‘নালিতাবাড়ীর ১২টি ইউনিয়নই ঝুঁকিপূর্ণ’
প্রথম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে আগামী ২২ মার্চ শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। জেলা নির্বাচন কার্যালয় থেকে বলা হয়েছে, ওই ১২টি ইউনিয়নের সবগুলোই ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে আটটিকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ধরা হচ্ছে।
প্রতিদিনই এই ইউনিয়নগুলোতে চলছে সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ, নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র ভাঙচুরসহ নানা ঘটনা।
সংঘাতপূর্ণ এই আটটি ইউনিয়ন হচ্ছে, রামচন্দ্রকুড়া, বাঘবেড়, পোড়াগাঁও, নন্নী, রাজনগর, কলসপাড়, কাকরকান্দি ও নয়াবিল। আর এই সংঘাতপূর্ণ আটটি ইউনিয়নেই মূলত সংঘাত সংষর্ঘ হচ্ছে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে।
গতকাল শুক্রবার রামচন্দ্রকুড়া ইউনিয়নের বৈশাখী বাজারে আওয়ামী লীগের প্রার্থী, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান চেয়ারম্যান আমানুল্লাহ বাদশা ও বিদ্রোহী প্রার্থী ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সদস্য খোরশেদ আলম খোকার সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এর আগেও এই ইউনিয়নে উভয়পক্ষই অপরপক্ষের প্রতি অভিযোগ করে তাঁদের নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্র ভাঙ্গার।
গত বৃহস্পতিবার রাতে নন্নী ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিল্লাল চৌধুরীকে ধাওয়া দেয় একই দলের বিদ্রোহী প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আব্দুল হাই আজাদের লোকজন। এই ইউনিয়নটিতে বিএনপি ও আওয়ামী লীগ উভয় দলেরই বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছেন। এখানে আওয়ামী লীগের রয়েছে দুই বিদ্রোহী প্রার্থী এবং বিএনপির একজন।
নন্নী ইউনিয়নে বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন আবদুল রশিদ সরকার আর বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন নালিতাবাড়ীর বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মোখলেছুর রহমান রিপনের ভাই মাহাবুবুর রহমান রিপন। তবে ইউনিয়নটিতে সংঘাত সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে মূলত আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীদের মধ্যেই।
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাঘবেড় ইউনিয়নের আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হাসানুজ্জামান রিয়াদ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান চেয়ারম্যান আবদুল সবুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন। অভিযোগে তিনি জানান, চেয়ারম্যান সবুর তাঁর (রিয়াদ) প্রচারে বাধা দিচ্ছেন এবং সমর্থকদের মারধর করছেন।
অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ আছে পোড়াগাঁও ইউনিয়নেও। এখানে অভিযোগের ধরণটা একটু ভিন্ন। এখানে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দুই দলের প্রার্থীরই অভিযোগ আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে।
এই ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেয়েছেন বন্দনা চাম্বুগং। আর বিএনপির প্রার্থী হচ্ছেন ওমর ফারুক। বিএনপি প্রার্থী অভিযোগ করেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান আজাদ মিয়ার বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, ‘তার নির্বাচনী প্রচার কাজে বাধা দিচ্ছে বর্তমান চেয়ারম্যান আজাদ মিয়া এবং তাঁর নির্বাচনী প্রচার কেন্দ্রও ভাঙ্গা হয়েছে।’
এমনি অভিযোগ রয়েছে রাজনগর, কাকরকান্দি ও কলসপাড় ইউনিয়নেও। এসব সংঘাতপূর্ণ ইউনিয়নে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় হিমশিম খেতে হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে অস্থির হয়ে উঠেছে স্থানীয় থানা পুলিশ ও নির্বাচনী কর্মকর্তারা।
নালিতাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফসিহুর রহমান এনটিভিকে বলেন, ‘প্রতিদিন অভিযোগ পাল্টা অভিযোগে আমরা অস্থির হয়ে পড়েছি। ১২টি ইউনিয়নের এসব সমস্যা নিয়ে পুলিশকে সাধ্যের বাইরেও কাজ করতে হচ্ছে।’ তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষ করে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে প্রায়ই উত্তেজনার সৃষ্টি হচ্ছে। যা থেকে হাতাহাতির মতো ঘটনা ঘটছে। আমরা খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠাচ্ছি।’
এ ব্যাপারে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোখলেছুর রহমান এনটিভিকে বলেন, ‘আমরা উপজেলার ১২ ইউনিয়নকেই ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে গণ্য করছি। আমরা ১২টি ইউনিয়নের ১১১টি নির্বাচনী কেন্দ্রেই যাতে সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন সম্পন্ন হয় তার চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ সংঘাত সংঘর্ষের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘প্রতিটি ইউনিয়ন থেকেই অভিযোগ পাচ্ছি। লিখিত হোক আর মৌখিক হোক অভিযোগ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আমরা পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।’