একই পরিবারে ১১ হামলা, কোনো গ্রেপ্তার নেই
সাতক্ষীরায় সোমবার দিনে-দুপুরে গুলি করে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা নজরুল ইসলাম হত্যার ঘটনায় তাঁর ছেলে এনামুল হক পলাশ বাদী হয়ে সাতক্ষীরা থানায় মামলা করেছেন। এতে তিনি সুনির্দিষ্টভাবে কারো নাম উল্লেখ না করলেও বলেছেন, ‘আমার বড় চাচা সিরাজুল ইসলাম ও চাচাতো ভাই রাসেল কবিরকে যারা পৃথক ঘটনায় হত্যা করেছিল তারাই আমার বাবাকে গুলি করে হত্যা করেছে।’
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের কুচপুকুর গ্রামে নজরুল ইসলামের পরিবারের ওপর ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১ বার হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা হলেও তাতে একজনকেও গ্রেপ্তার করা হয়নি।
সাতক্ষীরার ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. ইলতুৎমিশ জানান, নজরুল ইসলাম হত্যা মামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে সাঁড়াশি অভিযান চলছে। অচিরেই আসামি গ্রেপ্তার হবে বলে আশা করছি।
সোমবার রাতে দায়ের করা মামলায় এনামুল হক পলাশ উল্লেখ করেন, তার বাবা ও পরিবারের সঙ্গে স্থানীয় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য তৌহিদের বিরোধ চলছিল। এই তৌহিদের বাড়ির সামনেই কদমতলার হাজামপড়ায় বাবাকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
পলাশ জানান, তাঁর বড় চাচা মো. সিরাজুল ইসলামকে ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর বাড়িতে ঢুকে গুলি করে হত্যা করে সন্ত্রাসীরা। এ সময় তাদের বাড়িঘর আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। এ মামলার বাদী ছিলেন সিরাজুল ইসলামের ছেলে রাসেল কবির। সেই রাসেল কবিরকে সন্ত্রাসীরা ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল রাতে শহরের কলেজপাড়ায় গুলি করে হত্যা করে। এ সংক্রান্ত দুই মামলায় আসামি ছিলেন আসগর আলী, আক্তার আলী, কবির হোসেন, মুকুল, শাহিনুর, আবুল খায়ের, মতিয়ার, রেজাউল, আইউব আলী, আইউব হোসেন, রাজু, মহব্বত, তৌহিদ, ইমাম, ইয়াকুব ও ইকবাল। তারা সবাই তার বাবা নজরুল হত্যায় জড়িত বলে দাবি করেন পলাশ।
পলাশ আরো বলেন, নিজের ভাই ও ভাতিজাকে হারিয়ে তার বাবা নজরুল ইসলাম ভীত হয়ে পড়েন। তিনি জীবনের নিরাপত্তার জন্য রাতে সাতক্ষীরা থানায় থাকতেন। কিছুদিন আগে থেকে তিনি বাড়িতে থাকা শুরু করেন।
পলাশ বলেন, তাঁর চাচাতো ভাই রাসেল কবিরও জীবনের ভয়ে গ্রামের বাড়ি কুচপুকুর ছেড়ে শহরের ভাড়া বাড়িতে থাকতেন। তিনিও শেষ পর্যন্ত সন্ত্রাসীদের হাত থেকে বাঁচতে পারেননি। ‘আমরা আতঙ্কিত। এখন আমাদের পুরো পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।’
সদর উপজেলার আগরদাঁড়ি ইউনিয়নের কুচপুকুর গ্রামের নজরুল পরিবারে সিরিজ হামলার ঘটনায় তিনি নিজে, তাঁর ভাই ও ভাতিজা খুন হওয়া ছাড়াও পরিবারটির ওপর বিভিন্ন সময়ে বোমা হামলা ও গুলি বর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। জানা গেছে, নজরুল ইসলাম পরিবারের ওপর ২০১৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১১ বার সন্ত্রাসী হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব হামলায় তাঁর আপন ভাই ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগ কর্মী সিরাজুল ইসলাম নিহত হন। ২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল সিরাজুল ইসলামের ছেলে ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল কবির শহরের কলেজপাড়ায় সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। সর্বশেষ গতকাল সোমবার সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হলেন নজরুল ইসলাম। এর আগে ২০১৭ সালের ২২ মার্চ রাতে রাসেল কবিরের বাড়িতে বোমা হামলায় রাসেল ও তাঁর ভাই আহত হন।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ২০১৩ সালের ৩ মার্চ নজরুল ইসলামের বাড়ি সংলগ্ন ধান চালের আড়তে আগুন ধরিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। সে বছর ১২ মে নজরুল ও তার ভাই আমজাদকে গুলি করে আহত করে সন্ত্রাসীরা। সে বছরের ২৭ জুন তাদের দোকানে চারটি বোমা নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। এ সময় নজরুলের বোন শাহানা খাতুন ও শাহানারার স্বামী জাহান আলী আহত হয়ে পঙ্গু হয়ে যান। ২০১৩ সালের ২০ জুলাই তাদের পরিবারে বোমা নিক্ষেপে আহত হয় একটি শিশু। ২০১৬ সালের ৮ এপ্রিল বোমা হামলায় ফের আহত হন নজরুল ইসলাম। ২০১৩ সালের ৫ ডিসেম্বর নজরুলের বোন জামাই কাওসার ও তার ছেলে সিমল গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। ২০১৩-এর ১৬ নভেম্বর নজরুলের আত্মীয় ইউসুফকে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তুলে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। পরে অবশ্য মুক্তি পেয়ে ফিরে আসেন তিনি।
নজরুলের পারিবারিক সূত্র জানিয়েছে, এসব হামলার প্রত্যেকটি ঘটনায় মামলা হয়েছে। কিন্তু কোনো মামলায় কেউ গ্রেপ্তার হয়নি। নিহত নজরুলের ছেলে এনামুল হক পলাশ আরো জানান, তাদের পরিবারের সদস্যদের হত্যা ও অন্যান্য হামলার সঙ্গে জড়িত আগরদাঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনারুল ইসলাম ২০১৩ সালের ৩০ ডিসেম্বর তারিখে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। এ ছাড়া আরেক আসামি হবিবর রহমান ওরফে হবি ডাকাতের গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার হয় একই বছরের ১৫ ডিসেম্বর।
এ নিয়ে ভারপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার মো. ইলতুৎমিশ বলেন, ওই পরিবারের মামলার সংখ্যাটা নিশ্চিত বলতে পারছি না, ৯টি অথবা ১১টি। তবে প্রতিটি মামলায় অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়েছে।