চিত্রাঙ্কনে ফুটে উঠল মহান মুক্তিযুদ্ধ, বিজয় দিবস
ক্যানভাসে মহান মুক্তিযুদ্ধের চিত্রই যেন ফুটে উঠল। অস্ত্র হাতে বীরযোদ্ধাদের শত্রুমুক্ত করার অদম্য ইচ্ছাশক্তিরও বহিঃপ্রকাশ ঘটল রংতুলিতে সাদা ক্যানভাসে। নারী-পুরুষ সবাই মিলে শত্রু বিতাড়নে গেরিলা যুদ্ধে নেমে ছোট-বড় বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে ১৬ ডিসেম্বরের প্রথম প্রহরে পৌঁছে চূড়ান্ত বিজয় পতাকা ওড়ানোর অপেক্ষার সেই চিত্রই ধারণ করে রাখল সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব। আর এতে অংশ নিলেন শিল্পী, জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, শিক্ষক, সাহিত্যিক, কবি, শিশু, কিশোর সবাই।
মহান বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব মঙ্গলবার বিকেলে মুক্তিযুদ্ধের ক্যানভাস অঙ্কন কর্মসূচি আয়োজন করে।
মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাব এমন একটি বিরল কর্মসূচি হাতে নিয়ে নতুন প্রজন্মের সবাইকে আহ্বান জানাল মুক্তিযুদ্ধের স্বরূপ দেখতে। ভাষা, অনুভূতি আর অদম্য আগ্রহের পাশাপাশি কালি-কলম ও তুলির আঁচড়ে বাংলাদেশ বাঙালি আর গৌরবের মুক্তিযুদ্ধের কলাকৌশল তুলে ধরে অভ্যাগতরা বলেন, এ এক অভূতপূর্ব দৃশ্য। সাতক্ষীরা যেন নতুন সাজে নতুন বেশে ৪৪ বছর আগের মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলোতে ফিরে গেছে।
লাল সবুজের বাংলাদেশের স্বরূপ আঁকতে গিয়ে প্রধান অতিথি সাতক্ষীরা সদর আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর মোস্তাক আহমেদ রবি বলেন, ‘আমাদের নতুন প্রজন্মকে বারবার দেশপ্রেমের শিক্ষা দিতে হবে। দেশমাতৃকার স্বাধীনতা অর্জনে এ দেশের নারী-পুরুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করতেও কুণ্ঠাবোধ করেনি। মুক্তিযুদ্ধ চিরঞ্জীব, বাংলাদেশ বাঙালি বাংলা ভাষা চিরঞ্জীব আর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও চিরঞ্জীব। এই শিক্ষা আমাদের সবার জন্যই।’
সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের কৃষ্ণচূড়া চত্বরে আয়োজিত চিত্রাঙ্কন অনুষ্ঠানে অতিথি তালা কলারোয়া আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মুস্তফা লুৎফুল্লাহ রংতুলির আঁচড় দিতে গিয়ে বলেন, ‘তোমার আমার ঠিকানা পদ্মা মেঘনা যমুনা। বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো বাংলাদেশ স্বাধীন করো।’ এই অনভূতি ধারণ করেই ক্যানভাসে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের কৌশল ফুটে উঠেছে। একাত্তরের ঘাতক পাক হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকারদের বিচার করে জাতি আজ কলঙ্কমুক্ত হওয়ার পথে এগিয়েছে।’
ক্যানভাসে রংতুলির টানে ছবি এঁকে সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, যারা দেশের স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল, যারা শত্রুদের পক্ষ নিয়ে বাঙালি জাতিকে দমন করে রাখতে চেয়েছিল, জাতি তাদের ক্ষমা করবে না। তিনি আজকের প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের গল্প শোনানোর আহ্বান জানিয়ে আরো বলেন, এই চিত্রকলার মধ্য দিয়ে বাঙালির চিন্তাচেতনা ফুটে উঠেছে। ক্যানভাসে চিত্র অঙ্কন শেষে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এ এফ এম এহতেশামুল হক বলেন, ‘মহান বিজয় দিবসের প্রাক্কালে এমন কর্মসূচি আমাদের চেতনাকে আরো শাণিত করল। একটি শোষণ ও দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে আমাদের কাজ করতে হবে। এর সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধই আমাদের প্রেরণার শক্তি।’
মঙ্গলবার বিকেলে অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবের সভাপতি আবুল কালাম আজাদের সভাপতিত্বে ক্যানভাসে মুক্তিযুদ্ধ অঙ্কন অনুষ্ঠানে আরো বক্তৃতা করেন প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক আবু আহমেদ, সুভাষ চৌধুরী, কল্যাণ ব্যানার্জি প্রমুখ। প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম কামরুজ্জামানের সঞ্চালনায় প্রাণবন্ত এই অনুষ্ঠানে অংশ নেন বিপুলসংখ্যক সংবাদকর্মী ছাড়াও সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।
দ্বিতীয় পর্বের অনুষ্ঠানে ক্যানভাসে গেরিলাদের মুক্তিযুদ্ধ এঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘আমরা মুক্তিযুদ্ধে বাংলার মুখ দেখি। শিল্পকলার মধ্য দিয়ে বাংলার চিত্র বারবার তুলে ধরে আমরা প্রমাণ করতে চাই আমরা এ দেশের মানুষ। এই মাটি শিল্পী-সাহিত্যিকের, এই মাটি বাঙালির। এই মাটিতে আমার জন্ম এই মাটিতেই আমার মৃত্যু। এই মাটিকে আমি ভালোবাসি। হানাদার ও তাদের দোসরদের জন্য এই মাটি নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আমাদের ক্যানভাসে, অঙ্কনে, কাব্যে, সাহিত্যে আমাদের চেতনায়, ভালোবাসায় বাংলাদেশকে ফুটিয়ে তুলতে হবে।’ সাতক্ষীরা তার পুরোনো ঐতিহ্য পুনরুদ্ধার করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, সাতক্ষীরার মানুষ এখন ঘুরে দাঁড়িয়েছে। সংসদ সদস্য মুস্তফা লুৎফুল্লাহর দেওয়া প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে আগামী জানুয়ারিতে সাতক্ষীরায় কারু শিল্পকলাবিষয়ক একটি কর্মশালার অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে অধ্যাপক নিসার হোসেন বলেন, ‘এর মধ্য দিয়ে আমাদের চেতনাকে প্রকাশ হবে।’ অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ঢাবির চারুকলা অনুষদের সহকারী অধ্যাপক দুলাল গাইন। তিনি লাল সবুজের তুলির আঁচড় দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কৌশল ও চেতনা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে মনের মাধুরী মিশিয়ে মুক্তিযুদ্ধের ক্যানভাস আঁকলেন শিশু-শিক্ষক-সাংবাদিক-সাহিত্যিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ।
এতে আরো অংশ নেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ লিয়াকত পারভেজ, তালা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ঘোষ সনদ কুমার ছাড়াও সাংবাদিক, ছাত্র ও শিশু-কিশোররা।