বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ওমর আলী আর নেই
‘এ দেশে শ্যামল রং রমণীর সুনাম শুনেছি’ খ্যাত বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত কবি ওমর আলী আর নেই। আজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৪টায় পাবনা সদর উপজেলার কোমরপুর গ্রামে নিজ বাড়িতে ইন্তেকাল করেন তিনি (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
ওমর আলীর বয়স হয়েছিল ৭৮ বছর। তিনি স্ত্রী, তিন ছেলে ও চার মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে পাবনা জেলা পরিষদের প্রশাসক এম সাইদুল হক চুন্নু, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
কবি ওমর আলী পাবনা সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের ইংরেজি বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন। বাংলা ও ইংরেজিতে এম এ করা এই শিক্ষাবিদ ও কবি ১৯৩৯ সালের ২০ অক্টোবর জন্মগ্রহণ করেন পাবনা শহরের দক্ষিণে চর শিবরামপুর গ্রামে। কবিতায় বিশেষ অবদানের জন্য তিনি ১৯৮১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে এম এ এবং ১৯৭৫ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্যে এম এ পাস করেন। তাঁর ৪৩টি কাব্যগ্রন্থ ও দুটি উপন্যাস রয়েছে। এ দেশে শ্যামল রং রমণীর সুনাম শুনেছি, কুতুবপুরের হাসনাহেনা, খান ম্যানসনের মেয়ে প্রভৃতি তাঁর উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
কবির ছোট ছেলে মফিজ সরোয়ার আলী জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টায় কোমরপুর বাজারে এবং রাত পৌনে ৯টায় পাবনা টাউন হল ময়দানে জানাজা শেষে তাঁর বাবাকে আরিফপুর সদর কবরস্থানে দাফন করা হয়।
৫০ দশকের অন্যতম প্রধান কবি ও বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত ওমর আলী পাবনা সদর উপজেলার পদ্মা নদী তীরবর্তী নিভৃত পল্লী চরআশুতোষপুর গ্রামের নিজ বাড়িতে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় ছিলেন। ২০১২ সালের ২৩ মার্চ তিনি স্ট্রোকে গুরুতর অসুস্থ হন। তখন থেকেই তিনি শয্যাশায়ী ছিলেন।
ষাটের দশকের অন্যতম প্রধান কবি ও বাংলা একাডেমির পুরস্কারপ্রাপ্ত অধ্যাপক ওমর আলী বাংলাদেশ ও ভারতের বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক, সাপ্তাহিক ও সাহিত্য সাময়িকীতে নিয়মিত কবিতা লিখেছেন। তিনি ছিলেন দুই বাংলার সু-পরিচিত কবি। প্রেমের কবি হিসেবেও তাঁর ছিল সুখ্যাতি। এ যাবত কবিতা ও উপন্যাস মিলে তাঁর ৪০টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের নির্বাচিত কবিদের নিয়ে বেশ কিছু যৌথগ্রন্থেও তাঁর লেখা রয়েছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে ওমর আলীর শ্রেষ্ঠ কবিতা। প্রতিভার স্বীকৃতি স্বরূপ তিনি অর্জন করেছেন বাংলা একাডেমি পদক, বন্দে আলী মিয়া পদক, আলাওল পদক, আবুল মনসুর আহমেদ পদক, রাজশাহী বিভাগীয় গুণীজন সম্মাননা পদক প্রভৃতি।
কাব্য সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৮১ সালে ‘এ দেশে শ্যামল রং রমণীর সুনাম শুনেছি’ কাব্যগ্রন্থের জন্য তিনি লাভ করেন বাংলা একাডেমির পুরস্কার। এ ছাড়া তিনি বাংলা একাডেমির ফেলো সদস্য।
পঞ্চাশ দশকের অন্যতম এ কবি চিরায়িত বাংলার অপূর্ব সৌন্দর্য আর মানুষের সুখ-দুঃখ নিয়ে অবিরত লিখে গেছেন। সাহিত্যিক জীবনে কবি আল মাহমুদ, কবি শামসুর রাহমান, কবি হাসান হাফিজসহ সমসাময়িক অনেক লেখক ও কবি তাঁর একান্ত বন্ধু। অসুস্থ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি সাহিত্য সাধনা করেছেন।