কলারোয়ায় নির্বাচন নিয়ে বাড়তি কৌতূহল
অনিয়মের অভিযোগে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করার ঘটনায় সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌরসভা নির্বাচন নিয়ে ভোটারদের মধ্যে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন ও কৌতূহলের।
গত রোববার কলারোয়ার রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. আবুল হোসেনকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কমিশনের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব সাবেদ উর রহমান এক আদেশে উল্লেখ করেন, ‘রিটার্নিং অফিসার আবুল হোসেন ক্ষমতার অপব্যবহার করে অসদুদ্দেশ্যে আইনবহির্ভূতভাবে আওয়ামী লীগদলীয় মেয়র প্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টুর মনোনয়নপত্র বৈধ হিসেবে গ্রহণ করেন। এতে তিনি সরকারি চাকরি বিধিমালা এবং নির্বাচনী শৃঙ্খলা ও আইন লঙ্ঘন করেছেন বিধায় তাঁকে রিটার্নিং অফিসারের পদ থেকে প্রত্যাহার এবং জেলা নির্বাচন অফিসার পদ থেকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হলো।’
মেয়র পদপ্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টু কলারোয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত ভাইস চেয়ারম্যান। বিধি অনুযায়ী মেয়র পদে নির্বাচন করতে চাইলে ভাইস চেয়ারম্যান পদে তাঁর ইস্তফা দেওয়ার কথা। তিনি যথাসময়ে ইস্তফা দিয়েছেন কি না, তা নিয়ে জটিলতার মুখে রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করা হলো।
নির্বাচন কমিশনের কাছে অভিযোগ আসে, ‘আমিনুল ইসলাম লাল্টু ভাইস চেয়ারম্যান পদ ধরে রেখেই ৩ ডিসেম্বর মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। যথাসময়ে ভাইস চেয়ারম্যান পদ ত্যাগ না করলেও রিটার্নিং অফিসার আবুল হোসেন ৫ ডিসেম্বর বাছাইকালে তাঁর মনোনয়নপত্র বৈধ বলে ঘোষণা করেন।’
এ অনিয়মের কারণেই রিটার্নিং অফিসারকে ২০ ডিসেম্বর বরখাস্ত করা হয়েছে বলে কমিশন তাঁর আদেশে উল্লেখ করেছে। আবুল হোসেন ২০ ডিসেম্বর খুলনা আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয় অফিসে অতিরিক্ত আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসার হিসেবে যোগ দেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল হোসেন এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি বিধি অনুযায়ী যা করার তা-ই করেছি। উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান পদ থেকে মেয়র পদপ্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টুর ইস্তফা দেওয়ার নিয়ম জেলা প্রশাসকের কাছে, আমার কাছে নয়। সে-সংক্রান্ত কাগজপত্র রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে পাঠিয়ে দেওয়ার দায়িত্বও জেলা প্রশাসনের।’
আমিনুল ইসলাম লাল্টুর মনোনয়নপত্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব কাগজ পাওয়ায় ৫ ডিসেম্বর তা বৈধ বলে ঘোষিত হয় বলে জানান আবুল হোসেন।
এ ব্যাপারে মেয়র পদপ্রার্থী আমিনুল ইসলাম লাল্টু কাগজপত্র দেখিয়ে এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি ৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের কাছে ভাইস চেয়ারম্যানের পদ ত্যাগ করে দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটে কলারোয়ার রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কাগজপত্রসহ মনোনয়নপত্র জমা দিই। আমি নিজে কোনো অনিয়ম করিনি। রিটার্নিং কর্মকর্তাও বিধি অনুযায়ী মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করেছেন।’
আমিনুল ইসলাম লাল্টু আরো বলেন, ‘এ ব্যাপারে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে একটি মহল আমাকে নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রাখতে চায়। তাদেরই দেওয়া ভুল তথ্যে নির্বাচন কমিশন রিটার্নিং কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করছেন।’
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক নাজমুল আহসান তাঁর কার্যালয় সহকারীর বরাত দিয়ে জানান, আমিনুল ইসলাম লাল্টু ভাইস চেয়ারম্যান পদে ইস্তফার কাগজপত্র জমা দেন ৩ ডিসেম্বর জেলা প্রশাসকের বাংলোতে এসে। অথচ জেলা প্রশাসকের কার্যালয় খোলা ছিল বিকেল ৫টা পর্যন্ত। এরপর দুদিন সাপ্তাহিক ছুটি থাকায় জেলা প্রশাসক ৬ ডিসেম্বর সব কাগজ বিভাগীয় কমিশনারের কাছে পাঠান। জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে কপি না পাঠালেও কলারোয়ার ইউএনওর কাছে ভাইস চেয়ারম্যানের পদত্যাগের কপি দিয়েছেন।
এ ঘটনা নির্বাচনে কোনো প্রভাব ফেলবে কি না জানতে চাইলে জেলা প্রশাসক কোনো মন্তব্য করতে চাননি।
এ নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কাউন্সিলর বলেন, ‘মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণায় রিটার্নিং কর্মকর্তা অনিয়ম করে থাকলে তার দায়-দায়িত্ব তো শুধু সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার নয়, প্রার্থীরও। এখন সেই প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল ঘোষণা করা উচিত।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘এমন অবস্থায় নির্বাচন করলে তাঁর যথার্থতা নিয়ে প্রশ্ন উঠবেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নির্বাচনে এক প্রার্থী বলেন, ‘ভাইস চেয়ারম্যান পদে লাল্টুর ইস্তফাপত্র সম্পর্কে জেলা প্রশাসক রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত না করায় তিনিও এর দায়িত্ব এড়াতে পারেন না।’