মেহেদির রং না মুছতেই হাসপাতালে ঠাঁই
জন্মের আগেই বাবাকে হারিয়ে মামার সংসারে আশ্রয় হয়েছিল অসহায় মেয়েটির। এর পর ‘আধপাগল’ মা আর মামির কাছে আদর আর সোহাগ ছাড়াই বেড়ে ওঠা। মাত্র কদিন আগেই পিতৃহারা মেয়েটি পা দিয়েছিল আঠারোয়। আর বিয়ের বয়সের এই আইনি গণ্ডি পার হতে না-হতেই গত শুক্রবার স্বামীর সংসারে যায় সে।
urgentPhoto
হাতে মেহেদির রং আর নবীন চোখে নতুন জীবনের স্বপ্ন। কিন্তু মেহেদির রং মোছার আগেই নির্যাতনে মেয়েটির ঠাঁই হয়েছে হাসপাতালে। বিয়ের চার দিনের মাথায় হাতের মেহেদির লাল আলপনার মতোই সারা শরীরে তাঁর নির্মম নির্যাতন আর বর্বরতার চিহ্ন।
সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে এখন চিকিৎসাধীন মেয়েটি। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নির্যাতিতার শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অনেক বেশি শারীরিক নির্যাতন করায় তাঁর অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের বেডে শুয়ে এই ‘সংকটাপন্ন’ মেয়েটিই ইশারায় সংবাদমাধ্যমকে জানায়, স্বামীসহ তিনজন তাঁকে সোমবার রাতভর নির্যাতন করেছে!
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে ঘটেছে এমন লোমহর্ষক ঘটনাটি। এ ঘটনায় মঙ্গলবার কোম্পানীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নির্যাতিতার মামা কাঁচা মিয়া।
মামলার এজাহারে বলা হয়, গত ৬ নভেম্বর বিয়ে হয় মেয়েটির। বিয়ের তিন দিনের মাথায় ৯ নভেম্বর রাতে যৌতুকের দাবিতে নববধূর ওপর নির্যাতন চালানো হয়। স্বামী ও তাঁর স্বজনরা মিলে রাতভর মেয়েটিকে নির্যাতন করে। একপর্যায়ে তাঁকে বিবস্ত্র করে দেহের স্পর্শকাতর অঙ্গে লোহার রড দিয়ে পেটায়। এতে শরীরে মারাত্মক ক্ষতের সৃষ্টি হয়। এটুকুতেই ক্ষান্ত হয়নি মেয়েটির শ্বশুরবাড়ির লোকেরা, মেয়েটির লম্বা চুল কেটে ফেলেছে। নির্যাতনের পর মেয়েটিকে রাতভর ঘরে তালাবদ্ধ করে রাখা হয়। সকালে খবর পেয়ে নির্যাতিতার মামা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও পরে সিলেট এমএজি ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে যান।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, নির্যাতিতার অবস্থা এখনো আশঙ্কাজনক। এনটিভির সঙ্গে আলাপচারিতায় এমএজি ওসমানী হাসপাতালের অর্থপেডিক্স ইউনিট-২-এর কর্তব্যরত চিকিৎসক ফয়সাল আহমদ মহিন জানান, কিশোরীর চোখ, হাতসহ দেহের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন আছে।
নির্যাতিতার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, পারিবারিকভাবে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের আবদুর রহিমের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল মেয়েটির। বিয়ের পরের দিন থেকে সিএনজি অটোরিকশাচালক স্বামী আবদুর রহিম নববধূকে একটি মোটরবাইক ও পাঁচ লাখ টাকার জন্য চাপ দেয়। এরই একপর্যায়ে মেয়েটিকে নির্যাতন করে ও মাথার চুল কেটে নেয়।
নির্যাতিতার মামা কাঁচা মিয়া বলেন, ‘ফিরানির পর শ্বশুরবাড়ি গেলে ছেলেপক্ষ মেয়েকে মোটরসাইকেল আর নগদ পাঁচ লাখ টাকার জন্য চাপ দেয়।’ একপর্যায়ে বাড়ির সবাই মিলে নির্যাতন করে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নির্যাতিতাকে দেখতে এসে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাসরিন জাহান। তিনি এ ঘটনার ঘৃণা জানানোর পাশাপাশি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে কোম্পানীগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. রুহুল আমিন এনটিভিকে বলেন, ‘মামলা হওয়ার পর বিষয়টি সম্পর্কে জেনেছি। এর তদন্তের জন্য উপপরিদর্শক (এসআই) শংকর নন্দী মজুমদারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি বাদী ও বিবাদীর বাড়িতে গিয়েছিলেন, তবে সেখানে ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কাউকে পাননি। এর পর তিনি সিলেট ওসমানী হাসপাতালে নির্যাতিতার সঙ্গে কথা বলেছেন।’ তদন্ত শেষ হওয়ার পরই ঘটনা সম্পর্কে বিস্তারিত জানাতে পারবেন বলে জানান তিনি।