‘হনুমানটির আচরণ ছিল মানুষের মতো’
কাচের টুকরো লেগে গত বৃহস্পতিবার আহত হয়েছিল কালোমুখো একটি হনুমান। এরপর তাকে চিকিৎসার জন্য নেওয়া হয় সাতক্ষীরার তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে। সেখানে টানা দুদিন তার চিকিৎসা চলে। কিন্তু চিকিৎসা শেষ না করেই সঙ্গীরা আজ শনিবার ওই হনুমানটিকে নিয়ে চলে গেছে।
তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের চিকিৎসক শাহিনুর রহমান জানান, উপজেলার সুভাষিণী এলাকার এক ব্যক্তি আহত হনুমানটিকে ভ্যানে করে এনেছিলেন তাঁর কাছে। জানালার কাচের আঘাতে হনুমানটির তলপেট চিরে রক্তক্ষরণ হচ্ছিল।
শাহিনুর রহমান জানান, হনুমানটি চিকিৎসা গ্রহণের সময় পুরোপুরি মানবসন্তানের মতোই আচরণ করে। দুদিন ধরে হনুমানটিকে তিনি সব ধরনের চিকিৎসা দিয়ে তার বিশ্রাম ও আহারের ব্যবস্থা করে দেন। তার সুস্থ হতে আরো সপ্তাহ দুয়েক সময় লাগত। কিন্তু তার আগেই আজ সকালের দিকে হনুমানটির দুই সঙ্গী এসে তাকে সঙ্গে করে নিয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন তাঁর অফিস কর্মচারী।
সুভাষিণী গ্রামের ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান জানান, হনুমানটি দুই তিনদিন ধরে তাঁর বাড়ির পাশে একটি বড় গাছে আশ্রয় নিয়েছিল। বৃহস্পতিবার হনুমানটি তাঁর বাড়ির দোতলায় উঠে জানালার কাচের কাছে গিয়ে তার প্রতিচ্ছবি দেখতে পেয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে জানালায় আঘাত করে। এতে কাচ ভেঙে তার পেটের তলদেশে বিদ্ধ হয়।
মারাত্মক জখম হয়ে পড়ায় কামরুজ্জামান প্রতিবেশীদের সহায়তায় সাহস করে হনুমানটিকে উদ্ধার করে একটি ভ্যানে তুলে নিয়ে যান তালা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয়ে। তিনি জানান, ধরাধরি করে ভ্যানে তোলা এবং নিয়ে যাওয়ার সময় থেকে হনুমানটি তাঁদের সঙ্গে কোনো রকম পশুসুলভ আচরণ করেনি। এমনকি চিকিৎসক তাঁর চিকিৎসার জন্য যে যে ব্যবস্থা নিয়েছেন তাতেও সে বাধা দেয়নি।
এর আগে খবর পেয়ে তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনৎ কুমারসহ সুধীজনরা হনুমানটিকে দেখতে আসেন। তাঁরা হনুমানটির আশ্রয়, চিকিৎসা ও আহারের নিশ্চয়তা দিয়ে হনুমানটির যত্ন নেওয়ার আহ্বান জানান।
স্থানীয় লোকজন জানান, পাশের যশোরের কেশবপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে রয়েছে বিপুলসংখ্যক হনুমান। এরা এখন খাদ্য সংকটে কেশবপুর ছেড়ে এদিক-ওদিক চলে যেতে শুরু করেছে। তালায় আঘাত খেয়ে অসুস্থ হনুমানটি এদেরই একটি বলে জানান তাঁরা।