বোমায় পায়ের মাংস উড়ে যায় এএসআই শাহাবুদ্দিনের
‘মন্ত্রীর নির্দেশে সায়েন্স ল্যাব মোড়ের ট্রাফিক পুলিশকে সিগন্যাল ছাড়তে অনুরোধ করলাম। দ্রুত সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ায় আমি মন্ত্রীর প্রটোকলের গাড়ির দিকে এগোচ্ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে বোমা বিস্ফোরিত হয়। এতে আমার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশের কিছু মাংস উড়ে যায়। দুই পায়েই স্প্লিন্টারের আঘাত লাগে।’
আজ সোমবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হলে পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) শাহাবুদ্দিন এসব কথা বলেন।
গত শনিবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর সায়েন্স ল্যাব মোড়ে বোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। ওই সময়ের কথা স্মরণ করে এএসআই শাহাবুদ্দিন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘হঠাৎ বিকট শব্দ। তবে বোমা দেখার সুযোগ হয়নি আমার। কিন্তু বিস্ফোরণের পর পরই দেখি, আমার ডান পায়ের হাঁটুর নিচের অংশের কিছু মাংস উড়ে গেছে। তখন ডান পায়ের ভেতরে বিদ্ধ হওয়া স্প্লিন্টার বের হয়ে গেলেও বাঁ পায়ের ভেতরে স্প্লিন্টার আটকে ছিল।’
এই ঘটনায় হতবাক হয়ে গিয়েছিলেন শাহাবুদ্দিন। তিনি বলেন, ‘বোমা বিস্ফোরণের পরও আমি পড়ে যাইনি। দাঁড়িয়ে ছিলাম রাস্তার ওপর। দাঁড়িয়ে থেকে শুধু মানুষের দৌঁড়ানো দেখেছি। আমার যেন কিছুই করার ছিল না। ঘটনার মিনিট পাঁচেকের ভেতরে আমাকে পপুলার হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে কিসে আমাকে নেওয়া হয়েছিল তা আমার মনে নেই। কিন্তু পপুলার আমাকে চিকিৎসা দিতে রাজি হয়নি। এরপর সেখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে যাওয়া হয়। তারপর অপারেশন করে বাঁ পায়ের স্প্লিন্টার বের করা হয়।’
কোথা থেকে বা কীভাবে বোমাটি ছোড়া হয়েছিল এসব জানেন না এএসআই শাহাবুদ্দিন। তবে তিনি বলেন, ‘স্থানীয় সরকার বিভাগের মন্ত্রী তাজুল ইসলাম স্যারের সঙ্গে তেজগাঁও থেকে ধানমণ্ডির সীমান্ত স্কয়ারে যাচ্ছিলাম আমরা। আমি ছিলাম ওই প্রটোকল টিমের কমান্ডার। স্যারের আগের গাড়িতে ছিলাম। শাহবাগ হয়ে সায়েন্স ল্যাবের দিকে যাচ্ছিলাম আমরা। সিগন্যালে বড় জ্যাম থাকায় মন্ত্রীর নির্দেশে আমি মোড়ের ট্রাফিকের দায়িত্বরত পুলিশকে সিগন্যাল ছেড়ে দিতে অনুরোধ করি। তারপর তিনি সিগন্যাল ছেড়ে দেন। দ্রুত সিগন্যাল ছেড়ে দেওয়ায় সামনে আগানোর জন্য প্রটোকলের গাড়ি আসতে থাকে। আমিও সায়েন্স ল্যাব মোড় থেকে গাড়ির দিকে হেঁটে যাচ্ছিলাম। এমন সময় বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয় বোম। সম্ভবত উপর থেকেই বোমাটি ছোড়া হয়। তবে আমি নিশ্চিত নই। অথচ আমি অনুরোধ না করলে আর সিগন্যালটা একটু দেরীতে ছাড়লে কিন্তু আমি আক্রান্ত হতাম না। সবই কপালের লিখন।’
শাহাবুদ্দিন আরো বলেন, ‘বোমা বিস্ফোরিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে রেখে স্যারের গাড়ির ড্রাইভার সিগন্যাল ক্রস করে সামনের দিকে চলে যায়। কারণ স্যারের (মন্ত্রী তাজুল ইসলাম) গাড়ির ড্রাইভার জানতেন না আমি গাড়িতে নেই। সিগন্যাল ক্রস করেই যখন স্যার জানতে পারলেন আমি গাড়িতে নেই, তখনই আবার ব্যাক করে আমার কাছে চলে আসেন স্যার। তারপর আমাকে পপুলার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু তারা কী কারণে জানি না, আমাকে চিকিৎসা দিল না। পরে আমাকে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে আসা হয়।’
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১০১ নম্বর কেবিনের ক্যাজুয়্যালিটি ওটিতে গিয়ে দেখা যায়, এএসআই শাহাবুদ্দিন শুয়ে আছেন। সোজা হয়ে বসতে পারেন না তিনি। কারণ, তাঁর দুই পায়েই প্লাস্টার করা। পাশে আছেন স্ত্রী। তিনি সেবা করছেন স্বামীর। দ্রুত সুস্থ হওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী শাহাবুদ্দিন।
সুস্থ হওয়ার ব্যাপার নিয়ে যখন কথা হচ্ছিল তখন শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘আইজিপি স্যার, র্যাবের ডিজি স্যার এবং আমার কমিশনার স্যারসহ অনেকেই আমাকে দেখতে এসেছিলেন। সবাই যেভাবে আমাকে সাহস দিয়েছেন তাতে আমি অর্ধেক সুস্থ হয়ে গেছি। আর দ্রুতই মোটামুটি সুস্থ হয়ে যাব বলে আমি আশা করছি। কিন্তু আমার আক্ষেপ হচ্ছে, আমি কখনো কোনোদিন একটা টাকা দুর্নীতি করে খাইনি। সৃষ্টিকর্তা আমার সঙ্গেই কেন এমন করল?’
গত ৩১ আগস্ট শনিবার রাত প্রায় সাড়ে ৯টার দিকে সায়েন্স ল্যাব মোড়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে হাতবোমা হামলা চালায় দুর্বৃত্তরা। এতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী তাজুল ইসলামের নিরাপত্তায় নিয়োজিত পুলিশের এএসআই শাহাবুদ্দিন ও ট্রাফিক কনস্টেবল আমিনুল ইসলাম আহত হন। এ ঘটনার দায় স্বীকার করে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস ‘সাইট ইন্টেলিজেন্স’ বিবৃতি দেয়। আজ ওই ঘটনার তদন্তে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে।