতে পারব না।’
জি এম কাদের বলেন, ‘পল্লীবন্ধুকে দাফন করার ব্যাপারে দুটি প্রস্তাব ছিল—এক. ঢাকার বনানীর সেনা কবরস্থান এবং দুই. রংপুরে তাঁর নিজ বাসভবন পল্লীনিবাসে। শেষ পর্যন্ত রংপুরবাসীর ভালোবাসার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে আমরা পারিবারিকভাবে রংপুরেই তাঁকে সমাহিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি এবং সেখানে সম্পূর্ণ রাষ্ট্রীয় এবং সামরিক মর্যাদায় তাঁকে দাফন করা হয়েছে। আমরা অচিরেই পল্লীবন্ধুর স্মরণে একটি স্মরণসভার আয়োজন করব।’
এর আগে জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি বলেন, ‘অসুস্থ হওয়ার আগে পল্লীবন্ধু হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সাংগঠনিক নির্দেশে গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপিকে পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান এবং পল্লীবন্ধুর অবর্তমানে গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপিকে পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে ঘোষণা করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপি চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন।’ গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানিয়ে মসিউর রহমান রাঙ্গা এমপি এখন থেকে গোলাম মোহাম্মদ কাদের এমপিকে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখ করতে অনুরোধ জানান।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, সুনীল শুভরায়, এস এম ফয়সাল চিশতী, মো. আজম খান, এ টি ইউ তাজ রহমান, মেজর (অব.) খালেদ আখতার, শফিকুল ইসলাম সেন্টু, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, উপদেষ্টা ড. নুরুল আজহার, ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ইকবাল হোসেন রাজু, মোস্তাকুর রহমান মোস্তাক, জহিরুল আলম রুবেল, আহসান আদেলুর রহমান আদেল এমপি, যুগ্ম মহাসচিব গোলাম মোহাম্মদ রাজু, হাসিবুল ইসলাম জয়, আমির উদ্দিন আহমেদ ডালু, সুলতান আহমেদ সেলিম, সম্পাদকমণ্ডলী শাহজাহান মানসুর, এম এ রাজ্জাক খান, কেন্দ্রীয় নেতা এনাম জয়নাল আবেদীন, ফজলেহ এলাহী সোহাগ, সুজন দে, আবদুস সাত্তার, বেলাল হোসেন, আনোয়ার হোসেন তোতা, জাহাঙ্গীর আলম।