পঞ্চগড়ে এবার মন্দিরে হামলা, ভাঙচুর
পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে মঠের অধ্যক্ষকে হত্যার দুই দিনের মাথায় আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের মোলানী এলাকায় শ্রীশ্রী হরি মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। দুর্বৃত্তরা মন্দিরের বাইরের একটি চূড়াসহ (গম্বুজের মতো) চারপাশের দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।
মন্দির কর্তৃপক্ষ ও স্থানীয়রা জানান, গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে এ ঘটনা ঘটে।
পুলিশের ধারণা, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই কেউ এ কাজ করে থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত কাউকে শনাক্ত ও আটক করা যায়নি। এ ঘটনায় হিন্দুদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। খবর পেয়ে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), বর্ডার গার্ড বাংলাদেশসহ (বিজিবি) আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, সকালে ওই মন্দিরের পূজারী সিরেন চন্দ্র রায় প্রতিদিনের মতো পূজা করতে এলে মন্দিরের ওপরের একটি চূড়া ভাঙা দেখতে পান এবং মন্দিরের চার পাশের দেওয়ালে আঘাতের চিহ্ন দেখতে পান। ইট সুরকির ভাঙা অংশ যেখানে সেখানে পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি বিষয়টি স্থানীয়দের জানান।
খবর পেয়ে পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্বীন মোহাম্মদ, আটোয়ারী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুর রহমান আবদার, সাবেক চেয়ারম্যান তৌহিদুল ইসলাম, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু রাফা মোহাম্মদ আরিফ, আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহ আলমসহ র্যাব, বিজিবি ও পুলিশের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে যান।
মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বিমল চন্দ্র জানান, সকালে তারা মন্দিরের ওই চূড়াটি টিনের ওপর ভাঙা অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। গভীর রাতে দুর্বৃত্তরা চূড়াসহ দেয়াল ভাঙচুর করে।
মোলানী শ্রীশ্রী হরি মন্দিরের সভাপতি হিরেন্দ্র নাথ রায় জানান, মন্দিরে হামলার বিষয়টি তাৎক্ষণিকভাবে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। মন্দিরে হামলা ও ভাঙচুরকারীদের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের দাবি জানান তিনি।
আটোয়ারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহ আলম জানান, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি করতেই দুর্বৃত্তরা এমন কাজ করেছে। ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। কিছু তথ্য পেয়েছি। দেবীগঞ্জে পুরোহিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার জন্য কোনো অপচেষ্টা এতে আছে কি না তাও খতিয়ে দেখছি। আশা করছি, খুব দ্রুত এই রহস্য উদঘাটন করে মূল হোতাদের গ্রেপ্তার করতে পারব।
আজ সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, বর্তমানে মন্দির এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা অবিলম্বে এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।
মন্দির সংশ্লিষ্টরা জানান, শ্রীশ্রী হরি মন্দিরটি ১০ থেকে ১২ ফুট চওড়া, ওই মন্দিরের ছাদের মাঝখানে একটি বড় চূড়া রয়েছে। চারটি কোণে চারটি চূড়া। চূড়ার উচ্চতা ২ থেকে ৩ ফুট এবং ১ ফুট চওড়া। সামনের দিকের ছোট চূড়াটি ভেঙে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
শ্রীশ্রী হরি মন্দিরটি ১৯৬১ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ওই মন্দিরের ভেতরে রাধাকৃষ্ণের দুটি প্রতিমা রয়েছে।